ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কে হতে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের নতুন নগর পিতা

প্রকাশিত: ২৩:১০, ২২ জানুয়ারি ২০২১

কে হতে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের নতুন নগর পিতা

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ কে হতে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের নতুন নগর পিতা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত দুই প্রার্থীর মধ্যেই বরাবরের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমাবদ্ধ থাকছে এবারও। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনের আর মাত্র পাঁচদিন বাকি। আগামী ২৭ জানুয়ারি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ নগরীর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। নির্বাচনকেন্দ্রিক সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পথে। ইতোমধ্যে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া বড় কোন অঘটন ঘটেনি নির্বাচনী প্রচারের মাঠে। এদিকে ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, মেয়র হিসেবে এ কর্পোরেশনকে এ পর্যন্ত চারবার শাসন করেছে আওয়ামী লীগ, দুবার বিএনপি এবং একবার জাতীয় পার্টি। এরমধ্যে মনোনীত হিসেবে একবার জাতীয় পার্টি এবং একবার বিএনপি। আর নির্বাচিত হয়ে শাসন করেছে চারবার আওয়ামী লীগ ও একবার বিএনপি। এ নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে প্রশাসক হিসেবে একজন দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ নির্বাচন ষষ্ঠ। অতীতে পৌরসভা থেকে পৌর কর্পোরেশন হয়ে এখন সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরিত। করোনা পরিস্থিতিজনিত কারণে নির্ধারিত সময় পিছিয়ে আগামী ২৭ জানুয়ারি এ নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে চট্টগ্রামবাসী। স্বাভাবিকভাবে এবার কে হচ্ছেন এ কর্পোরেশনের মেয়র তথা নগর পিতা-এ নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। বরাবরের মতোই আলোচনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেনকে নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনার ডাল বিস্তৃত। এছাড়া এ পদে আরও যে পাঁচ প্রার্থী রয়েছেন তারা নামে আছে, আলোচনায় নেই। তাদের প্রচারও চলছে ঢিমেতালে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, জয়ী হওয়ার চেয়ে ওই পাঁচ প্রার্থী তাদের নাম প্রচারেই যেন তাদের মূল লক্ষ্য। তাই ভোটার মহলে আলোচিত হচ্ছে। এদিকে এ নির্বাচন কেমন হবে তা নিয়েও ভোটার মহলে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। নানা জনের নানা মন্তব্য রয়েছে। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন দিন দিন কঠোর মনোভাব নিয়ে যে এগিয়ে যাচ্ছে তা স্পষ্ট প্রতীয়মান। অতীতের মতো এবারও কিছু স্পর্শকাতর ওয়ার্ড ও এলাকায় নির্ণয় করা হয়েছে। পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া দেখতে আজ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা চট্টগ্রাম আসছেন। কাল তিনি নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়ের কর্মসূচী রয়েছে। ভোটের মাঠ এখন সরগরম। মেয়র পদে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী ও সঙ্গে ৪১ ওয়ার্ডের সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের প্রচারে সরব হয়ে আছে নগরী। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপির শাহাদাত হোসেন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেনি। আওয়ামী লীগের প্রচার মাধ্যম সূত্রে জানানো হয়েছে, কাল সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে রেজাউল করিম তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবেন। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী ইশতেহার দেখে বিএনপি প্রার্থী তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করার পথ বেছে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের ইশতেহার উল্লেখযোগ্য একটি দিক। নির্বাচিত হলে কার কি প্রতিশ্রুতি সেটা ভোটারদের মাঝে আলোচনার একটি বিষয় হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত, স্থানীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলেও মেয়র পদে সরকারী ও বিরোধীদলের পক্ষে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। দলের প্রতীক ব্যবহারেরও অনুমতি রয়েছে। দলীয় প্রতীক নিয়ে এ কর্পোরেশনের এটাই প্রথম নির্বাচন। এ অবস্থায় মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই প্রার্থীই জয়লাভের আশাবাদ ব্যক্ত করে চলেছেন। বিএনপির মতে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হবেন। আর আওয়ামী লীগের দাবি রয়েছে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিমের বিজয় কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। তবে ৪১ ওয়ার্ডের সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের নিয়ে ভোটার মহলে ভিন্ন ভিন্ন প্রচার ও বক্তব্য রয়েছে। কেননা, অধিকাংশ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন বঞ্চিত অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন। যারা নিজেদের স্বতন্ত্র হিসেবে দাবি করছেন। তবে দলের পক্ষে এদের বিদ্রোহী আখ্যা দেয়া হয়েছে। এদের প্রতীক ভিন্ন ভিন্ন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে অনানুষ্ঠানিক এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল হানিফ সাংবাদিকদের বলেছেন, দলের পক্ষে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আর ৪১ ওয়ার্ডে সাধারণ ও নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থন দেয়া হয়েছে। সে হিসেবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর সংখ্যা ৫৫ জন। এছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, যারা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং ভবিষ্যতে তাদের দলে রাখা হবে না। এবারের চসিক নির্বাচনে মোট ভোটার ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এরমধ্যে নারী ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ এবং পুরুষ ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচনের দিন ৯ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে। সঙ্গে থাকবে আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা। মোট ৭৩৫ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৪১৫ কেন্দ্রে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এদিকে এ পর্যন্ত প্রাণহানীর একটি ঘটনা ছাড়া সহিংসতার কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে ভোটার মহলে শঙ্কা ছড়ালেও এখনও পরিবেশ পরিস্থিতি প্রশাসনের অনুকূলেই রয়েছে। এদিকে নির্বাচন কমিশন শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে যাবতীয় তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ভোটার মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে এ নির্বাচন নিয়ে। সবকিছুর অবসান ঘটবে ২৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে।
×