ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাঘের চামড়াসহ আটক চোরাশিকারিকে কারাগারে

প্রকাশিত: ২০:২৬, ২০ জানুয়ারি ২০২১

বাঘের চামড়াসহ আটক চোরাশিকারিকে কারাগারে

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটের সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলায় ক্রেতা সেজে জব্দ করা বাঘের চামড়াসহ আটক চোরা শিকারি গাউস ফকিরকে (৪৫) বন আদালতে সোপর্দ করেছে বন বিভাগ। আদালত গাউস ফকিরকে কারাগারে প্রেরণ ও উদ্ধারকৃত চামড়াটিকে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বিভাগীয় বন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধায়নে সংরক্ষনের নির্দেশ দিয়েছেন। বুধবার বিকেলে বন আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট সমির মল্লিক এ আদেশ দেন। এর আগে দুপুরে র‌্যাব-৮-এর হেড কোয়ার্টার বরিশাল থেকে জব্দকৃত চামড়া ও চোরাশিকারি গাউস ফকিরকে বাগেরহাটের সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কার্যালয়ে আনা হয়। সেখানে চোরা শিকারি ও চামড়া সাংবাদিকদের সামনে আনা হয়। একটি বিশেষ ব্যাগ থেকে বনরক্ষিরা বাঘের চামড়াটিকে খোলেন। খুলে বনবিভাগের কার্যালয় চত্বরে রাখা হয়। উপস্থিত অনেকেই বাঘের চামড়াটিকে হাত দিয়ে ছুয়ে দেখেছেন। চামড়াটিতে লবন মাখানো ছিল। একটি পচা গন্ধ আসছিল চামড়া থেকে। এসময় বন বিভাগের কর্মকর্তা, বনরক্ষি ও র‌্যাব-৮ এর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও বন আইনে মামলা দায়ের শেষে চামড়া ও আটক চোরা শিকারিকে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন। তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি গাউস ফকির একটি বাঘের চামড়া বিক্রির চেষ্টা করছেন। ক্রেতা সেজে চামড়াটি ক্রয়ের জন্য গত তিন চার দিন ধরে গাউসের সাথে যোগাযোগ করি। গাউসের সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে দর কষাকষি শেষে ১৩ লক্ষ টাকা চুক্তিতে চামড়াটি ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী র‌্যাব-৮ এর সাথে যোগাযোগ করে তাদের সহযোগিতা নিয়ে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করা হয়। টাকা দিয়ে চামড়া নেওয়ার সময় হাতে নাতে গাউস ফকিরকে আটক করা হয়। আটক গাউস ফকির ও জব্দ বাঘের চামড়া আমাদের কার্যালয়ে রয়েছে। বন্য প্রাণি নিধন আইনে বাঘ হত্যার অপরাধে মামলা দায়ের পূর্বক গাউস ফকির ও চামড়া আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী চামড়াটি সংরক্ষণ করা হবে। বেলায়েত হোসেন আরও বলেন, আমরা ধারণা করছি গাউস ফকির একজন শিকারি। গাউস ফকির এর আগে এ ধরণের কাজ করেছে কিনা বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। তবে ফকির বাড়ির লোকজন এর আগে এ ধরণের কাজের সাথে জড়িত ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। কিভাবে বাঘ হত্যা করা হয় এবং বাঘের চামড়া কোথায় যায় এমন প্রশ্নে ডিএফও মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, আমরা যতদূর জানি এই দুষ্ট লোকেরা খাবারের সাথে চেতনানাষক ঔষধ খাইয়ে বাঘ মারা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে তারা বাঘের চামড়াটিকে লোকালয়ে নিয়ে আসেন। এই বাঘের চামড়াগুলো বেশিরভাগ সময় ঢাকার বিভিন্ন এজেন্সির কাছে বিক্রি করা হয়। আসলে তারা দেশের বাইরে পাচার করে অনেক দামে। আবার দেশের মধ্যেও বিক্রি হতে পারে। মঙ্গলবার রাতে উপজেলার রায়েন্দা বাজারস্থ বাসস্টান্ড সংলগ্ন এলাকা থেকে বন বিভাগ ও র্যা ব-৮ এর সদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। এসময় তার কাছ থেকে একটি বাঘের চামড়া উদ্ধার করা হয়। পরে রাতে র‌্যাব-৮-এর হেড কোয়ার্টার বরিশালে নিয়ে যাওয়া হয়। আটক গাউস ফকির শরণখোলা উপজেলার দক্ষিন সাউথখালী এলাকার মৃত রশীদ ফকিরের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। বাঘের চামড়া কোথায় পেলেন, কিভাবে পেলেন এমন প্রশ্নে চোরা শিকারি গাউস ফকির বলেন, শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা এলাকার জেলে অহিদুল আমার কাছে দিয়েছিল বিক্রি করতে। আমি অশিক্ষিত গরীব মানুষ, ভুল করে লোভে পড়ে এই চামড়া নিয়েছি। এছাড়া আমি বেশি কিছু জানি না। জব্দ চামড়াটি ৮ ফুট ১ ইঞ্চি লম্বা ও ৩ ফুট ১ ইঞ্চি চওড়া।
×