ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাঁধনের ছুটে চলা...

প্রকাশিত: ০১:৪০, ২১ জানুয়ারি ২০২১

বাঁধনের ছুটে চলা...

নিজ অভিনয় দক্ষতায় যে ক’জন অভিনেত্রী দর্শকের সামনে নিজেকে জনপ্রিয় করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন তাদের মধ্যে আজমেরী হক বাঁধন অন্যতম। প্রয়াত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের প্রতি ভাললাগা থেকে লাক্সে নাম লেখান, তার পরের গল্প হয়ত অনেকেরই জানা! নাটকে তার অভিষেক হুমায়ূন আহমেদের ‘বুয়া বিলাস’ নাটকের মধ্য দিয়ে। এরপর অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে একজন পরিপূর্ণ শিল্পী হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। তবে বর্তমানে এ অভিনেত্রী নাটক থেকে ছুটি নিয়েছেন। দীর্ঘ চার বছর ধরে নাটক থেকে দূরে আছেন। ভাল গল্পের ক্ষুধা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন এ লাক্স তারকা। সম্প্রতি বাঁধনের যাপিতজীবন নিয়ে কথা হয় আনন্দকণ্ঠের সঙ্গে। শুরুতে নতুন বছরের প্রত্যাশা ও পরিকল্পনা জানিয়ে বাঁধন বলেন, বিগত বছর মানুষের মনে বিভিন্ন রকমের অনুভূতির জন্ম দিয়েছে। গেল বছর থেকেই চিন্তার পরিবর্তন এনেছি। জীবনটা যেভাবে দেখেছি, দেখে বড় হয়েছি সেই ভাবনাগুলো থেকে নতুন বছর নতুন কর্মপরিকল্পনা করেছি। বর্তমানকেই বেশি সময় দিতে চাই। উপলব্ধি হয়েছে যে, আমরা বর্তমানটা একদম ভুলে যাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করি। করোনার পুরো সময়টা আমাকে এটাই উপলব্ধি করিয়েছে যে, বর্তমান অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান নিয়েই ভাবতে হবে। এটা নিয়ে ভাবলে ভবিষ্যত অনেক সুন্দর হবে। সে ক্ষেত্রে নতুন বছর চাই বর্তমানকে সময় দিতে। চাই একজন ভাল মানুষ হতে। সে প্রক্রিয়া শুরু করেছি গত তিন বছর ধরে। সেটি আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে। নতুন বছরের প্রত্যাশা বেঁচে থাকাটাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষতি না করে মানুষের সহযোগিতা করতে চাই। জীবনটাকে নিজের মতো করে যাপন করতে চাই। সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। নিজের জীবন অন্যর মতো করে আর নয় যাপন। চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই। আমার অধিকার যেন আমি বুঝে পাই। মেয়ের ক্ষেত্রেও একই প্রত্যাশা। ওর জন্য পূর্ণ স্বাধীনতার সুযোগ থাকবে। ও একজন ভাল মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠুকÑসেটিই আমার চাওয়া। সম্প্রতি বাঁধন ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ নামের একটি ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেছেন। এর পরিচালক সৃজিত মুখার্জী। ওয়েব সিরিজের কেন্দ্রীয় মুশকান জুবেরী চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। চরিত্রটি নিয়ে বলেন, বাংলাদেশের লেখক নাজিম উদ্দিন এ চরিত্রটি জন্ম দিয়েছেন। তার আবিষ্কারে মুগ্ধ। তার সৃষ্টি অসাধারণ। স্বাধীনতাচেতা, আত্মবিশ্বাসী একটি চরিত্র। আমি মুশকানের প্রেমে পড়েছি। এ চরিত্র ধারণ করার সুযোগ পাওয়া আমার জন্য অনেক বড় কিছু। যেমন সুযোগ তেমন চ্যালেঞ্জেরও। শতভাগ দিয়ে চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছি। চরিত্রটির জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। আশা নয় বিশ্বাস এটি দর্শক পছন্দ করবে। নতুন এক বাঁধনকে দেখতে পাবে। দুই বাংলার কাজের পার্থক্য? তেমন পার্থক্য দেখেনি। একটি পার্থক্য মনে হয়েছে টেকনিক্যাল সাপোর্ট কলকাতায় বেশি আমাদের দেশে একটু কম। বাজেটের ব্যাপারে তারা এগিয়ে। আমাদের দেশেও অনেক গুণী নির্মাতা আছে তাদের ভাবনায় আমি মুগ্ধ। এরই মধ্যে ভাল তিনটি কাজের অডিশন দিয়েছেন তিনি। আশাবাদী বাঁধন একটি কাজ হলেও তার ভাগ্যে সহায় হবে। কাজগুলো তার ভীষণ পছন্দের। যদি ব্যাটে বলে মিলে তাহলে চলতি বছর আরও একটি চলচ্চিত্রে পাওয়া যাবে তাকে। গল্পভিত্তিক ও নারীপ্রধান গল্পে বেশ আগ্রহ বাঁধনের। ভাল কাজের আশায় চার বছর ধরে নাটকে নেই তিনি। অপেক্ষায় ছিলেন তবে বাঁধনের অপেক্ষার অবসান হয়েছে। ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ ও আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের সিনেমাটি তার মনের মতো কাজ। তবে বিভিন্ন কারণে সাদের সিনেমার নামটি এখনই জানাতে চান না সংশ্লিষ্টরা। গত চার বছরে একটি সিনেমা ও ওয়েব সিরিজ করতে পেরেছি তাতেই খুশি। আমার বেশি চাহিদা নেই। যা পেয়েছি তাতে আল্লার কাছে শুকরিয়া করি। যে রকম আছি অনেক ভাল আছি। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি বছর ছবিটি মুক্তি পাবে। স্ব^প্নের চরিত্রের দেখা পেয়েছেন? সাদের যে সিনেমা করেছি সেটি স্বপ্নের কিনা জানি না তবে চরিত্রটি আমার জীবনকে একেবারে পরিবর্তন করে দিয়েছে। জানি না আমার জীবনে আর কোন কাজ এ রকম প্রভাহিত করতে পারবে কিনা। তবে এই কাজটি করে তৃপ্তি পেয়েছি। কাজটি করার পর ভাল কাজের প্রতি আগ্রহ আরও বাড়িয়েছে। সাদের কাজ করার পর ভাল ভাল কাজের প্রস্তাব পাচ্ছি। এই ধারায় সৃজিতের সঙ্গে কাজ করা। কাজটি ভাল করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। দর্শকের ভাল লাগলেই পরিশ্রম সার্থক। যোগ করে এই অভিনেত্রী আরও বলেন, চলার পথে অপ্রত্যাশিত কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে যেগুলো কখনও প্রত্যাশা করেনি। তবে অভিজ্ঞতা মানুষকে আরও শক্তিশালী করে। কাজের ব্যাপারে সব সময় সিরিয়াস ছিলাম। বাঁধন কাজের বাইরে নারীর অধিকার, নারীর সঙ্গে সকল অন্যায়-অবিচার, নারীর ক্ষমতায়ন নিয়েও বেশ সরব। আগামী দিনেও নিজেকে সরব রাখতে চান। বরাবরই বাঁধন কাদা ছোড়াছুড়ি থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন। একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন।
×