ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রভাবশালীদের চতুরতার কাছে হেরে যায় দরিদ্র মা-মেয়ে

তুফান কাহিনী- আপোসরফা শুরু ছয় মাস আগে

প্রকাশিত: ২৩:৩৩, ২১ জানুয়ারি ২০২১

তুফান কাহিনী- আপোসরফা শুরু ছয় মাস আগে

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ঘটনার রেশ আরও কতদূর যেতে পারে এ নিয়ে এবার পক্ষে বিপক্ষে কথা বলার পালা শুরু হয়েছে। বগুড়ার তুফান কাণ্ডের কৌতূহল যেন মিটছেই না। সাধারণের একটাই কথা : কিভাবে ঘটল এতসব? ধর্ষণের শিকার তরুণী এবং প্রতিবাদী মেয়েকে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার ঘটনার পৌনে চার বছর পর তারা কী করে অবাক করল এসব কিছুই ছিল না। হিসাব মেলাতে পারছে না সাধারণজন। কিন্তু হিসাব মিলছে অন্যত্র। অনেকেই তা বুঝতে পারছে। ২০১৭ সালের মধ্য জুলাইয়ে বগুড়ায় এক তরুণী শিক্ষার্থী সরকারী কলেজে ভর্তির প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে। ধর্ষণের শিকার হয়। প্রতিবাদ করলে মেয়ে ও তার মাকে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়। ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় মূলনায়ক তুফান সরকার ও তার দশ সহযোগীকে। শুরু থেকে পরের প্রতিটি ঘটনা ছিল চাঞ্চল্যকর এবং সেনসেটিভ। মামলার চার্জশীট হয়। তারপর শুরু হয় নেপথ্যের কুশীলবদের খেলা। ঘটনার গভীরে গিয়ে এতদিনে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, আপোসের সূত্রপাত হয় প্রায় মাস ছয়েক আগে। তুফান সরকারের ঘনিষ্ঠজন খুবই গোপনে কৌশলী হয়ে আপোসের আলোচনার ধারাবাহিকতা শুরু করে। এরই মধ্যে ধর্ষণের শিকার তরুণীর বিয়ে থা হয়ে যায়। সে স্বামীর সঙ্গে ঘর-সংসার করে পূর্বাঞ্চলের ময়মনসিংহ বিভাগের একটি জেলা শহরে। যাপিত জীবনে ভুলে যেতে চায় তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনা। তরুণীর মা থাকে বগুড়া জেলার ধুনটের এক গ্রামে। তুফান সরকারের চতুর কুশলীরা করোনার মধ্যে যোগাযোগ করে তরুণী ও তার মায়ের সঙ্গে। আপোসের অনেক দেন-দরবার হয়। একাধিক সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, নেপথ্যের কুশলীবরা মেয়ের মাকে বোঝানোর চেষ্টা করে, যা হওয়ার তা তো হয়েছেই। এখন আগামী দিনগুলো ভালভাবে থাকার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা দেয়া হবে। গরিবের সংসারে বারবার অর্থের লোভ দেখানো এবং মনের মধ্যে ধনী হওয়ার স্বপ্ন কাজ করায় শেষ পর্যন্ত আপোসে রাজি হয় মা। হেরে যায় প্রভাবশালীদের চতুরতার কাছে। তারপর মেয়েকে রাজি করার পালায় ওই কুশলীবরা সফল হয়। সবকিছু ঠিকঠাক রাখার দায়িত্ব পড়ে কিছু ব্যক্তির ওপর। একটি চেইন রক্ষা করা হয়। ধারাবাহিকতার পরবর্তী ধাপে রবিবার দুপুরে বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত-১ এ সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মামলার বাদী মেয়ের মা এবং ঘটনার শিকার মেয়ে দু’জনেই বলেন : ঘটনার স্থান কাল তারা কিছুই জানেন না। তুফান সরকারের বিরুদ্ধে তাদের কোন অভিযোগ নেই। ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটেনি। মামলার এজাহারে বর্ণিত অভিযোগ সত্য নয়। এজাহারে কী লিখা ছিল তা পড়ে দেখেননি। জোর করে এজাহারে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছিল। ভুল বোঝাবুঝি থেকে এই মামলা হয়েছিল। এরপর আদালতের বিচারক এ কে এম ফজলুল হক অভিযুক্ত তুফান সরকারের জামিন মঞ্জুর করেন। বুধবার এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তুফান সরকার কারাগারেই আছেন। এখনও কারাগার থেকে বের হতে পারেননি। এই বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে কথা হয় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পাবলিক প্রসিকিউটর) নরেশ মুখার্জীর সঙ্গে। তিনি জানান, তুফান সরকারের বিরুদ্ধে আরও মামলা বিচারাধীন। প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট রয়েছে।
×