নতুন বছরের প্রথম সংসদ অধিবেশন আজ শুরু

সংসদ রিপোর্টার ॥ একাদশ জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশন আজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে। এটি নতুন বছরের প্রথম অধিবেশন। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিকেল সাড়ে ৪টায় অধিবেশন শুরু হবে। বছরের প্রথম অধিবেশন হওয়ায় রেওয়াজ অনুযায়ী আজ সংসদ অধিবেশনে ভাষণ দিবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। রাষ্ট্রপতির ভাষণ ও করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনে রেওয়াজ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ভাষণ দেবেন। ইতোমধ্যে মন্ত্রিসভার বৈঠকে রাষ্ট্রপতির ভাষণের খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ভাষণে সরকারের সাফল্যসহ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা জাতির সামনে তুলে ধরবেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সংসদে ধন্যবাদ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। সেই প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিবেন সরকার ও বিরোধী দলীয় সদস্যরা। আলোচনা শেষে কণ্ঠভোটে প্রস্তাবটি গৃহীত হবে। শুরুরদিন সংসদ অধিবেশন বিকাল সাড়ে ৪টায় শুরু হলেও পরবর্তীতে তা বেলা ১১টায় বসবে। সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনা ছাড়াও অধিবেশনে বেশ কয়েকটি বিল পাসের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া নিয়মিত প্রশ্নোত্তর পর্ব ও অন্যান্য কার্যক্রম থাকবে। তবে অন্যান্য বছর এই অধিবেশনটি দীর্ঘ হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার অধিবেশন সংক্ষিপ্ত হবে। করোনা ঝুঁকির কারণে আগের অধিবেশনের মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পরিচালিত হবে। এরআগে মুজিববর্ষ উপলক্ষে আহূত সংসদের বিশেষ অধিবেশনসহ গত ৪টি অধিবেশন স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালনা করা হয়। প্রতি কার্যদিবসে ৭০-৮০ জন সংসদ সদস্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। করোনা ঝুঁকি এড়াতে মাঝখানে গ্যাপ দিয়ে দিয়ে আসন বিন্যাস করা হয়। সংসদ অধিবেশন চলাকালে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করিয়ে নেয়া হয়। এমনকি অধিবেশনে যোগদানের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যসহ অন্যদের করোনা নেগেটিভ নিশ্চিত করা হয়। সাধারণত বছরের প্রথম অধিবেশন দীর্ঘ হয়। রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর সংসদ সদস্যরা অধিবেশনজুড়ে ওই ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেন। বছরের শুরুর অধিবেশন ৩০ কার্যদিবস পর্যন্ত চলার রেকর্ড রয়েছে। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে এ অধিবেশনও সংক্ষিপ্ত হতে পারে। সংসদ অধিবেশন পরিচালনায় একই পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংসদ পরিচালনার কার্যে নিয়োজিত একাধিক হুইপ ও উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ। তারা জানান. করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারের অধিবেশনও সংক্ষিপ্ত হবে। সেক্ষেত্রে অধিবেশন ১২ থেকে ১৪ কার্যদিবস চলতে পারে। অধিবেশনের প্রথমদিনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের জন্য সাংবাদিকসহ স্বল্পসংখ্যক অতিথির উপস্থিতির সুযোগ রাখা হচ্ছে। অন্য দিনগুলোতে দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ থাকবে। সংসদ সদস্যরাও রোস্টার অনুযায়ী যোগদান করবেন এবং আলোচনায় অংশ নেবেন। সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদের ১১তম অধিবেশনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সংসদ ভবন, সদস্য ভবনসমূহ এবং সংসদ এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, সংসদ এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ, পানি সরবরাহ, লিফট, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সচল রাখা, সংসদ এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি, এসআইএস সিস্টেম সক্রিয় রাখাসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেবেন তাই বাড়তি প্রস্তুতিও রয়েছে। এছাড়া ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে সংসদ চলাকালে সংসদ ভবনের চতুর্দিকের রাস্তা-অলি-গলিসহ সর্বত্র যে কোন ধরনের সভা-সমাবেশ-মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আজ সোমবার সকাল সাড়ে চারটায় অধিবেশন শুরু হয়ে প্রথমে সভাপতিমণ্ডলীর মনোনয়ন এবং শোক প্রস্তাব উত্থাপনের পর রাষ্ট্রপতি সংসদে ভাষণ দেবেন। এরপর অধিবেশন মুলতবি করা হবে। রেওয়াজ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সংসদের উত্তর প্লাজা দিয়ে আইনসভা ভবনে প্রবেশ করবেন যা প্রেসিডেন্টস প্লাজা নামেও পরিচিত। প্রতিবছর ফুল দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। তবে এবার স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার জন্য তা করা হবে না। সংসদ ভবনে প্রবেশ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বিশেষ লিফটে চড়ে সাত তলায় তার চেম্বারে যাবেন। সেখান থেকে অধিবেশন কক্ষে যাবেন। স্পীকর তাকে আমন্ত্রণ জানালে বিউগলে ফ্যানফেয়ার বাজবে। রাষ্ট্রপতি সংসদে ঢুকলে নিয়মানুযায়ী জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হবে। স্পীকারের পাশের চেয়ারে বসবেন রাষ্ট্রপতি। তাকে ভাষণ দেয়ার জন্য অনুরোধ জানানোর পর ডায়াসে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেবেন রাষ্ট্রপ্রধান। মন্ত্রিপরিষদ থেকে ঠিক করে দেয়া ভাষণের সংক্ষিপ্তসার সংসদে পাঠ করবেন রাষ্ট্রপতি। উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদের অধিবেশন শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে পরবর্তী অধিবেশন বসার বাধ্য-বাধকতা রয়েছে। গত ১৯ নবেম্বর সংসদের ১০ অধিবেশন শেষ হয়। গত ৮ নবেম্বর থেকে শুরু হওয়া অধিবেশন ছিল সংসদের বিশেষ অধিবেশন। ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে ওই অধিবেশনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর বিশেষ আলোচনা ও সাধারণ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ওই অধিবেশনের প্রথমদিনেও সাংবাদিকসহ কিছুসংখ্যক অতিথি উপস্থিত ছিলেন।