ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

’২০ সালে দেড় হাজারেরও বেশি ঘটনা ঘটেছে

সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হলেও ধর্ষণ নির্যাতন থামছে না

প্রকাশিত: ২২:৫১, ২০ জানুয়ারি ২০২১

সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হলেও ধর্ষণ নির্যাতন থামছে না

শংকর কুমার দে ॥ দেশে আন্দোলন, প্রতিবাদ, সমাবেশের দাবি অনুযায়ী ধর্ষণ-নির্যাতনের শাস্তি বেড়েছে। কিন্তু ধর্ষণ-নির্যাতন, পাশবিকতা কমছে না। দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪ নারী ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। দেশে গত চব্বিশ ঘণ্টায় অন্তত চার নারী, দুই ছাত্রীসহ ছয় নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। গত বছর ২০২০ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছে দেড় হাজারের বেশি। ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় গত বছর শাস্তি বৃদ্ধি করে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড করেছে সরকার। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার ও শাস্তি দানের ঘটনাও ঘটছে। এরপরও বিকৃত মানসিকতায় জৈবিক চাহিদা মিটাতে পাশবিক কায়দায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটছেই। পুলিশ, সরকারী-বেসরকারী পরিসংখ্যানে এই চিত্র ফুটে উঠেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুরে গত বছর অক্টোবরে গৃহবধূকে নির্যাতন করে বিবস্ত্র অবস্থায় ভিডিও করে তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেয়ার ঘটনার আবারও পুনরাবৃত্তি ঘটেছে মাত্র ৪ মাসের ব্যাবধানে চলতি বছরের শুরুতেই। গত বছরের ওই বিবস্ত্র নারীর ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল দেশব্যাপী। আবারও মাত্র চার মাসের ব্যাবধানে সেই নেয়াখালীর হাতিয়ায় আরেক নারীকে নির্যাতন করে বিবস্ত্র অবস্থায় ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটনা ঘটানো হয়েছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকাসহ চার জেলায় দুই গৃহবধূ ও দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। নোয়াখালীর হাতিয়া ছাড়াও রাজধানীর খিলগাঁওয়ে এক নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। যশোর জেলার ঝিকরগাছা থেকে এক স্কুলছাত্রীকে অপহরণের পর ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের অভিযোগে ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর মা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। ময়মনসিংহ ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় নবম শ্রেণীর এক স্কুলছাত্রীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করার অভিযোগে ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে ভুক্তভোগীর মা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই সন্তানের মা এক গৃহবধূকে ভয়াবহ নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে চাচার বিরুদ্ধে। পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ তিন সন্তানের জননীকে (৪৫) গণধর্ষণের অভিযোগ থানায় তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী বাদী নিজেই। গত বছর ২০২০ সালের শুরুতেই রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় ধর্ষণের শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। এ ঘটনার পর দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। রাস্তায় নেমে আসে ছাত্র-শিক্ষকসহ সচেতন মহল। মাস দুয়েকের মাথায় দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শুরু হয়। এতে স্থবির হয়ে পড়ে পুরো দেশ। কিন্তু তারপরও নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা কমেনি, বরং মাসের পর মাস ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন ও নিপীড়নের সংখ্যা বেড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে এক গৃহবধূকে স্বামীর সামনে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন কয়েকজন ছাত্র। ওই ঘটনার ক’দিন পর ৪ অক্টোবর নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় এক গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে একদল যুবকের পাশবিক কায়দায় নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় ওঠার পর ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর এ্যাকশনে যায় সরকার। ধর্ষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আইন পাস করা হয় জাতীয় সংসদে। ধর্ষণের শাস্তি বেড়েছে, কিন্তু গত বছরের শুরুতেই যেমন রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় তেমনি চলতি বছরের শুরুতেই রাজধানীর কলাবাগানে ইংলিশ মিডিয়ামের এক ছাত্রী ধর্ষণের পর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আবারও তোলপাড় শুরু হয়। গত বছরের শুরুর সঙ্গে চলতি বছরের শুরুর ধারাবাহিকতার যেমন এক অদ্ভুত মিল। গত ৭ জানুয়ারিতে রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় ‘ও’ লেভেল পড়ুয়া এক কিশোরীকে হত্যা করা হয়েছে। নিহত কিশোরীর নাম আনুশকাহ নূর আমিন (১৮)। সে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল মাস্টার মাইন্ডর ছাত্রী। এ ঘটনায় মেয়েটির বন্ধু দিহানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আরও তিন বন্ধুকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। বন্ধু দিহান আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়ার পর কারগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড আইন পাস করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশের কোথাও না কোথাও প্রতিদিনই ধর্ষণকারীরা গ্রেফতার হচ্ছে, মামলা দায়ের, আসামি রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ, আদালত কর্তৃক শাস্তি প্রদানসহ আইনী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এরপরও ধর্ষণ কমছে না, বরং বেড়েই চলেছে।
×