ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নয়া মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘোষণা- আগামী এক শ’ দিন মাস্ক পরার নির্দেশ ডব্লিউএইচও ও প্যারিস চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার অঙ্গীকার অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতার আশ্বাস

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প যুগের অবসান শপথ নিলেন জো বাইডেন

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২১ জানুয়ারি ২০২১

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প যুগের অবসান শপথ নিলেন জো বাইডেন

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে শান্তিপূর্ণভাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন জো বাইডেন। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ট্রাম্প যুগের অবসান। বুুধবার ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ৪৮ মিনিটে) প্রেসিডেন্ট ১২৭ বছরের পুরনো পারিবারিক বাইবেলের ওপর হাত রেখে শপথ নেন। তাদের শপথ পড়ান যথাক্রমে প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস ও বিচারপতি সোনিয়া সটোমাইয়র। কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলের পেছনে সেজন্য নির্মাণ করা হয় সুউচ্চ মঞ্চ। খবর সিএনএন, আলজাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স, ফক্স নিউজ, লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ইউএসএ টুডে, ওয়াশিংটন পোস্ট ও নিউইয়র্ক টাইমসের। শপথ অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও হিলারি ক্লিনটন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াকার বুশ ও লরা বুশ, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামা ও মিশেল ওবামা, বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও কারেন পেন্সসহ বাইডেন ও কমলা হ্যারিস পরিবারের সদস্যরা যোগ দেন। অনুষ্ঠানে বিশে^র বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমকর্মী, সাংবাদিক ও নিরাপত্তায় নিয়োজিত ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরাও ছিলেন। সাবেক প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীণ জিমি কার্টার (৯৬) ও সাবেক ফার্স্টলেডি রোজালিন কার্টার অনুষ্ঠানে যোগ দেননি। তারা বিষয়টি আগেই জানিয়ে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে তাদের শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন। আরও উপস্থিত ছিলেন সামরিক, বেসামরিক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন শপথ নেন। তার পুরো নাম জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র (৭৮)। আমেরিকা ইউনাইটেড থিমে সাজানো হয়েছে শপথ মঞ্চ। দুপুরের কিছু আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন কমলা ডি. হ্যারিস। যিনি দেশটির ইতিহাসে প্রথম কোন নারী এত বড় পদে আসীন হলেন। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও এশিয়ান বংশোদ্ভূত নারী হিসেবেও এই অভিষেক প্রথম। ১৮৯৩ সঅল থেকে যে বাইবেলের ওপর হাত রেখে প্রেসিডেন্টরা শপথ নিচ্ছেন সেটি নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের বাবা ডক্টর জিল বাইডেন ব্যবহার শুরু করেন। প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জর্জ ওয়াশিংটন শপথ নেয়ার সময় এক হাত বাইবেলে রেখেছিলেন। পরে প্রায় সব মার্কিন প্রেসিডেন্টই শপথ নেয়ার সময় বাইবেলে হাত রেখেছিলেন। এ বিয়য়ে কোন নিয়ম না থাকলেও রীতি হিসেবে মেনে নিয়েছেন সবাই। সেই রীতি অনুুযায়ী পরিবারের বাইবেলকেই বেছে নিয়েছেন বাইডেন। তার আগে কমলা হ্যারিস ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস নতুন প্রেসিডেন্টকে শপথ বাক্য পাঠ করান। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন হ্যারিস। শপথের আগে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন লেডি গাগা। মিনেসোটা সিনেটর এ্যামি ক্লোবাকার অভিষেক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। তিন দশকের মধ্যে প্রথম রৌদ্রোজ্জ্বল অভিষেক অনুষ্ঠান হলো। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন যখন প্রথমবার শপথ নিয়েছিলেন সেদিনও রৌদ্রোজ্জ্বল অভিষেক হয়েছিল। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দুপুরের তাপমাত্র থাকবে ৪৫ ডিগ্রীর কাছাকাছি। আংশিক থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আকাশ থাকবে রৌদ্রোজ্জ্বল। শপথ অনুষ্ঠানের সময় ৩৪ থেকে ৪০ এমপিএইচ গতিতে বাতাস বইবে। বাইডেন তার ভাষণে জাতীয় সমস্যা, মহামারী কোভিড, বিধ্বস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা তুলে ধরেন। ৫৯ তম শপথ উদ্যাপন অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রথমে লেডি গাগা জাতীয় সঙ্গীত গান। পরে কবিতা আবৃতি করেন আমান্ডা গরম্যান। এরপর গান শোনার জেনিফার লোপেজ। ভাষণে বাইডেন গভীরভাবে বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে যা কিছু করণীয় তাই করার কথা জানান। সবাইকে এক যোগে দেশ গড়ে তোলার কথাও বলেন। বাইডেন তার প্রেসিডেন্সিতে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমরা এমন এক সময় পার করছি যখন আমাদের ঐক্য ধরে রাখতে হবে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর বাইডেন প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে ১৭ টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। তার প্রথম কাজই হলো ফেডারেল সরকারের অধীনে থাকা সম্পতিতে সবাইকে মাস্ক পরার নির্দেশ দেন। এছাড়া তিনি দেশের সবাইকে আগামী এক শ’ দিন মাস্ক পরার নির্দেশ দেন। প্রথম দিনে তিনি যেসব নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন তার মধ্যে রয়েছে, আগামী এক শ’ দিন সব মার্কিনীকে মাস্ক পরার নির্দেশ, করোনা মোকাবেলায় পদক্ষেপ নিতে চিকিৎসা সামগ্রী ও টিকা দ্রুততম সময়ে সরবরাহে জরুরী পদক্ষেপ নিতে যাবতীয় সব কাজ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থায় (ডব্লিউএইচও) যুক্তরাষ্ট্রের ফিরে যাওয়া, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ক্ষুদ্র শিল্পগুলোকে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজ করা, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে যাওয়া, শতাধিক পরিবেশবাদী সংস্থাতে আর্থিক সহায়তা করা, অবৈধ অভিবাসীদের তালিকা করে তাদের বৈধতা দেয়া, ওবামা আমলের ড্যাকা কর্মসূচী ফিরিয়ে আনা, মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ সাতটি দেশের ওপর ট্রাম্পের শাসনামলে জারি করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, সীমান্ত দেয়াল নির্মাণ বন্ধ করা, তৃতীয় লিঙ্গ ও সমকামীদের অধিকার রক্ষা, মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি এখন এক দুর্ভেদ্য দুর্গের মতো হয়ে উঠেছে। সেখানে ২৫ হাজার সৈন্য ঘিরে রেখেছে ক্যাপিটল হিলের কংগ্রেস ভবন। ভবনের সামনের উন্মুক্ত চত্বর লিংকন মেমোরিয়ালে স্বাভাবিক সময়ে যেখানে কয়েক লাখ দর্শকের সমাগম হওয়ার কথা, এখন তা জনমানবশূন্য। জনতার স্থান নিয়েছে দুই লাখ পতাকা। ওই স্মৃতিচত্বরের দর্শনীয় রিফ্লেকটিং পুল, যার টলটলে জলে প্রতিবিম্বিত হয় ৫৫০ ফুট দীর্ঘ স্মারকস্তম্ভ ওয়াশিংটন মনুমেন্ট, তার দুই ধারেও কোন মানুষ নেই। রয়েছে ৪০০ আলোকবাতি। যে চার লাখ মার্কিন নাগরিক করোনার কারণে মারা গেছেন, ওই পতাকা ও আলোকবাতি তাদেরই প্রতিনিধি। অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন হাজারখানেক অতিথি, যাদের অধিকাংশই কংগ্রেস সদস্য ও বাইডেন-হ্যারিস পরিবারের লোকজন। আরও উপস্থিত থাকেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ অনুষ্ঠানের ঘণ্টাতিনেক আগে স্ত্রী মেলানিয়াসহ ওয়াশিংটন ছেড়ে চলে যান ফ্লোরিডা। বিশ্বজুড়ে সম্প্রচার করা হয় মার্কিন প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। শপথ নেয়ার আগে সস্ত্রীক বাইডেন ও স্বামীসহ কমলা হ্যারিস করোনায় মারা যাওয়া চার লাখের বেশি মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনা ঘটে। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উস্কানিতেই হামলা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এরই সঙ্গে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের আগে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। সবদিক খতিয়ে দেখে শপথ অনুষ্ঠানে নজিরবিহীন নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। পঞ্চাশটি প্রদেশ থেকে ২৫ হাজার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হচ্ছে। ক্যাপিটল হিল ও হোয়াইট হাউস চত্বরে নিñিদ্র নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে মেট্রো চলাচল। তবে ঐতিহ্য আর প্রথা না মেনে শপথ অনুষ্ঠানে না থাকার কথা আগেই জানিয়ে দিয়েছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান সাধারণত জাঁকজমকপূর্ণ হয়ে থাকে, কিন্তু করোনাকালের সঙ্গে কিছুদিন আগের পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এবারে তেমনটা হচ্ছে না। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের শেষে আয়োজিত হয় ‘সেলিব্রেটিং আমেরিকা’ অনুষ্ঠান। জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস সেখানে অংশ নেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টম হ্যাঙ্কস। শপথ নেয়ার সময় প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘আমি একনিষ্ঠভাবে শপথ গ্রহণ করছি যে, আমি বিশ্বস্ততার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের দায়িত্ব সম্পাদন করব, এবং আমি আমার সামর্থের সবটুকু দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের সুরক্ষা, সংরক্ষণ ও প্রতিপালন করবো’। প্রেসিডেন্ট পবিত্র বাইবেলের ওপর হাত রেখে শপথ নেন। বাইবেলটি তার স্ত্রী জিল বাইডেনের হাতে রাখা ছিল। ডান হাত তিনি উঁচুতে তুলে ধরে শপথ নেন। পরে এক ভাষণে তিনি দেশকে আবারও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। কমালা হ্যারিসও শপথ নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট হন। প্রথা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট শপথ নেয়ার আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট শপথ নেন। প্রেসিডেন্ট শপথ নেয়ার পর হোয়াইট হাউসে চলে যান বাইডেন। হোয়াইট হাউসই হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের আগামী চার বছরের কর্মস্থল ও বাসস্থান। প্রেসিডেন্টের অভিষেকে প্রথাগতভাবেই ব্যাপক নিরাপত্তা থাকে। সিক্রেট সার্ভিসের পক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থার নেতৃত্বে থাকেন এজেন্ট ম্যাট মিলার। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে এই অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা করা হয়েছে। অতীতের মতো এবারও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের রীতি অনুযায়ী সেনাবাহিনী পরিদর্শন করেন কমাণ্ডার-ইন-চীফ প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তবে পেনসিলভানিয়া এ্যাভিনিউ থেকে হোয়াইট হাউস পর্যন্ত সেই প্রথাগত প্যারেডের বদলে এবার হবে পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ভার্চুয়াল প্যারেড হয়। পরে সস্ত্রীক বাইডেন এবং স্বামীসহ হ্যারিসকে হোয়াইট হাউসে নিয়ে যায় সেনাবাহিনী, যাদের সঙ্গে থাকেব্যান্ড দলও। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নতুন প্রেসিডেন্টরা অভিষেকের দিনে দেশের সবচাইতে জনপ্রিয় তারকাদের হাজির করেছেন। মহামারি সত্বেও এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি। বাইডেনের সক্রিয় সমর্থক লেডি গাগা উপস্থিত থাকেন এবারের অভিষেকে। তিনি জাতীয় সঙ্গীত গান। পরে মঞ্চে গান করেন জেনিফার লোপেজ। বাইডেনের শপথ গ্রহণের পর অভিনেতা টম হ্যাংকসের উপস্থাপনায় ৯০ মিনিটের একটি টেলিভিশন শো হয়। অনুষ্ঠানে যোগ দেন জন বন জোভি, ডেমি লোভ্যাটো এবং জাসটিন টিম্বারলেক। অনুষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ টিভি নেটওয়ার্ক এবং স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে সম্প্রচারিত হয়। শুধু রক্ষনশীল নেটওয়ার্ক ফক্স চ্যানেলে এটা দেখানো হয়নি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্ত্রী মেলানিয়াকে নিয়ে হোয়াইট হাউস ছেড়েছেন। বুধবার ভোরে মেরিন ওয়ান হেলিকপ্টারে করে হোয়াইট হাউস ছাড়েন তিনি। হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে ট্রাম তার উত্তরসূরী বাইডেনের জন্য আর মেলানিয়া জিলের জন্য একটি করে চিঠি রেখে যান। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা টাম্পকে লিখে দেয়া তার বিদায়ী ভাষণ দিতে বলা হয়ে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠান তিনি থাকছেন না। এ ধরনের ঘটনা সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ১৮৬৯ সালে। সে সময় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এ্যান্ড্রু জনসন তার উত্তরসূরীর অভিষেকে অংশ নেননি। ট্রাম্প নিজের বিদায় অনুষ্ঠানও ওয়াশিংটন ডিসিতে না করে বরং মেরিল্যান্ডের এ্যান্ড্রুস বিমান ঘাঁটিতে আয়োজন করেছেন। মেরিন ওয়ানে করে সেখানেই রওয়ানা হয়েছেন ট্রাম্প। সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন না তারই ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। এ বিষয়ে পেন্সের সহযোগীরা বলেন, যৌক্তিকভাবে বললে, ভাইস প্রেসিডেন্টের জন্য একই দিনে দুই জায়গায় হওয়া দুইটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা সত্যিই খুব কঠিন। যেজন্য পেন্স মঙ্গলবারই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বিদায় জানান। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে তার স্বামীসহ মোটর শোভাযাত্রা করে শপথ অনুষ্ঠানে নিয়ে যান বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স। এদিকে নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ নেয়ার প্রাক্কালে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার আগে বাইডেন কংগ্রেসের দুই দলের গণপ্রার্থনায় যোগ দেন। সেখানে মহামারি করোনায় মারা যাওয়া মার্কিনীদের জন্য প্রার্থনা করা হয় এবং প্রিয়জন হারানো পরিবারাগুলোর প্রতি সমবেদনা জানান হয়। গণপ্রার্থনায় অংশ নেয়া প্রত্যেকের মুখে মাস্ক পরা ছিল। টুইটারে বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা লিখেছেন, ইটস ইউর টাইম (এখন আপনারই সময়)। বিদায় নেয়ার আগে এক ভাষণে ট্রাম্প প্রথমবারের মতো পরবর্তী প্রশাসনের সাফল্যের জন্য জনগণকে ‘প্রার্থনা’ করতে বলেছেন। যদিও তিনি তার ভাষণে একবারের জন্যও বাইডেনের নাম উচ্চারণ করেননি। নির্বাচনে পরাজয়ের পর থেকে আর দেখা মিলছিল না ট্রাম্পের। অবশেষে এক ভিডিওবার্তায় নীরবতা ভেঙে বিদায়ী বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। যা পরবর্তীতে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। সেই ভিডিওবার্তায়ই দায়িত্ব গ্রহণের অপেক্ষায় থাকা বাইডেন প্রশাসনের সাফল্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে ‘প্রার্থনা’ করতে বলেছেন ট্রাম্প। যদিও এখন পর্যন্ত ব্যক্তিগতভাবে বাইডেনকে অভিনন্দন কিংবা প্রচলিত রীতি অনুযায়ী ওভাল অফিসে চায়ের নিমন্ত্রণ করেননি ট্রাম্প। নিজের বিদায় উপলক্ষে পেন্স টুইটারে এক পোস্টে চার বছর ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ওই পোস্টে তিনি কয়েকটি ছবিও দিয়েছেন। যেগুলোর মধ্যে কোনোটিতেই ট্রাম্প নেই। প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন প্রথমেই যেসব বিষয়কে গুরুত্ব দেবেন তার মধ্যে অন্যতম হল, মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, ১০০ দিনে ১০ কোটি ভ্যাকসিন দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত করা, বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থায় (ডব্লিউএইচও) পুনরায় যোগদান, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন নীতি পরিবর্তন। জনতার বদলে ছিল পতাকা ॥ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করতে ন্যাশনাল মলে সাধারণত লাখ লাখ সমর্থক জড়ো হলেও এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনা মহামারি এবং গত ৬ জানুয়ারি ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবের পর বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পাচ্ছে সামান্য সংখ্যক মানুষ। বুধবার ন্যাশনাল মলে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ রাখা হয়েছে। কেবলমাত্র নির্বাচিত সাংবাদিক এবং কর্মকর্তারা অনুষ্ঠান স্থলে হাজির থাকার অনুমতি পেয়েছেন। এর বদলে ন্যাশনাল মল সাজানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ পতাকা দিয়ে। ভাষণে যা বলেন বাইডেন ॥ শপথ নেয়ার পর প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাষণ দেন বাইডেন। ক্ষমতাগ্রহণের পর প্রথম ভাষণে ঐক্যের ডাক দেন তিনি। বাইডেন বলেন, এমন এক কঠিন সময়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এটা আমেরিকার দিন। এটা গণতন্ত্রের দিন। আজ কোন প্রার্থীর বিজয় নয় আমরা একটি কারণ উদ্যাপন করব। কারণটি গণতন্ত্র। মানুষের প্রার্থনা কবুল হয়েছে। মানুষের ইচ্ছার মান রাখা হযেছে। অতীতে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের অভিষেক বক্তৃতার দিকে তাকিয়ে থাকে পুরো বিশ্ব। কারণ, এর মধ্য দিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের ভাবি পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে বাইডেন এই বিষয়টি সম্পর্কে খুব ভালোভাবেই ওয়াকিবহাল। খুব গুরুত্ব সহকারে ভাষণ প্রস্তুত করা হয়। বাইডেনের দীর্ঘদিনের উপদেষ্টা মাইক ডোনিলন এ বক্তব্য লেখার প্রক্রিয়া তদারকি করেন। ইতিহাসবিদ ও প্রেসিডেন্টদের আত্মজীবনী লেখক জন মিচামও অভিষেক ভাষণ তৈরিতে সহযোগিতা করেন। ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্টের শাসনামলের পর থেকে বাইডেনের প্রেসিডেন্সিকে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং মনে করা হয়। তার কারণ, বিভক্ত হয়ে পড়া এক জাতিকে আবারও ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালান তিনি। নবেম্বরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয় নিশ্চিত হওয়ার পর ডেলাওয়ারের উইলমিংটনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন বাইডেন। এর ৭২ দিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শপথ অনুষ্ঠান। মাঝখানের এ সময়টুকুতে অনবরত নির্বাচন নিয়ে ভুয়া অভিযোগ তোলেন ট্রাম্প। তাতে বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার চ্যালেঞ্জটা ক্রমে জটিল থেকে জটিলতর হয়। নিরাপত্তার চাদরে ওয়াশিংটন ॥ বাইডেনের অভিষেক উপলক্ষে অভূতপূর্ব নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি। এক্ষেত্রে নিরাপত্তারক্ষীদেরও ছাড় দেয়া হচ্ছে না। তাদেরও তল্লাশি করা হয়। বাইডেনের প্রতি রুহানির আহ্বান ॥ ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে তেহরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তিতে ফিরতে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ওয়াশিংটনকে ইরান পরমাণু চুক্তিতে ফিরিয়ে নিতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। রুহানি তার বক্তব্যে বাইডেনকে ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতেও আহ্বান জানিয়েছেন। ৪ লাখ মার্কিনীকে স্মরণ বাইডেনের ॥ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার আগের দিন সন্ধ্যায় বাইডেন অংশ নিলেন করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মারা যাওয়া চার লাখ মার্কিন নাগরিকের স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে। করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মৃত্যুর ১১ মাসের মাথায় মঙ্গলবার সেখানে মৃতের সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়ে যায়। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয়ভাবে এই স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মহামারীর মধ্যে নজিরবিহীন জনস্বাস্থ্য সঙ্কটে জর্জরিত, অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত এবং রাজনৈতিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত একটি রাষ্ট্রকে তিনি দিয়ে যাচ্ছেন বাইডেনের পরবর্তী প্রশাসনের হাতে। বাইডেন ও তার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের নেতৃত্বে লিংকন মেমোরিয়ালের পাদদেশে এই স্মরণ অনুষ্ঠানই ছিল করোনায় প্রাণ হারানো বিপুল এই জনগোষ্ঠীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের প্রথম কোন অনুষ্ঠান। রাজধানীর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে একইভাবে স্মরণ করা হয় মহামারীতে হারিয়ে যাওয়া সেইসব মার্কিনীদের। স্মরণ অনুষ্ঠানের সূচনা করে বাইডেন বলেন, এই ক্ষত শুকাতে হলে আমাদের স্মরণ করতে হবে।
×