ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রায় সবাই স্কুল খোলার পক্ষে

প্রকাশিত: ২২:৫০, ২০ জানুয়ারি ২০২১

প্রায় সবাই স্কুল খোলার পক্ষে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনার কারণে দীর্ঘ বন্ধের প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী দ্রুত স্কুলে ফিরতে চায়। ৭৬ শতাংশ অভিভাবক, ৭৩ শতাংশ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, ৮০ শতাংশ এনজিও কর্মকর্তা স্কুল খুলে দেয়ার পক্ষে। তবে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে কার্যক্রম চালানোর পক্ষে সবাই। অধিকাংশ শিক্ষার্থী ও শিক্ষা কর্মকর্তা সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। ৮২ শতাংশ শিক্ষক স্কুল খোলার জন্য স্বাস্থ্যবিধি-মাস্ক ব্যবহার, স্যানিটাইজার ও সামাজিক দূরুত্ব মানা নিশ্চিত করতে বলেছেন। শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার জোট গণসাক্ষরতা অভিযান পরিচালিত ‘এডুকেশন ওয়াচ’ এর গবেষণা প্রতিবেদনে এমন চিত্রই উঠে এসেছে। মঙ্গলবার ভার্চুয়ালি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার গাইডলাইন তৈরি করে ধাপে ধাপে প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সুপারিশ করেছেন। তারা বলেছেন, নির্দিষ্ট কোন দিনক্ষণ নয়। ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চে নয়, করোনার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় খুলে দেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথমে মাধ্যমিক, তারপর চতুর্থ-পঞ্চম, পরে আরও নিচের স্তুরের ক্লাসে খুলে দেয়া যেতে পারে। এলাকা হিসেবে প্রথমে যেসব জেলা বা উপজেলায় করোনার সংক্রমণ কম সেসব এলাকাকে প্রাধান্য দেয়া। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে স্বাস্থ্যবিধি, স্যানিটেশন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারকে এখনই একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে হবে। অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, প্রধান গবেষক ড. মনজুর আহমেদ, পরিসংখ্যান গবেষক ড. সৈয়দ শাহাদাৎ হোসেন, গবেষক মোস্তাফিজুর রহমান তাদের নতুন গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। খুলে দেয়ার পক্ষে অধিকাংশই, তবে করণীয় ॥ গণসাক্ষরতা অভিযানের গবেষণায় বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষা কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। এরমধ্যে ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী দ্রুত ক্লাসে ফিরে আসতে চায়। অন্যদিকে ৭৬ শতাংশ অভিভাবক, ৭৩ শতাংশ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, ৮০ শতাংশ এনজিও কর্মকর্তা স্কুল খুলে দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে প্রাথমিক স্কুল খোলার ক্ষেত্রে ৫৮ শতাংশ শিক্ষক ও ৫২ শতাংশ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। ৮২ শতাংশ শিক্ষক স্কুল খুলে দেয়ার আগে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি-মাস্ক ব্যবহার, স্যানিটাইজার ও সামাজিক দূরত্ব বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। অনলাইন পাঠদানে ৬৯ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেনি ॥ করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় দূর-শিক্ষণের (সংসদ টিভি, অনলাইন, রেডিও ও মোবাইল ফোন) মাধ্যমে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছে সরকার। তবে সেটি সফলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অনেকেই। তাছাড়া বেসরকারী বিভিন্ন গবেষণায়ও বিষয়টি উঠে এসেছে। ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সুপারিশ ॥ শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার একটি গাইডলাইন তৈরি করে ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সুপারিশ করেছে গণসাক্ষরতা অভিযান। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এলাকা হিসেবে প্রথমে যেসব জেলা বা উপজেলায় করোনার সংক্রমণ কম সেসব এলাকাকে প্রাধান্য দেয়া। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার আগে স্বাস্থ্যবিধি, স্যানিটেশন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারকে এখনই একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করতে হবে। সংস্থাটি ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে বলছে, মহানগরের বাইরে গ্রামীণ এলাকার স্কুলগুলোর খুলে দেয়া যেতে পারে। মার্চ মাসে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বিভাগীয় পর্যায়ের মহানগরের স্কুলগুলো ধাপে ধাপে খুলে দেয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথমে নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলো খুলে দেয়ার পর প্রাথমিকের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণী খোলা যেতে পারে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে নিচের ক্লাসগুলো খুলে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর স্বাস্থ্য সুরক্ষার শর্তগুলো যেমন- স্কুলে শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের মাস্ক পরা, স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াস, টয়লেট, ক্লাসরুম, বেঞ্চ স্যানিটাইজ ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। প্রতিটি ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখতে প্রতিটি ক্লাসে একাধিক শিফট করা বা বিকল্প দিনে ক্লাসে উপস্থিতি বা উভয়ই বিবেচনা করা যেতে পারে। করোনায় শিক্ষায় ক্ষতি পুনরুদ্ধারে ১২ সুপারিশ ॥ করোনায় প্রায় এক বছর শিক্ষায় যে ক্ষতি হয়েছে তা পুররুদ্ধারের জন্য ৫ দফা সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। এগুলো হলো- শিক্ষা ক্ষতি পুনরুদ্ধারের জন্য আগামী দুই বছরের পাঠ্যক্রম সংক্ষিপ্ত করে মূল দক্ষতার বিষয়গুলোর ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া। প্রাথমিকে বাংলা ও গণিত এবং মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য বাংলা, ইংরেজী, গণিত, বিজ্ঞান বিষয়ের ওপর জোর দেয়া। পরীক্ষার জন্য সময় কমিয়ে ক্লাসরুমে বেশি সময় দেয়া, পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাদ দিয়ে, সংক্ষিপ্তভাবে মূল বিষয়গুলোর ওপর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়া। স্কুল পর্যায়ে পরীক্ষার সংখ্যা কমিয়ে আনা, স্কুলে ছুটি কমিয়ে আনা, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা এবং শনিবার বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অন-লাইন/ অফ-লাইন ডিজিটাল/দূর-শিক্ষণের একটি কমন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেতে পারে। যাতে শিক্ষক,শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম, পাঠ ও দূর-শিক্ষণের পাঠের লিংক প্রদান করে সহায়তা করা যেতে পারে এবং শিক্ষকদের সহায়তা করার জন্য শিক্ষাসহায়ক নিয়োগ দেয়া যেতে পারে শিক্ষা এনজিওগুলোর সহায়তায়। এজন্য অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে।
×