ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হিমালয় থেকে ঢুকছে বরফ বাতাস॥ নীলফামারীতে কনকনে শীত

প্রকাশিত: ১৩:৪৮, ১৯ জানুয়ারি ২০২১

হিমালয় থেকে ঢুকছে বরফ বাতাস॥ নীলফামারীতে কনকনে শীত

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ নীলফামারী সহ উত্তরাঞ্চলের জুড়ে ঘনকুয়াশা আর হিমালয় থেকে ঢুকছে কনকনে বাতাস। বাতাসে জলীয়বাস্পো থাকায় শীতে কাবু হয়ে পড়েছে জেলার জনজীবন। আজ মঙ্গলবার হিমালয় থেকে ধেয়ে আসা কনকনে বাতাসে জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। উত্তুরী হাওয়ার ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগের দাপট থাকায় জনজীবন কাহিল পড়েছে। মানুষজন গরম কাপড় আর আগুন তাপে দিনাতিপাত করেছে। পাশাপাশি কৃষকরা গৃহপালিত গরু ছাগলের গায়েও চাপিয়ে দিয়েছে চটের বস্তা। নীলফামারীতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। মানুষজনের পাশাপাশি ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে গবাদিপশু ও প্রাণিকুলেও। জেলা শহরের ডালপট্টি সড়কের বড় বাজার রিকশাস্ট্যান্ডের ভ্যানচালক জহির উদ্দিনের (৪৫) জানান, গত তিনদিন ধরে ঠান্ডা বাতাসে হাত পা শীতে কনকন করে। ভ্যানের হ্যান্ডেল ধরা যায় না। পেটের দায়ে ভ্যান নিয়ে রাস্তাত গেলেও ভাড়া পাওয়া যায় না। এমন ঠান্ডায় বাঁচি কেমন করি? শহরের বড় বাজার ট্রাফিক মোড়ের জুতার কারিগর (মুচি) বাদল দাস (৩৪) ও রবিদাস (৩৯) বলেন,ঠান্ডায় বসে কাজে করা যায় না। আর হামরাতো হাত গুটি বসি থাকির পাই না। হাতের কামাই দিয়ে সংসার চালাই। গত সাতদিন ধরি ঠান্ডা বাতাসে রাস্তায় মানুষও নাই, কাজ কামও নাই। চারজনের সংসার চালা ভীষণ দায় হইছে। কয়দিন গেলো করোনা আর এখন কনকন শীতে আয় রোজগার বন্ধ। এদিকে শীতজনিত অসুখ হচ্ছে। ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানান রোগ। গত এক সপ্তাহে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৭ জন মারা গেছে। তাদের বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক। বিষয়টি নিশ্চিত করেন মেডিকেলের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. রোস্তম আলী। অপর দিকে গত ৪৮ ঘণ্টায় শীতের কবল থেকে রক্ষা পেতে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে দুই নারী রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা গেছেন। তারা হলেন পীরগাছার মুন্নী বেগম ও লালমনিরহাট সদরের খেমতি বেগম। বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. হামিদুর রহমান পলাশ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডাঃ আলমগীর কবির জানান, নীলফামারী সহ রংপুর অঞ্চলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ চলছে। এ সময় শিশুদের ঘরের বাইরে বের না হওয়ার জন্য মায়েদের বলা হলেও তারা মানছেন না। ফলে শীতজনিত নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। হাসপাতালের আউড ডোরে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকে দীর্ঘ লাইন ধরে শিশুদের নিয়ে মায়েরা আসছেন। শীত থেকে বাঁচতে বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ পুরনো কাপড়ের দোকানে ভিড় করছেন। গ্রামীণ জনপদে লোকজন আগুনের কুন্ডলির সামনে বসে শীত নিবারণ করছেন । জেলার সৈয়দপুর, ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ ও সদরে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় মানুষের কষ্টের সীমা নেই। বিশেষ করে জেলার তিস্তা নদী ও চর এলাকার মানুষেরা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, গত কয়েকদিন ধরে শীতের প্রকোপ বেড়েছে। সরকারী ভাবে প্রাপ্ত ২৯ হাজার ৫০০ কম্বল ইতোমধ্যে বিতরন করা হয়েছে। এ ছাড়া কম্বল ক্রয় করে বিতরনের জন্য জেলার ছয় উপজেলার জন্য ৬ লাখ টাকা করে ৩৬ লাখ ত্রান মন্ত্রনালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ওই টাকায় কম্বল ক্রয় করে বিতরন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
×