ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অসুস্থ বৃদ্ধাকে নৃশংস নির্যাতন করে সর্বস্ব লুটে নিল গৃহকর্মী

প্রকাশিত: ০১:৩২, ২১ জানুয়ারি ২০২১

অসুস্থ বৃদ্ধাকে নৃশংস নির্যাতন করে সর্বস্ব লুটে নিল গৃহকর্মী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বস্ত কাজের মেয়ে হঠাৎ এতটা ভয়ঙ্কর হয়ে- নৃশংসতার পরিচয় দেবে এমনটি ছিল কল্পনাতীত। মালিবাগের ফাঁকা বাসায় একা পেয়ে সত্তরোর্ধ এক বৃদ্ধাকে নির্যাতন করে বাসার সর্বস্ব লুটে নিয়েছে গৃহকর্মী। ওই বাসার সিসিটিভির ফুটেজে তার লোমহর্ষক দৃশ্য ধারণের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও পুলিশ তাকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। হতভাগী ওই নারী বিলকিস বেগম এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। রেখা নামের ত্রিশোর্ধ ওই গৃহকর্মী এখনও পলাতক। যদিও শাহজাহানপুর থানার পুলিশ বলছে- খোয়া যাওয়া মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। যে কোন সময় রেখাকে আটক করা সম্ভব হবে। বিলকিসের মেয়ে মেহবুবা বলেন, এটা সহ্য করার মতো নয়। মাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাসা ফাঁকা রেখে ভাইয়েরা ঢাকার বাইরে যাওয়ায় গৃহকর্মী এমন সুযোগ পেয়েছে। ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার শাহজাহানপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গত সোমবার ওই বাসায় একাকী বিলকিস বেগমকে রেখে অফিসে যান তার মেয়ে মেহবুবা জাহান। বৃদ্ধা মায়ের সেবায় নিয়োজিত ছিল গৃহকর্মী রেখা। সে এ বাসায় বিশ্বস্ত হিসেবেই এতদিন কাজ করে আসছিল। বছর তিনেক ধরে কিডনির সমস্যাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভোগা বিলকিস দীর্ঘদিন ধরেই শয্যাশায়ী। বাসাটিতে স্বামী মৃত্যুর পর দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে দুজনকে নিয়ে এতদিন নিরাপদেই বসবাস করে আসছিলেন বিলকিস বেগম। ইদানীং জুটে যায় রেখা। ওই বাসা থেকে উদ্ধারকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বাসায় বিলকিস আর রেখা। তিনি শুয়েছিলেন খাটে। গায়ে লেপ। পাশে পরম যতেœ তার সেবা করছেন রেখা। শুরুতে বুঝার উপায় নেই, একটু পরে কি ঘটতে যাচ্ছে। কিন্ত পরম মমতার পেছনে যে কত ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা লুকিয়ে ছিল তার বহির্প্রকাশ কিছুক্ষণ পরেই দেখা যায়। ভিডিও ফুটেজে কিছুক্ষণ পরই দেখা যায়, হঠাৎ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে রেখা। কোন ধরনের কথাবার্তা ছাড়াই জোর করে বিলকিস বেগমকে বাথরুমে ঢোকাচ্ছে রেখা। এরই মাঝে খুলে ফেলা হয়েছে তার শরীরের সব কাপড়। শীতের সকালে বৃদ্ধার গায়ে ইচ্ছেমতো ঢালা হয় ঠাণ্ডা পানি। কিন্তু ভেতরে গৃহকত্রীকে আটকাতে না পেরে বেরিয়ে আসে রেখার আসল চেহারা। যে লাঠি বৃদ্ধ বয়সে ছিল ভরসা, তা দিয়েই শুরু হয় বেদম প্রহার। মার খেয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলেও ক্ষান্ত হয়নি রেখা। এরপরও একের পর এক আঘাত করা হয় মাথায়। এক পর্যায়ে হাতের কাছে যা পেয়েছে তা দিয়েই চালিয়েছে নির্যাতন। তিনি বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকেন। কিন্তু এগিয়ে আসার যে কেউ ছিল না বাসায়। এমন সুযোগে রেখা এক পর্যায়ে আলমারির চাবির জন্য বিলকিসের বুকে ওপর চেপে বসে। বঁটি হাতেও তেড়ে আসে রেখা। এসব কিছুর মাঝে তার লক্ষ্য আলমারি। এক সময় অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করেন বিলকিস বেগম। তার গলা থেকে স্বর্ণের চেন খুলে নিজের গলায় পরে। আয়েশি ভঙ্গিতে পরখ করে নেয় হাতের বালা। তারপর চাবির সন্ধান পায় নিষ্ঠুর এই গৃহকর্মী। কিন্তু খুলতে না পেরে রক্তাক্ত, অসুস্থ বৃদ্ধাকে টেনে নিয়ে বাধ্য করেন আলমারি খুলে দিতে। ড্রয়ার খুলে স্বর্ণ, নগদ টাকা, মোবাইল সবই হস্তগত করে রেখা। পুরোটা সময় বিবস্ত্র বৃদ্ধা নিজের হাতেই রক্ত থামাতে মাথায় বাঁধেন কাপড়। সব হাতানোর পর কক্ষে তালা দেয় রেখা। তারপর খুলে আনে টিভি। জোগাড় করে ব্যাগ। সবকিছু গুছিয়ে ফাঁকা বাসায় আহত বৃদ্ধাকে ফেলে বেরিয়ে যায় রেখা। এ বিষয়ে শাহজাহানপুর থানা পুলিশ গণমাধ্যমকে জানায়, ওই বাসা থেকে লুণ্ঠিত মালামাল পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। এখন রেখাকে আটকের চেষ্টা চলছে। পুলিশের দৃষ্টিতে- গৃহকর্মীদের নামে ছদ্মবেশে পেশাদার অপরাধীরা ঢুকে যাচ্ছে মানুষের বাসাবাড়িতে। বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীদের কাজ দেয়ার আগে তাদের বিষয়ে ভালভাবে খোঁজ নেয়া জরুরী। জানতে চাইলে মেহবুবা জাহান বলেন, রেখার নাম ঠিকানা ও পরিচয় সবই রয়েছে। তার সবকিছু জেনেই বাসায় রাখা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করতে তো পুলিশের এত সময় লাগার কথা নয়। এদিকে এ ঘটনায় মনোবিজ্ঞানীরাও মুখ খুলছেন। তাদের দৃষ্টিতে- যৌথ পরিবার ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাচ্ছে। ওই বাসায় যদি একাধিক সদস্য কিংবা লোকজন থাকতো তাহলে বিলকিসের জীবনে এমন পরিণতি ঘটত না।
×