ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হাসপাতালে পুনর্ভর্তি ঝুঁকিপূর্ণ

প্রকাশিত: ২৩:৪৮, ২০ জানুয়ারি ২০২১

হাসপাতালে পুনর্ভর্তি ঝুঁকিপূর্ণ

ইংল্যান্ডে হাসপাতাল ত্যাগের ছাড়পত্র পাওয়ার পর অন্তত ৩০ শতাংশ করোনা রোগী পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে যাওয়াদের এক তৃতীয়াংশই পুনরায় ওই সব হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ফলে সেখানে নতুন করে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি দেখা দেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। গত পাঁচ মাসে ইংল্যান্ডের হাসপাতাল ও করোনা রোগীদের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে নতুন এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই সব রোগীদের কারণে হাসপাতাল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এদিকে করোনা টিকার বিতরণ নিয়ে বিশ্ব ‘বিপর্যয়কর নৈতিক পরাজয়ের’ দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে বলে মন্ত্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস। তিনি বিভিন্ন দেশ ও টিকা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে বিশ্বব্যাপী আরও সুষ্ঠুভাবে টিকা বিতরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে কোভিড-১৯ বিষয়ে বারবার সতর্ক করার পরও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার আর জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর ধীর এবং অদক্ষ সাড়াদানে করোনাভাইরাস সঙ্কট কীভাবে একটি বৈশ্বিক ব্যর্থতার নজির হয়ে উঠেছে, সেই চিত্র এসেছে ডব্লিউএইচওর একটি প্রতিবেদনে। গার্ডিয়ান, বিবিসি ও রয়টার্স। ক্যামব্রিজ বিশ^বিদ্যালয়ের ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ড. শার্লট সামারস বলেন, ‘করোনায় মারা যাওয়া লোকদের নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। তবে মৃত্যুর হিসাব রাখাটাই মুখ্য নয়’। তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা জনসাধারণের জন্য হুমকি তৈরি করে; বিশেষ করে, তরুণদের জন্য। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, আমাদের এখনও অনেক কিছু করার বাকি রয়েছে।’ শার্লট নতুন এই গবেষণাকর্মটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। এদিকে বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সুষ্ঠুভাবে টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি নিয়ে গড়ে ওঠা জোট কোভ্যাক্স আগামী মাস থেকে টিকা সরবরাহ করবে বলে জানা গেছে। ‘গ্লোবাল এ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস এ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (গ্যাভি) এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপ্রেয়ার্ডনেস ইনোভেশনস (সিইপিআই) এর নেতৃত্বাধীন এই জোট নতুন বছরে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ৯২টি দেশে এক শ’ ৩০ কোটি ডোজ টিকা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে। এরই মধ্যে তারা দুই শ’ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে। অন্যদিকে মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় জরুরী পরিস্থিতির জন্য ডব্লিউএইচওকে প্রস্তুত করতে নানা রকম কমিটি, টাস্কফোর্স আর উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল কাজ করলেও কাক্সিক্ষত পরিবর্তন আসেনি। ফলে যখন কোভিড-১৯ এলো, তখন পুরো বিশ্ব সেই বিপদের সামনে উন্মুক্ত অবস্থায় ছিল বলে মনে করছে প্যানেল। আবার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যখন স্পষ্ট হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন, বহু দেশ তা সময়মত আমলে না নেয়ায় পরিস্থিতি যে আরও জটিল হয়েছে, সে কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি প্যানেলের তৈরি করা এই অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন দেখিয়েছে, ধারণার ভুল, পরিকল্পনার ত্রুটি এবং পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব- এমনকি খোদ ডব্লিউএইচওর ভুল পদক্ষেপ কীভাবে মহামারীর বিস্তারিত ঠেকানোর চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছে, কেড়ে নিয়েছে ২০ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ। মহামারী মোকাবেলার প্রস্তুতি ও সাড়াদান বিষয়ে সংস্কারের লক্ষ্য নিয়ে গঠিত এই স্বাধীন প্যানেল তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ‘সামগ্রিকভাবে আমরা ব্যর্থ হয়েছি, মানুষের জন্য একটি সুরক্ষা বলয় তৈরি করার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে চেষ্টা করতে পারিনি’। অনেক দেশে পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী না পাওয়া এবং বড় পরিসরে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করতে না পারার মতো ব্যর্থতাগুলো বছরজুড়ে চলা করোনাভাইরাসের মহামারীর শুরুর দিকেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। ডব্লিউএইচও প্যানেলের প্রতিবেদন বলছে, এই সঙ্কট উত্তরণে নেতৃত্ব দেয়ার, মানুষকে সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব যাদের ওপর ছিল, তারা বার বার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
×