ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত থেকে ৩৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আজ আসছে

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ২১ জানুয়ারি ২০২১

ভারত থেকে ৩৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আজ আসছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ বৃহস্পতিবার ভারত থেকে ৩৫ লাখ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন আসছে। দুপুর দেড়টায় এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ প্লেনে ভ্যাকসিনগুলো দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। আগামী ২৭ অথবা ২৮ জানুয়ারি পর্যবেক্ষণমূলক ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ভারতের পর বাংলাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। সব মিলিয়ে প্রথম মাসে ভ্যাকসিন আসবে ৭০ লাখ। যার মধ্যে ৬০ লাখ প্রয়োগ করা হবে। মহামারীর বিস্তারে বিশে^র উন্নত দেশগুলো করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করেছে। তৃতীয় বিশে^র দেশগুলোতে ভ্যাকসিন প্রয়োগের হার কম। ভ্যাকসিনের অপ্রতুলতার কারণেই সব দেশে এক সঙ্গে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে যারা ভ্যাকসিনের প্রি-অর্ডার দিয়ে রেখেছিল কেবল তারাই মহামারী মোকাবেলার শুরুর ধাপে প্রয়োগ করতে পারছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বুধবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে একটি অনুষ্ঠান শেষে জানান, ভারত থেকে বৃহস্পতিবার ৩৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসবে। এর মধ্যে ভারত উপহার হিসেবে ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেবে। এছাড়া বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো যে চুক্তি করেছে, তার প্রথম চালান হিসেবে ১৫ লাখ ভ্যাকসিন আসবে। আব্দুল মোমেন বলেন, আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সব মিলিয়ে মোট ৩৫ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসবে এবং আসার পরপরই ভ্যাকসিন কর্মসূচী শুরু করে দেয়া হবে। ভ্যাকসিন কর্মসূচী ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ভ্যাকসিন পাওয়ার বিষয়ে আমরা এখন যথেষ্ট নিশ্চিত। রাশিয়া ও চীনসহ আরও কয়েকটি দেশ টিকা দেয়ার বিষয়ে উৎসাহ প্রকাশ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, রাশিয়া অনেক ভ্যাকসিন দিতে চায়। এর মধ্যে চীনও আছে। চীন কোন উপহার দিচ্ছে কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। অন্যদিকে বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নান বলেন, ভারত থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া করোনার টিকার ২০ লাখ ডোজ আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশে আসবে। আর বাংলাদেশের কেনা তিন কোটি ডোজ টিকার প্রথম চালান আসবে ২৫ জানুয়ারি। দুটি বক্তব্যে ভ্যাকসিনের দুই রকম সংখ্যা উল্লেখ থাকায় বিষয়টি পরিষ্কার হতে স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য সচিব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে দুপুর দেড়টায় এসব ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আসবে। সেখান থেকে ভ্যাকসিন নিয়ে তেজগাঁওয়ের ইপিআইয়ের গুদামে রাখা হবে। প্রথম মাসে ভ্যাকসিন দেয়া হবে ৬০ লাখ। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব জানান, ২৭ অথবা ২৮ জানুয়ারি এসব ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হবে। ঢাকা মেডিক্যাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ৪০০ থেকে ৫০০ জনের ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রকোটল অনুযায়ী এক সপ্তাহ অপেক্ষা করা হবে। এরপর সারাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে টিকাদান কর্মসূচীর উদ্বোধন করবেন। সচিব বলেন, প্রথম মাসে ভ্যাকসিন আসবে ৭০ লাখ। এর মধ্যে ৬০ লাখ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে প্রথম মাসে। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, আইসিটি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম খুরশীদ আলম উপস্থিত ছিলেন। ডব্লিউএইচওর প্রটোকল অনুযায়ী প্রথমে কোন দেশে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হলে প্রথমে স্বল্প সংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হয়। এজন্য দেশে ৪০০-৫০০ জনের ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর তাদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এই সময়ের মধ্যে তাদের ওপর ভ্যাকসিনের কি প্রতিক্রিয়া হয় তা দেখা হবে। এটিকে করনো ভ্যাকসিন প্রয়েগের মহড়া হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভারত বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে যে টিকা পাঠাচ্ছে তা অক্সফোর্ড আবিষ্কৃত। সারা বিশে^ এই টিকার বাজারজাত করছে প্রসিদ্ধ ওষুধ কোম্পানি এ্যাস্ট্রাজেনেকা। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট এ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছ থেকে ভ্যাকসিন উৎপাদনের চুক্তি করেছে। সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে তিন কোটি ভ্যাকসিন কিনেছে বাংলাদেশ। প্রতিমাসে ৫০ লাখ করে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে সেখান থেকে। বিশে^র সব চাইতে বড় ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট ভারতেও ভ্যাকসিন সরবরাহ করছে। ইতোমধ্যে ভারতে সেরামের উৎপাদিত ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর সব মানুষকে ২০ মিনিট টিকাদান কেন্দ্রে অবস্থান করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে কোন পাশর্^প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেবেন। সাধারণত ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর কারো কারো মধ্যে জ¦র, মাথাব্যথা এবং বমি বমি ভাব দেখা দিচ্ছে। তবে সকলের মধ্যে এসব পাশর্^প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে না। তবে এসব উপসর্গ মারাত্মক নয়। সাধারণ চিকিৎসায় যা সেরেও উঠছেন সকলে। সেরামের পক্ষ থেকে এর মধ্যে জানানো হয়েছে ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরও অনেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে সেই সংক্রমণ প্রাণঘাতী হবে না। অন্যদিকে ভ্যাকসিন গ্রহণের পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে ডব্লিউএইচও।
×