ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রেমিটেন্স প্রবাহ ধরে রাখতে প্রণোদনা বাড়ানোর পরামর্শ

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ১৮ জানুয়ারি ২০২১

রেমিটেন্স প্রবাহ ধরে রাখতে প্রণোদনা বাড়ানোর পরামর্শ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পরপরই বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের এক গবেষণায় বাংলাদেশের রেমিটেন্স ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে উল্টো পরিস্থিতি দেখা গেছে। ২০১৯ সালের স্বাভাবিক সময়ে প্রবাসীরা যে রেমিটেন্স প্রেরণ করেছিল মহামারীর সময়ে সেই প্রবাহ উল্টো ৩৮ শতাংশ বেড়ে গেছে। এজন্য টেকসই রেমিটেন্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বড় পরিসরে বিদেশ যেতে আগ্রহীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উন্নত প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। আগামীতে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে প্রণোদনাও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা। রবিবার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘সাম্প্রতিক প্রবাসী আয়-রেমিটেন্স প্রবাহ: এত টাকা আসছে কোথা থেকে?’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। আলোচনায় অংশ নিয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, সরকার প্রবাসীদের দেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে যে দুই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে সম্প্রতি তার কারণে বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠানো ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। গত ছয় মাসেই প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। প্রণোদনা আরেকটু বাড়ানো গেলে এই প্রবৃদ্ধি আরও টেকসই হবে। চট্টগ্রামের এই সংসদ সদস্য মনে করেন, চলমান ব্যবস্থায় প্রণোদনা দিয়ে পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রবৃদ্ধি টেকসই হতে পারে। কিন্তু এরপর অবশ্যই এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই প্রবাসীদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই বলে জানান তিনি। প্রণোদনার মাধ্যমে চূড়ান্ত টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে না। এজন্য অবশ্যই প্রবাসীদের জন্য সরকারকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দক্ষতা অর্জন করার প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। যে লোক যে দেশে যেতে চায় সেই দেশের সংস্কৃতি, ভাষা এবং সংশ্লিষ্ট কাজের বিষয়ে তাকে দক্ষ করার পর পাঠাতে পারলে তার বেতন তুলনামূলক বেশি হওয়ার পাশাপাশি তার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরতে পারবেন। আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রবাসীদের কল্যাণে ব্যাপকভাবে গবেষণার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এ সভাপতি প্রবাসীদের জন্য করোনাভাইরাসের টিকা নিশ্চিত করার ওপরও জোর দেন। এর আগে মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পরপরই বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের এক গবেষণায় বাংলাদেশের রেমিটেন্স ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে উল্টো পরিস্থিতি দেখা গেছে। ২০১৯ সালের স্বাভাবিক সময়ে প্রবাসীরা যে রেমিটেন্স প্রেরণ করেছিল মহামারীর সময়ে সেই প্রবাহ উল্টো ৩৮ শতাংশ বেড়ে গেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স ৩০ শতাংশ এসেছে সৌদি আরব থেকে। গত বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে রেমিটেন্স প্রেরণের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ২৮ শতাংশ নিয়ে এবার দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। দুই শতাংশ প্রণোদনা, উৎস না দেখিয়ে দেড় হাজার ডলার বা দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত রেমিটেন্স পাঠানোর যে সুযোগ, গত জুলাই মাস থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার ডলার বা পাঁচ লাখ টাকা করার সিদ্ধান্ত এতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এসময় তিনি মহামারীর কারণে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা কমে যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, গত বছরে যেখানে প্রায় ১৫ লাখ লোক বিদেশ গেছে সেখানে গত ছয় মাসে মাত্র সাত হাজার লোক বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে এখনও রেমিটেন্স প্রবাহ ঠিক থাকলেও আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কমে যাওয়ার আশঙ্কা করেন তিনি। অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে সিপিডি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, সরকার দুই শতাংশ প্রণোদন ঘোষণার পর থেকেই রেমিটেন্স প্রবাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। এখন এই রেমিটেন্স দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টেও বিরাট ভূমিকা রাখছে। এমন পরিস্থিতি এই ইতিবাচক প্রবাহ আরও কিভাবে বাড়ানো যায়, বিদেশ থেকে আরও কিভাবে সম্পদ দেশে আনা যায় তা নিয়ে সমন্বিতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে পর্যালোচনা করে এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করার উদ্যোগ নিতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে রিফিউজি এ্যান্ড মাইগ্রেটিং মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) চেয়ারপার্সন অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, আমাদের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে দেশে এখন প্রবাসীদের পরিবারের মধ্যে ৬১ শতাংশ রেমিটেন্স পাচ্ছে না। রেমিটেন্স আসছে মাত্র ৩১ শতাংশ পরিবারের কাছে। তাই এই পরিসংখ্যানের মধ্যে আবার রেমিটেন্স উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে এটা অসঙ্গতিপূর্ণ। এটা কিভাবে হচ্ছে তা বের করা যাচ্ছে না। সংলাপে অংশ নেয়া সৌদি ফেরত কুমিল্লার শহীদুল ইসলাম বলেন, আমি মনে করি দেশে রেমিটেন্স বৃদ্ধির প্রধান কারণ দুই শতাংশ প্রণোদনা। মহামারীর কারণে হুন্ডিওয়ালারা কিছুটা দুর্বল হলেও সম্প্রতি তারা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা বলছে সরকার যেমন দুই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে, আমরা তা দেব। আমাদের মাধ্যমে টাকা পাঠান। ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রবাসীরা এখনও সেভাবে সেবা পাচ্ছে না। অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অথচ হুন্ডিওয়ালাদের হাতে শুধু টাকা দিলেই হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তিনি সরকারী সেবা বাড়ানোর পরামর্শ দেন। সৌদি প্রবাসী তাজাম্মুল চৌধুরীও একই কথা বলেন। তবে যুক্ত হয়ে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরা জসীম উদ্দিন মহামারীর কারণে দেশে ফিরে এসে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ আনেন।
×