ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চসিক নির্বাচন

মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের অবিরাম প্রচার

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ১৯ জানুয়ারি ২০২১

মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের অবিরাম প্রচার

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠানে এখন চলছে নির্বাচন কমিশনের শেষ সময়ের প্রস্তুতি। সোমবার শুরু হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ। এবারের ভোট হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। ফলে কর্মকর্তাদের প্রদান করা হচ্ছে প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ। এদিকে, ভোটের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের প্রচারের ধারক ততই বাড়ছে। নির্ঘুম প্রচারে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী। ঘটছে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে জমা পড়ছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ। প্রার্থীরা উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন ভোটারদের কাছে। নাগরিকদের দৃষ্টি মেয়র পদের প্রতি সর্বাধিক হলেও ভোট জমিয়ে তুলছেন মূলত কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ফলে উত্তাপও তারাই ছড়াচ্ছেন বেশি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি এর মধ্যেই গ্রহণ করেছে পুলিশ প্রশাসন। এখন থেকেই নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে বসে গেছে চেকপোস্ট। ব্যক্তিগত গাড়ি এবং মোটরবাইকের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ভোটে কোন ধরনের সহিংসতা হতে দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)। চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মেয়র প্রার্থীর মধ্যে। তবে জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে কাউন্সিলর পদগুলোতে। কারণ এখানে বড় দুই দল সমর্থিত প্রার্থী থাকলেও রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী, যাদের অন্তত ডজন খানেক সাবেক কাউন্সিলর। অন্যরাও এলাকায় জনপ্রিয়। দলের নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে বারবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হলেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরত রাখা যায়নি। তারা সরে দাঁড়াননি ভোটের লড়াই থেকে। তাদের বক্তব্য- কাউন্সিলর পদ রাজনৈতিক নয়, এই পদে দলীয় প্রতীকও নেই। বরং এই পদে সকলেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। উন্নয়নের ধারা রক্ষায় নৌকায় ভোট চান রেজাউল ॥ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী সোমবার গণসংযোগ চালান সিআরবি (সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং) এলাকায়। গণসংযোগকালে তিনি উন্নয়নের স্বার্থে নৌকা প্রতীককে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান। বক্তব্যে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যার যার অবস্থান থেকে সৎ ও ন্যায়নীতির সঙ্গে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার চট্টগ্রামকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আওয়ামী লীগের বিজয়ের বিকল্প নেই। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আবদুল আহাদের আহ্বানে সিআরবি এলাকা গণসংযোগে অংশ নেন বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার মোঃ সাইফুল ইসলাম মামুন, অগ্রণী ব্যাংক কর্মচারী সংসদের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ পোস্টাল ও ডাক কর্মচারী ইউনিয়ন জিপিও চট্টগ্রামের সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন, রূপালী ব্যাংক কর্মচারী ইউনিয়ন সিবিএর সভাপতি কাজী হাসান মুরাদ, পতেঙ্গা ইস্টার্ন রিফাইনারি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক নাঈম উল করিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মারুফ, জনতা ব্যাংক সিবিএর কার্যকরী সভাপতি আবুল কাশেম, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম, যুব শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক কাজী নজরুল ইসলাম টিটু, সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম দিপু, ওয়াসা সিবিএর মঈন উদ্দিন, বাংলাদেশ রেলওয়ে সদর দফতর পূর্ব শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুজিবুর রহমান, রেলওয়ে কারখানা শাখার সম্পাদক মাধব চন্দ্র মল্লিক প্রমুখ। পর্যটন নগরী গড়ার প্রতিশ্রুতি ডাঃ শাহাদাতের ॥ বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেন এদিন গণসংযোগ চালান মহানগরীর শুলকবহর ও নাসিরাবাদ ওয়ার্ডে। এ সময় দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে চট্টগ্রামের মানুষের জন্য রাজনীতি করছি। মানুষের সুখ-দুঃখ বুঝি। করোনাকালে মানুষের পাশে থেকেছি, এখনও সাহায্য সহায়তা করে যাচ্ছি। ফ্রি ট্রিটমেন্ট দিচ্ছি। মেয়র নির্বাচিত হলে চট্টগ্রামকে পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলব। এই চট্টগ্রামকে পর্যটন নগর হিসেবে গড়ে তুলে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেব। চট্টগ্রাম পর্যটননির্ভর একটি বিভাগ। এখানে সি-বিচ আছে, ফয়’স লেক, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটি আছে। এগুলোকে কাজে লাগিয়ে খুব সহজে পর্যটন নগর গড়ে তোলা যায়। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম পর্যটন নগরী হলে দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পাবে। উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছতে চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে কল্পনাও করা যায় না। মেয়র নির্বাচিত হলে সচেতন নাগরিকদের পরামর্শকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষাবান্ধব নগরী গড়ে তুলব। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, চাকসু ভিপি নাজিম উদ্দীন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস কে খোদা তোতন, কাজী বেলাল উদ্দীন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, সদস্য হারুন জামান, আশরাফ চৌধুরী, মোঃ কামরুল ইসলাম, উত্তর জেলা বিএনপি নেতা এম এ হালিম, জসিম উদ্দীন সিকদার প্রমুখ। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু ॥ চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন পরিচালনায় ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে সোমবার। আগামী ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৯টি ভেন্যুতে এই প্রশিক্ষণ চলবে। এতে প্রশিক্ষণ লাভ করছেন প্রায় ১৬ হাজার কর্মকর্তা। এরমধ্যে রয়েছেন ৭৩৫ জন প্রিসাইডিং অফিসার, ৪৮৮৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং ৯৭৭২ জন পোলিং অফিসার। ভোটগ্রহণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ১১ হাজার ইভিএম। প্রতিটি বুথে দুটি করে ইভিএম প্রদান করা হচ্ছে। কোন ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি ঘটলে যেন ভোটগ্রহণ ব্যাহত না হয় সেজন্য বাড়তি মেশিনও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ১৪টি ওয়ার্ড ॥ নির্বাচন কমিশন কোন কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ না করলেও নানা কারণে ১৪টি ওয়ার্ডকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছে। কারণ এ ওয়ার্ডগুলোতে রয়েছে দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থীও। এরমধ্যে ভোটের প্রচারে বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘাতও হয়েছে। যে ওয়ার্ডগুলোও ওপর সবচেয়ে বেশি নজর রাখা হচ্ছে সেগুলো হচ্ছে পাহাড়তলী, জালালাবাদ, কাট্টলী, সরাইপাড়া, লালখান বাজার, পাঠানটুলী, উত্তর হালিশহর, মোগলটুলী, পূর্ব মাদারবাড়ি, আলকরণ, ফিরিঙ্গীবাজার এবং পাথরঘাটা। এগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাও অপেক্ষাকৃত বেশি জোরদার থাকবে। ভোটগ্রহণ স্থগিত একটি ওয়ার্ডে ॥ চসিক নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও শেষ সময়ে এসে একটি ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখতে হচ্ছে। ওয়ার্ডটি হলো ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ড। সোমবার মারা যান এ ওয়ার্ডের প্রার্থী সাবেক কাউন্সিলর তারেক সোলায়মান সেলিম। রিটার্নিং অফিসার ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ হাসানুজ্জামান এ প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, প্রার্থীর মৃত্যুর বিষয়টি কমিশনকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী ভোটের আগে কোন প্রার্থীর মৃত্যু ঘটলে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
×