ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বোটানিক্যাল গার্ডেন ও জাতীয় চিড়িয়াখানা ভয়ঙ্কর প্রতারক ও ছিনতাই চক্র

প্রকাশিত: ১৮:০০, ১৮ জানুয়ারি ২০২১

বোটানিক্যাল গার্ডেন ও জাতীয় চিড়িয়াখানা ভয়ঙ্কর প্রতারক ও ছিনতাই চক্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান (বোটানিক্যাল গার্ডেন) ও জাতীয় চিড়িয়াখানা ঘিরে গড়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর প্রতারক ও ছিনতাই চক্র। এরা নিজেদেরকে কখনও পুলিশ। কখনও সংবাদিক পরিচয় দিয়ে সেখানকার আগত দর্শনার্থীদের ব্ল্যাকমেইল ও চাদঁবাজি করে। এরকমই একটি চক্রের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বোটানিক্যাল গার্ডেন কর্তৃপক্ষ। এদের এক সদস্যকে হাতে-নাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহ আলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান জানান, জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ একজন চাঁদাবাজকে আটক করে মামলা দিয়েছে। আমরা মামলা তদন্ত করছি। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত হয়েছে। জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেন, চক্রটি নিজেদের পুলিশ ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে উদ্যানে আসা আগত দর্শনার্থীদের ব্ল্যাকমেইল ও চাঁদাবাজি করে। চাঁদা না পেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি ভাইরাল করে দেয়া বা থানায় নিয়ে যাওয়ার হুমকিও দেয় তারা। চক্রটির ভয়ে সাধারণ দর্শনার্থীদের পাশাপাশি আতঙ্কে আছেন তারা। চক্রটি চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ইউটিউব চ্যানেলসহ বিভিন্ন কথিত অনলাইনে মনগড়া সংবাদ ছড়িয়ে সামাজিকভাবে হেয় করার হুমকি দিয়ে আসছে। গত ১৪ জানুয়ারি জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের এক দর্শনার্থীকে এরকম অপদস্থ করে চাদাঁ আদায় করে। এটি জানাজানি হলে এই প্রতারক ও চাঁদাবাজ চক্রের একজনকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশের কাছে সপোর্দ করা হয়। এ ঘটনায় জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের রেঞ্জ কর্মকর্তা (পূর্ব) মজিবুর রহমান বাদী হয়ে ডিএমপির শাহ আলী থানায় চক্রের ৭ সদস্যকে আসামি করে একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামিরা হচ্ছে, দৈনিক ভোরের আলোর সাংবাদিক পরিচয় দেয়া জাহিদুল ইসলাম ওরফে সোহাগ, দৈনিক খবর বাংলাদেশের ক্রাইম রিপোর্টার পরিচয় দেয়া এরশাদ হোসেন, দৈনিক ভোরের আলোর স্টাফ রিপোর্টার পরিচয় দেয়া লিটন, দৈনিক খবর বাংলাদেশের ক্রাইম রিপোর্টার পরিচয় দেয়া রেজাউল করিম, এশিয়ান টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান পরিচয় দেয়া আলতাফ, এশিয়ান টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান পরিচয়ধারী জাকির ও দৈনিক খবর বাংলাদেশের ক্যামেরাম্যান পরিচয়ধারী শুশীল। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) আনুমানিক ২টা ২৫ মিনিটের দিকে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের ভেতরে মাধবী রেস্ট কর্নারের পিছনে পাকা বেঞ্চে বসে গল্প করছিল এক যুবক ও তার বান্ধবী। এ সময় সাংবাদিক পরিচয় দেয়া জাহিদুল ইসলামসহ ৬ জন ব্যক্তি ক্যামেরাসহ মোটরসাইকেল নিয়ে ভিকটিমদের কাছে এসে দাঁড়ায়। তারা তাদের এক জায়গায় দাঁড়িয়ে রেখে মোবাইল ফোনের ছবি তুলতে শুরু করে। আসামিদের মাঝে লম্বা করে একজনকে পুলিশ এসআই পরিচয় করিয়ে দিয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, তাকে টাকা দিতে হবে। না হলে বিপদে পড়তে হবে। এমনকি মামলা দিয়ে হাজতে নিয়ে যাবে। ভিকটিম টাকা না দিতে চাইলে ছবিগুলো ভাইরাল করে দেবে বলে হুমকি দেয়। পরবর্তীতে ভিকটিমরা ২০০ টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করে। এক পর্যায়ে ৩০০ টাকা নিতে রাজি হয় সাংবাদিক পরিচয় দেয়া চাঁদাবাজরা। ৩০০ টাকা হাতে নিয়ে তাদের আবারও হুমকি দেয়। ভিকটিমরা ভয় পেয়ে বিষয়টা জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের দারোয়ানকে জানায়, দারোয়ান তাৎক্ষণিক কর্তৃপক্ষকে অবগত করে। পরে কর্তৃপক্ষ ভিকটিমদের সঙ্গে নিয়ে ওই প্রতারকদের একজনকে ধরে ফেলেন। বাকিরা পালিয়ে যায়। আটককৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে, তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত ওই ব্যক্তি জানান, এই এলাকার দৈনিক খবর বাংলাদেশের সম্পাদক পরিচয়ধারী জাকির হোসেন এবং রিপোর্টার পরিচয়ধারী শহীদ এনামুল হক ইমন, সংবাদ প্রতিদিনের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে পরিচয় দেয়া আলাউদ্দিনসহ অনেকেই জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান, জাতীয় চিড়িয়াখানা প্রবেশ করে মাদক সেবন করে ও বিক্রি করে। তারা দর্শনার্থীদেরও ব্ল্যাকমেইল করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহ আলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান বলেন, জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ একজন চাঁদাবাজকে আটক করে মামলা দিয়েছে। মামলা তদন্ত করা হচ্ছে। আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
×