ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামীলীগ নেতা বিপু মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ১৯ জানুয়ারি ২০২১

আওয়ামীলীগ নেতা বিপু মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুলিশ নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে সারা শরীর আঘাত চিহ্ন বহন করে আওয়ামীলীগ নেতা এসএম মাহমুদ হাসান বিপু (৪৭) এখনও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসিইউতে মৃত্যু সঙ্গে লড়ছে। তিনি যশোর পৌর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক। তুচ্ছ ঘটনায় গত ১১ জানুয়ারি যশোর শহর শহীদ মিনার এলাকায় পুলিশ সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে ১৯ ঘণ্টা আটকে রাখে। হাসপাতালে বিছানায় যন্ত্রনায় কাতর আওয়ামীলীগ নেতা মাহমুদ হাসান বিপু করুন কণ্ঠে জানান, হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে চোখ বেঁধে পুলিশ তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করেছে। এদিকে পুলিশ সদর দফতর এ ঘটনায় এডিশন্যাল আইজি দিদার আহমেদ প্রধান করে দুই সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করেছে। হাসপাতালে গুরুতর আহত বিপু ছোট ভাই মাহবুব হাসান তুহিন জনকণ্ঠকে জানান, পুলিশের নির্যাতনে শিকার গুরুতর আহত আওয়ামীলীগের নিবেদিত প্রাণ বড় ভাই মাহমুদ হাসান বিপু গত ১৩ জানুয়ারী তড়িঘড়ি করে হেলিকপ্টারে করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসিইউতে ভর্তি করেন। সারা শরীরের মারধরের ক্ষত চিহ্ন বিপু আইসিইতে চিকিৎসা নিচ্ছে। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া ও কথা বলতে পারছে না। আল্লাহ অশেষ রহমতে বিপু ভাই বেঁচে আছে। তুহিন জানান, এ ঘটনায় পুলিশের তদন্ত দলের প্রধান এ্যাডিশনাল আইজি দিদার আহমেদ সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বড় ভাই বিপুকে দেখে গেছে। তদন্ত টিমের প্রধান তার শরীরের খোঁজ খবর নেন। তিনি ঘটনার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তার শরীরে নির্যাতনের ক্ষত চিহ্ন দেখেনি তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এদিকে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে যশোর-২ আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ডাঃ নাসিরউদ্দিন ও বিকেল ৩টায় আওয়ামীলীগের সংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজ্জামেল হাসপাতালে এসে গুরুতর অসুস্থ্য আওয়ামীলীগ নেতা বিপুকে দেখে যান। তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। হাসপাতালে আহত যশোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহমুদ হাসান বিপু জানান, ১১ জানুয়ারি শহীদ মিনার এলাকায় সাদা পোশাকে থাকা পুলিশ সদস্য নারী নিয়ে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় বসেছিলেন। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন যুবক তাদের মারপিট করে। হট্টগোল দেখে পাশের শেখ আবু নাসের ক্লাব থেকে তিনি এগিয়ে যান। তিনি বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। তিনি মারপিটে জড়িত নন। কিন্তু পুলিশ তাকে রাত পৌনে ৯টার দিকে তুলে নিয়ে যায়। বিপু অভিযোগ করেন, পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে পুলিশ লাইনে আটকে রেখে রাতভর বেধড়ক মারপিট করে। তার হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে চোখ বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করে। এতে তার সারা শরীরে কালশিটে পড়ে যায়, দুই পা ফেটে যায়। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রব্বানী এই নির্যাতন চালিয়েছে। চাপের মুখে ১২ জানুয়ারি বিকেলে পুলিশ তাকে মুক্তি দেয়। মুক্তির পর তাতে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। ১৩ জানুয়ারি বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারযোগে তাকে ঢাকায় নেয়া হয়েছে। এরপর থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছেন। হাসপাতালের বেডের পাশে বিপুর ছোট ভাই মাহমুব হাসান তুহিন জানান, যারা আমার ভাইকে বিপুকে মারধর করেছে। সেই নির্যাতনকারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম রব্বানীসহ জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার দাবী করছি। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানান, মাহমুদ হাসান বিপু নব্বই দশক থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত। বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সময় তিনি জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর জেলা ছাত্রলীগের দফতর সম্পাদক এবং সর্বশেষ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় আন্দোলন, কর্মসূচির অগ্রভাগে ছিলেন। সর্বশেষ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে যশোরে বিএনপি জামায়াতের বিরুদ্ধে রুখে দিতে রাজপথে অগ্রসেনা ছিলেন মাহমুদ হাসান বিপু। সেই বিপুর এই নির্যাতনের ঘটনায় সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নিয়ামতউল্লাহ বলেন, রাজপথের ত্যাগী নেতাদের যদি এমন পুলিশি নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তাহলে সাধারণ মানুষের কি অবস্থা হতে পারে, তা ভাবলে গা শিউরে ওঠে।
×