ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে গৃহ প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন কাল

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ২২ জানুয়ারি ২০২১

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে গৃহ প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন কাল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেছেন, যে বাংলাদেশ ১৩৪ ডলার মাথাপিছু আয় নিয়ে ১৯৭১ সালে যাত্রা শুরু করেছিল, সেই বাংলাদেশের সরকারপ্রধান আজকে পৃথিবীর বুকে দাঁড়িয়ে বলছেন, আমি আমার দেশের কোন মানুষকে গৃহহীন-ভূমিহীন থাকতে দেব না। পৃথিবীতে এ রকম ঘটনার আর কোন নজির আছে বলে আমার জানা নেই। এটি মুজিববর্ষে একটি অসাধারণ ঘটনা, অহঙ্কারের ঘটনা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে এই ঘটনা আমাদের নতুন অহঙ্কারের জায়গা তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দ্বিতীয় তলার সভা কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখ্য সচিব এ কথা বলেন। ব্রিফিংকালে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী ভূমিহীন-গৃহহীনদের জায়গাসহ যে বাড়িগুলো দেয়া হচ্ছে, সেগুলো স্বামী স্ত্রী’র নামে রেজিস্ট্রি হবে এবং দলিলে দুজনের নাম এবং ছবি থাকছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে দলিল রেজিস্ট্রি করে দেয়া হচ্ছে। মুজিববর্ষে ‘বাংলাদেশের একজন মানুষ গৃহহীন থাকবে না’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদানের চলমান কার্যক্রম নিয়ে মুখ্য সচিব বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। আগামীকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী গণভবন ভিডিও কনফারেন্সিং’র মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে প্রথম দফায় জমিসহ গৃহ প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, আশ্রয়ণ প্রকল্পের-২ প্রকল্প পরিচালক মাহবুর হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন, সহকারী প্রেস সচিব ইমরুল কায়েস রানা, আশরাফ সিদ্দিকী বিটুসহ অন্য কর্মকর্তারা। উল্লেখ্য, মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্য প্রথম পর্যায়ে ৬৬ হাজার ১৮৯ পরিবারের জন্য একক গৃহ নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। অধিকাংশ গৃহ নির্মাণের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই আরও ১ লাখ গৃহের বরাদ্দ প্রদান করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে পর্যায়ক্রমে দেশের সব ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহ প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ব্রিফিংকালে মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ করেছেন জাতির পিতা। সংগ্রাম করা শিখিয়েছেন জাতির পিতা। স্বাধীনতা এসেছে তাঁর নেতৃত্বে। স্বাধীনতার পর পরেই জাতির পিতা কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ দুর্দশা লাঘবের জন্য একটা কাজ করেছেন, সেটি হচ্ছে যারা ভূমিহীন গৃহহীন আছে, তাদের আশ্রয় দেয়ার একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালে যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন তখন ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি একটি প্রকল্প চালু করেছিলেন, যার নাম দিয়েছিলেন আশ্রয়ণ প্রকল্প। আশ্রয়ণের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের গৃহহীন ভূমিহীন মানুষকে মাথায় ছাদ দেয়া এবং ইতোমধ্যে ১৯৯৭-২০ পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার ৫৮টি ভূমিহীন-গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে কোভিড মহামারীর মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি নতুন ঘোষণা দিয়েছেন যে, মুজিববর্ষে কোন মানুষ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না। তার জন্য নতুনভাবে আলাদাভাবে একটি কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন এবং আগামী পরশুদিন (শনিবার) প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে গৃহ পাবেন ৬৬ হাজার ১৮৯ পরিবার। এতে ব্যয় হচ্ছে এক হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত এই কর্মসূচীর নতুন মাত্রা তুলে ধরে মুখ্য সচিব আরও বলেন, এতে বেশ কিছু নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। মাত্র ছয় মাসের কম সময়ে এটি বাস্তবায়িত হয়েছে। এতে আমরা পুনর্বাসন করছি, সাধারণ মানুষ যাদের মাথায় ছাদ ছিল না, গৃহহীন ছিল এবং ভূমিহীন ছিল। কর্মসূচীর বিশেষত্ব তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, বিভিন্নভাবে অব্যবহৃত ২ হাজার ৫৮ একর সরকারী খাস জমি জনকল্যাণে ব্যবহারিত হচ্ছে এবং এর মধ্যে কিন্তু বেশ কিছু অবৈধ দখলদার ছিল সেটাকেও উচ্ছেদ করা হয়েছে। দুটো উপকার এখানে হয়েছে। দখলদার মুক্ত করা হয়েছে এবং জনকল্যাণে সরকারী জমি ব্যবহারিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে আমরা মনে করি এটি একটি সামাজিক আন্দোলন হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমাদের সচিবদের তরফ থেকে দুইটি করে গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা প্রায় ৬ হাজার ৫৭০ আরও প্রতিশ্রুতি পেয়েছি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বলেও জানান তিনি। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য দেয়া এসব বাড়িতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার আওতায় থাকবে জানিয়ে মুখ্য সচিব বলেন, এটি মুজিববর্ষে একটি অসাধারণ ঘটনা। গুগল আপনাদের সবার পকেটেই আছে, দেখতে পাবেন পৃথিবীতে এই নজির আর নেই যে, সরকারী উদ্যোগে এইভাবে ছিন্নমূল মানুষকে পুনর্বাসন করা। মুখ্য সচিব বলেন, সারাদেশে ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা হচ্ছে তিন লাখের কিছু কম এবং জমি আছে ঘর নাই এ রকম আছে প্রায় ৬ লাখের কিছু কম। আমাদের প্রায় ৯ লাখের মতো এই রকম পরিবার আছে। আমরা আশা করছি, এই যে ৬৬ হাজার পরিবারকে দেয়া শুরু হয়েছে এবং এই পরবর্তীতে রয়েছে প্রায় লক্ষাধিক পরিবার বরাদ্দ পাবে। আগামী এক মাসে দেয়া হচ্ছে আরও এক লাখ ঘর। এটা যদি এভাবে সম্প্রসারিত হয় তাহলে আশা করছি, আগামী দু’বছরে মধ্যে এটি আমরা সম্পন্ন করতে পারব। এর সঙ্গে যদি স্থানীয় মানুষ যারা ধর্ণাঢ্য ব্যক্তি আছেন, তারা যদি এগিয়ে আসেন তাহলে কিন্তু আরও অল্প সময়ের ভিতরে করতে পারব। ১০ লাখ মানুষ যদি বাড়ি পায়, ছাদ পায়, সুপেয় পানি পায়, বিদ্যুত পায়- তাহলে বাংলাদেশের দারিদ্র্যসীমার নিচে কত মানুষ চলে যাবে, এটা আপনাদের কল্পনারও বাইরে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বামী-স্ত্রী দুজনের নামে দলিল রেজিস্ট্রি ॥ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ঘরের নক্সা এবং ডিজাইন প্রধানমন্ত্রী নিজের চিন্তা থেকেই করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রতিটি ঘরে দুটি শয়ন কক্ষ থাকবে, একটা টয়লেট থাকবে, একটা রান্নাঘর থাকবে এবং লম্বা বারান্দা থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই বাড়িগুলোতে আমরা বিদ্যুত ও পানির ব্যবস্থাটাও আমরা করছি। পৃথিবীর ইতিহাসে এই একটি ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে যে, একদিনে ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবার ঘর পাচ্ছে এবং জমি পাচ্ছে। তিনি বলেন, অবৈধ দখলে থাকা জমি, খাস জমি, এগুলো সব উদ্ধার করে প্রতিটি পরিবারকে দুই শতক করে জমি দেয়া হচ্ছে। শুধু ঘর বা জমিই দেয়া হচ্ছে না, এর সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে দলিল রেজিস্ট্রি করে দেয়া হচ্ছে। প্রত্যেককে একেকটা খতিয়ানের কপি দেয়া হচ্ছে, তাকে মিউটেশন করে দেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে একটা সনদ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এটা শুধু ঘরেই না, এটার সঙ্গে আমাদের যে সাসটেইনবেল ডেভেলপমেন্ট গোলসের অনেকগুলো লক্ষ্য কিন্তু এই ঘরের মাধ্যমে অর্জন করতে পারব। যদিও ঘরের দাম ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা, কিন্তু জমি ঘর এগুলোর মূল্য ধরা হয়, তাহলে দেখা যাবে হয়ত এক একটা ঘর হয়ত ১০ লাখ টাকা বেশি সম্পদ ওখানে আছে এবং প্রত্যেকটা ঘর কিন্তু স্বামী এবং স্ত্রী দুজনের নামে রেজিস্ট্র হচ্ছে, একক না। প্রধানমন্ত্রী আপনাদের নির্দেশ দিয়েছেন স্বামী স্ত্রী’র নামে রেজিস্ট্রি হবে এবং দলিলে দুজনের নাম এবং ছবি থাকছে।
×