ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-নেপাল অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি

৬২টি পণ্য নিয়ে পর্যালোচনা চলছে

প্রকাশিত: ২৩:১২, ১৮ জানুয়ারি ২০২১

৬২টি পণ্য নিয়ে পর্যালোচনা চলছে

এম শাহজাহান ॥ শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায়ে বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যে সম্ভাব্য অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তিতে এবার ৬২ পণ্য নিয়ে পর্যালোচনা করছে দুই দেশ। অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) আওতায় বাংলাদেশ থেকে নেপালে ৪২টি পণ্য রফতানি হবে। অন্যদিকে হিমালয়কন্যা নেপাল ২০টি পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছে। দেশটি কফি, চা, সিমেন্ট ক্লিংকার, বোতলজাত পানি এবং জুয়েলারির মতো পণ্য রফতানি করতে চায় বাংলাদেশ। অন্যদিকে বাংলাদেশ গার্মেন্টস পণ্য, পাটজাত পণ্য, ব্যাটারি, টয়লেট্রিজ পণ্য, ওষুধ, সিরামিকস ও ইলেক্ট্রনিক্স এবং খাদ্যপণ্য শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা চেয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে নেপালের সঙ্গে পিটিএ চুক্তি করা হবে। শীঘ্রই চুক্তি সংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হচ্ছে। এই চুক্তির ফলে দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে। জানা গেছে, রফতানি বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পিটিএ (প্রিফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট) এবং এফটিএ (ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট) করার জোর তৎপরতা শুরু করেছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় নেপালের সঙ্গে পিটিএ করা হচ্ছে। এর আগে গত ডিসেম্বর মাসে ভুটানের সঙ্গে প্রথম পিটিএ চুক্তি করা হয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে এবার নেপালের সঙ্গে পিটিএ করা হচ্ছে। নেপালের সঙ্গে পিটিএ করার ব্যাপারে সব ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট সরকারের সকল দফতর ও অধিদফতরের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভায় জানানো হয়, বাংলাদেশ নেপালের বাজারের জন্য ৪২টি পণ্যের নাম ও এইচএস কোড সম্বলিত তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নেপালের যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে, নেপাল শুল্কমুক্ত সুবিধায় রফতানির লক্ষ্যে বাংলাদেশের বাজারের জন্য ২০টি পণ্যের তালিকা প্রেরণ করেছে। তবে নেপাল যে ২০টি পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা চেয়েছে তাতে কয়েকটি পণ্য নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছে ট্রেড এ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর। বৈঠকে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ট্রেড এ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অফার লিস্টে যেসব পণ্য অগ্রাধিকার দেয়া উচিত হবে সেসব পণ্যে সম্পূরক শুল্ক আরোপিত হয়নি। দেশীয় শিল্পের স্বার্থের বিষয় বিবেচনায় নেয়ার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়। কৃষিজাত পণ্য, পশমিনা, কফি, সিমেন্ট ক্লিংকার ইত্যাদি বাংলাদেশের অফার লিস্টে রাখা যেতে পারে। ওই বৈঠকে এনবিআর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নেপালের অনুরোধের তালিকায় চা, নুডলস ও পাস্তা, পানি, সিমেন্ট, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, ফুটওয়্যারের পণ্যগুলো দেশে যথেষ্ট পরিমাণ উৎপাদিত হয়। এসব পণ্য হ্রাসকৃত শুল্কহার সুবিধা প্রদান করা হলে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অপরদিকে তালিকায় কার্পেট, পশমিনা, জুতা ও জুয়েলারি উচ্চ রাজস্বযুক্ত পণ্য। এসকল পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়া হলে রাজস্ব আদায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ কারণে গত তিন বছরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের হালনাগাদ তথ্য পর্যবেক্ষণ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরপরই পিটিএ করার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। শীঘ্রই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। বিশ্বের একমাত্র দেশ নেপাল, যার সঙ্গে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য অনুকূলে রয়েছে। এ কারণে পরীক্ষামূলক যেসব দেশের সঙ্গে পিটিএ এবং এফটিএ (মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি) করা হবে তার মধ্যে নেপালকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এছাড়া বিশ্বের আরও ১১টি দেশের সঙ্গে দ্রুত পিটিএ এবং এফটিএ চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, আগামী তিন বছরের মধ্যে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীলের মর্যাদায় যাচ্ছে। এলডিসি হিসেবে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে যেসব শুল্কমুক্ত সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে তা উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পর আর থাকবে না। তবে এফটিএ এবং পিটিএ চুক্তির মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া সম্ভব। এছাড়া ডব্লিউটিও বা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার রুলস অনুযায়ী কিছু সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। আর এ কারণে এলডিসি উত্তরণে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বেশি সংখ্যক দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য ও অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করা। বাংলাদেশ এখন সে পথেই হাঁটছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, ভুটানের পর এবার নেপালের সঙ্গে পিটিএ চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বন্ধুপ্রতিম এ দুটি সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদারের সুযোগ রয়েছে। আর এ কারণে ভুটান ও নেপালের সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব চুক্তি করা হবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং ট্যারিফ কমিশন হিসেব-নিকেশ করে দেখেছে চুক্তির ফলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। এদিকে, নেপালকে ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ। এর বাইরে নেপাল বাংলাদেশের সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উভয় দেশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য সড়ক, নৌ এবং আকাশ পথ চালু করার বিষয়ে কাজ চলছে। এছাড়া বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে নেপালের।
×