ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চ্যালেঞ্জ থাকার পরও অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে আশাবাদ অর্থমন্ত্রীর চলতি বাজেট বাস্তবায়নের প্রথম প্রান্তিক প্রকাশ

১৮ বছরের উর্ধে সকল নাগরিক বিনামূল্যে করোনার টিকা পাবেন

প্রকাশিত: ১৯:২৯, ২০ জানুয়ারি ২০২১

১৮ বছরের উর্ধে সকল নাগরিক বিনামূল্যে করোনার টিকা পাবেন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের ১৮ বছরের উর্ধে সকল নাগরিককে ধাপে ধাপে বিনামূল্যে করোনার টিকা দেয়া হবে। এজন্য ভাইরানের টিকা আমদানি ও প্রয়োগের জন্য চলতি বাজেটে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় দুটি প্রকল্পে জরুরি ভিত্তিতে সাড়ে ৫ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। করোনার কারণে সামষ্টিক অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ থাকলেও প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে তা আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যকর ও গতিশীল নির্দেশনায় চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা ও উন্নয়ন কার্যক্রম প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের প্রথম প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বুধবার অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য সম্বলিত প্রতিবেদনটি অর্থমন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে করোনা মোকাবেলায় সরকারের গৃহিত পদক্ষেপ, সামগ্রিক বাজেট বাস্তবায়ন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, এলডিসি গ্রাজুয়েশন, রূপকল্প ২০২১-২০৪১, সামাজিক নিরাপত্তা, রেমিটেন্স আহরণ, সরকারের আয়-ব্যয়, রাজস্ব আহরণ পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যত করুণীয় নির্ধার সম্পর্কেও আলোকপাত করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর প্রভাব মোকাবেলায় সরকার জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থাকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার প্রদান করে সার্বিক স্বাস্থ্যখাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ প্রদান অব্যাহত রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি দিক নির্দেশনায় করোনা ভাইরাসের প্রতিরোধ, সংক্রমন হ্রাস ও চিকিৎসা প্রদানে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে। অতিরিক্ত বরাদ্দ হতে ভ্যাকসিন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রয়োগসহ প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ব্যয় নির্বাহ করা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার করোনা মোকাবেলায় ভ্যাকসিন প্রয়োগকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে অক্সফোর্ড আসট্রা জিনিকা টিকার তিন কোটি ডোজ সরকারিভাবে আমদানির উদ্যোগ চূড়ান্ত হয়েছে। এ লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি গাভি কোভিক্স এর আওতায় আরো সাড়ে তিন কোটি ডোজ টিকা পাওয়া যাবে। এতে করে পর্যায়ক্রমে কয়েকটি ধাপে ১৮ বছরের উর্ধে সকল নাগরিককে বিনামূ্ল্েয টিকার আওতায় আনা হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভ্যাকসিন বিতরণের খসড়া পরিকল্পনা চুড়ান্ত করছে। ভ্যাকসিন সফলভাবে প্রয়োগ করার সকল প্রস্তুত ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, রূপকল্প-২০২১-২০৪১ এর বাস্তবায়নও শুরু করা হয়েছে। আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে শামিল হওয়া। বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রার সাথে সামঞ্জস্য রেখে টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট বাস্তবায়ন এবং ব-দ্বীপ পরিকল্পনা, ২১০০ বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে। কোভিড-১৯ মহামারিজনিত বৈশ্বিক বিপর্যয়ের কারণে বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা কিছুটা শ্লথ হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেকর্ড ৮.১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমে ৫.২৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২,০৬৪ মার্কিন ডলারে। ২০১৯ সালে দারিদ্র্য ও অতি দারিদ্র্যের হার কমে যথাক্রমে ২০.৫ ও ১০.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। কোভিড-১৯ এর প্রভাব মোকাবেলা ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পুনরুজ্জীবিত করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি দিক নির্দেশনায় সরকার সামাজিক সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক পূনরুদ্ধার সম্বলিত ১ লক্ষ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা (জিডিপি’র ৪.৩৪ শতাংশ) ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, যার বাস্তবায়ন কাজ বর্তমানে পুরোদমে চলছে। গড় আয়ু, মাথাপিছু আয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ অগ্রগতি সাধন করেছে। যার স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি কর্তৃক প্রকাশিত ‘হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স ২০২০’ অনুযায়ী ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বিগত বছরের তুলনায় দুই ধাপ এগিয়ে হয়েছে ১৩৩তম। যুক্তরাজ্যের সেন্টার ফর ইকোনমিকস এন্ড বিজনেস রিসার্চ এর প্রক্ষেপন অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৮তম শীর্ষ অর্থনীতি এবং ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৫তম শীর্ষ অর্থনীতিতে উন্নীত হবে। বর্তমানে আমাদের অবস্থান ৪১তম। তবে কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারি হতে উত্তরণে সরকার কর্তৃক সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক, প্রবাস আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ, মূল্যস্ফীতি প্রভৃতি মৌলিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক চলকসমূহের অবস্থান বেশ সন্তোষজনক। সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যে উদ্বৃত্ত অবস্থা বিরাজ করছে। টাকা-ডলার বিনিময় হার স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে রপ্তানি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। সরকারের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আসায় অচিরেই আমদানি বিশেষত মূলধন যন্ত্রপাতি আমদানিতে গতি ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা যাচ্ছে। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাবে বিশ্বব্যাপী লকডাউনের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে, যার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী প্রবৃদ্ধি হ্রাস ও বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর সর্বশেষ প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০২০ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৪.৪ শতাংশ সংকুচিত হবে। বিশ্ব বানিজ্য সংস্থার হিসাব মতে, ২০২০ সালে বৈশ্বিক পণ্য বানিজ্য ৯.২ শতাংশ হ্রাস পাবে। আইএলও এর মতে কোভিড-১৯ এর প্রভাবে ২০২০ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপি শ্রমিক আয় ১০.৭ শতাংশ কমেছে। বিশ্ব ব্যাংক এর হিসাব মতে ২০২০ সালে মধ্যম আয়ের দেশসমূহের ক্ষেত্রে প্রবাস আয় ৭ শতাংশ হ্রাস পাবে। আঙ্কটাডের তথ্য অনুযায়ী কোভিড-১৯ এর প্রভাবে ২০২০ সালের প্রথমার্ধে বৈশ্বিক এফডিআই প্রবাহ ৪৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ‘কোভিড-১৯’ হতে সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারী সমগ্র পৃথিবীর আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি আমুল বদলে দিয়েছে। কোভিড-১৯ এর এই বৈশ্বিক প্রভাব হতে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। ভাইরাস প্রতিরোধে দীর্ঘ সাধারণ ছুটির কারণে কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সাময়িকভাবে স্থবিরতা দেখা দেয়। এরূপ বৈশ্বিক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য দিক নির্দেশনায় প্রণোদনা কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পুনুরুদ্ধার কার্যক্রমে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সামষ্টিক অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি ॥ করোনার প্রভাবে মোট সরকারি ব্যয় ৭.৫৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, তবে সামনের দিনগুলোতে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির জোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এর তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মোট বরাদ্দের ৮.২ শতাংশে, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮.৩ শতাংশ। রাজস্ব খাতে চলমান সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে রাজস্ব আদায়ে গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এনবিআর এর তথ্যমতে প্রথম প্রান্তিকে এনবিআর কর রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.১১ শতাংশ। প্রবাস আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৮.৫৪ শতাংশ, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৬.৮১ শতাংশ। সরকার কর্তৃক ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা প্রদান ও রেমিট্যান্স প্রেরণ প্রক্রিয়া সহজীকরণের কারণে প্রবাস আয় বিপুলভাবে বেড়েছে এবং আগামীতে এখাতে প্রবৃদ্ধির চলমান ধারা অব্যাহত থাকবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করছি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণবৃদ্ধি পেয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ তারিখে দাঁড়িয়েছে ৩৯.৩১ বিলিয়ন ডলার। রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৫৪ শতাংশ। বিগত বছরের এ সময়ে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ঋণাত্মক (-২.৯৪ শতাংশ)। রপ্তানি বানিজ্যের এই প্রবৃদ্ধি করোনার প্রভাব হতে অর্থনীতির ঘুরে দাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হিসেবে বিবেচিত। আমদানি ব্যয় ১১.৪৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১২.৬৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। মূলত মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কিছুটা কম হওয়ায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাসের প্রেক্ষাপটে আমদানি ব্যয় হ্রাস পেয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২০-২১ অর্থবছরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার ২ কোটি টাকা (জিডিপি’র ১১.৯ শতাংশ)। প্রথম প্রান্তিকে আহরিত রাজস্বের পরিমাণ ৬৫ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা, যা বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার ১৭.৩ শতাংশ। প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.৩ শতাংশ বেশি। এ সময়ে কর রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ২.৮ শতাংশ এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ৩৪.৬ শতাংশ বেড়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতির শ্লথ গতি সত্ত্বেও রাজস্ব আহরণ আশাব্যঞ্জক। ভ্যাট আহরণের জন্য ইএফডি যন্ত্র সংগ্রহ ও স্থাপন, আমদানি-রপ্তানি পণ্য স্ক্যানিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্ক্যানার স্থাপন ও সর্বোপরি রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থা অটোমেশনের জন্য চলমান উদ্যোগসমূহ বাস্তবায়িত হলে সামনের দিনগুলোতে রাজস্ব আহরণে আরো গতি আসবে বলে আশা করা যায়। ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে মোট ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৫ লক্ষ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা (জিডিপি’র ১৭.৯৪ শতাংশ); এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় ৩ লক্ষ ৮ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ব্যয় ১ লক্ষ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় হয়েছে ২ লক্ষ ৬১ হাজার ৩০১ কোটি টাকা যা সংশোধিত বরাদ্দের প্রায় ৮৪.৭ শতাংশ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় ৬.৮৩ শতাংশ বেশি। করোনা মোকাবেলায় সরকার স্বাস্থ্যখাতে জনবল বৃদ্ধি, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম, ঔষধ ক্রয় ইত্যাদি খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রদান করে এবং প্রধানমন্ত্রী ১ লক্ষ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকার প্রনোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করেন যার ২৭.৭ শতাংশ সরকারের এবং ৮২.৩ শতাংশ ব্যাংক ব্যবস্থা হতে বহন করা হচ্ছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ব্যয় হয়েছে হয়েছে ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা যা সংশোধিত বরাদ্দের প্রায় ৮০.০ শতাংশ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এডিপি ব্যয় অপেক্ষা প্রায় ৪.৭ শতাংশ বেশি। অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনার কারনে বিশ্বব্যাপি লকডাউনের প্রভাবে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হ্রাস পায়। সরকারি মেগা প্রকল্পসমূহের কার্যক্রম পুরোদমে চলমান রয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশী ও বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে গতিসঞ্চার হবে। সঞ্চয়পত্র বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম ও ক্রয়ের উর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার ফলে উহার বিক্রয় গত অর্থবছরে হ্রাস পায়। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণের কারণে সরকারের সুদ ব্যয়ও কমে আসছে। বর্তমান অর্থবছরের সেপ্টেম্বর ২০২০ নাগাদ বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায় সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ৩২.০২ শতাংশ বেড়েছে। আমার বিশ্বাস, সরকারি খাতে অধিক ঋণ প্রবাহ মুদ্রা ও আর্থিক খাত ব্যবস্থাপনায় কোন সমস্যা সৃষ্টি করবে না। সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ ॥ করোনাকালীন সময়ে সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ খাতের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিশেষ করে, দারিদ্র্য ও চরম দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্টভাবে এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাস্তবায়িত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিসমূহ আমাদের অগ্রাধিকারভূক্ত কার্যক্রমের মধ্যে অন্যতম। কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় আমরা সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতাভূক্ত সুবিধাসমূহের ব্যাপ্তি বাড়িয়েছি। যেমন, সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১১২টি উপজেলায় সকল দরিদ্র-প্রবণ ব্যক্তিকে বয়স্ক ভাতার আওতায় আনার লক্ষ্যে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪৪ লক্ষ জন থেকে ৪৯ লক্ষ জনে উন্নীত করা হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে উক্ত খাতের জন্য বাজেটে ২,৯৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সময়ে ১ম কিস্তির বরাদ্দ ৭৩৫ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। একইভাবে সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১১২টি উপজেলায় সকল বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তাদেরকে ভাতার আওতায় আনার লক্ষ্যে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বিধবা ও স্বামী নিগৃহিতা মহিলা ভাতাভোগীর সংখ্যা ১৭ লক্ষ জন থেকে ২০ লক্ষ ৫০ জনে উন্নীত করা হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে উক্ত খাতের জন্য বাজেটে ১,২৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সময়ে ১ম কিস্তির বরাদ্দ ৩০৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ছাড় করা হয়েছে। পুনরায়, দেশের সকল প্রতিবন্ধিকে অন্তর্ভূক্ত করার লক্ষ্যে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধি ভাতাভোগীর সংখ্যা ১৫ লক্ষ ৪৫ হাজার জন থেকে ১৮ লক্ষ জনে উন্নীত করে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে উক্ত খাতে ১,৬২০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সময়ে ১ম কিস্তির বরাদ্দ ৪০৫ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে পল্লী সমাজসেবা কার্যক্রম (আবর্তক ক্ষুদ্রঋণ) খাতে ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
×