ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দু হাজার ৭শ’ কোটি টাকার নতুন দুটি প্রণোদনা প্যাকেজ

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ১৮ জানুয়ারি ২০২১

দু হাজার ৭শ’ কোটি টাকার নতুন দুটি প্রণোদনা প্যাকেজ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ক্ষুদ্র কুটির ও মাঝারি শিল্প খাতের গতি সঞ্চারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার নতুন দুটি প্রণোদনা প্যাকেজ কর্মসূচীর অনুমোদন দিয়েছেন। এই কর্মসূচীর আওতায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তার আওতাও সম্প্রারণ করা হবে। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামাল দিতে শীঘ্রই ঘোষিত এ প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন শুরু করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, নতুন অনুমোদিত প্রথম প্যাকেজটির আকার ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যার আওতায় ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প খাত ও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য গৃহীত কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ফাউন্ডেশনকে ৩০০ কোটি টাকা, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থাকে (বিসিক) ১০০ কোটি টাকা এবং জয়িতা ফাউন্ডেশনকে ৫০ কোটি টাকা দেয়া হবে। পাশাপাশি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করতে এনজিও ফাউন্ডেশনকে ৫০ কোটি টাকা, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনকে ৩০০ কোটি টাকা, পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনকে ৩০০ কোটি টাকা, ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে ১০০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডকে ৩০০ কোটি টাকা দেয়া হবে। এছাড়া অনুমোদিত দ্বিতীয় প্যাকেজের আওতায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে দেশের ১৫০টি উপজেলায় দরিদ্র সব বয়স্ক এবং বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা সব নারীকে ভাতার আওতায় আনা হবে। এছাড়া নতুন অনুমোদিত এ দুটিসহ মোট প্রণোদনা প্যাকেজের সংখ্যা হলো ২৩টি, যার মোট আর্থিক পরিমাণ ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকা (জিডিপির ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ)। উল্লেখ্য, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা আনতে প্রণোদনা প্যাকেজের কর্মসূচীতে আরও বরাদ্দ বাড়ানো হবে। এ খাতের উন্নয়নে পর্যায়ক্রমে ১০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের কর্মসূচী গ্রহণ করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ৪ শতাংশ সুদে ঋণ সহায়তা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আসাদুল ইসলাম। সম্প্রতি পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ভূমিকা শীর্ষক একটি ওয়েবিনার সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি জানান, ১০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়া হবে। গত অক্টোবর মাসে এটা নিয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করতে বলা হয়েছিল। ২০ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছিল সেটার ডিসবার্সমেন্টটা ভাল ছিল না। অনেক চাপ প্রয়োগ করেছি, ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটা অনীহাও ছিল। আর একটা পরিস্থিতি তারা ফেস করেছে সেটা হলো তাদের কাছে (ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা) তথ্য ছিল না। এসএমই সেক্টরের গ্রাহকদের সঙ্গে তাদের পরিচিতিটা কম। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আরও জানান, গত তিন মাসে আমরা প্রচুর আলোচনা করেছি বাংলাদেশ ব্যাংক, এসএমই ফাউন্ডেশন, পিকেএসএফের সঙ্গে। বড় এমএফআই (ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা), ক্ষুদ্র এমএফআইগুলোর সঙ্গে আমরা বসেছি। অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটা টিম করে দিয়েছিলাম, আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ডিসেম্বরের মধ্যে এটি (প্রণোদনা প্যাকেজ) ক্যাবিনেটে পাঠাব। ডিসেম্বরের মধ্যে অর্থ বিভাগ তাদের মতামত দিয়ে এটিকে অনুমোদন করে দেয়। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ হাজার কোটি টাকা ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি দেবে, সেখানে সরকার সাবসিডি দেবে। এমন একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। জানা গেছে, করোনার প্রভাব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের (সিএমএসএমই) সক্ষমতা বাড়াতে প্রথম দফায় ২০ হাজার কোটি টাকার ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ঋণ সুবিধা দেয়া হয়। কিন্তু ব্যাংকগুলোর অদক্ষতায় সর্বশেষ হিসেবে গত বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ঋণ বিতরণ হয়েছে মাত্র ৬ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দকৃত ঋণের অর্ধেকও বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। এই সময়ে ঋণের জন্য আবেদন এসেছে ৪৬ হাজার ৫৪৩টি, বিপরীতে ঋণ বিতরণের জন্য ৪১ হাজার ৬৯টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে করে এসএমই খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ সুবিধার বাইরে রয়েছে। প্রসঙ্গত, দেশে সিএসএমই খাতে প্রায় ৮০ লাখ শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর বাইরে নন-ব্যাংকিং চ্যানেলে ছোট ছোট লাখ লাখ ব্যবসা-বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠা রয়েছে। এ কারণে প্রণোদনার সুফল পেতে হলে এসএমই খাতে ঋণপ্রাপ্তির বিষয়টি আরও সহজ করার তাগিদ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে করোনা মোকাবেলায় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও প্রণোদনা প্যাকেজের যাবতীয় দিক নিয়ে অর্থ বিভাগ সম্প্রতি তিনটি মতবিনিময় সভা আয়োজন করে। এ সভাগুলোতে অংশগ্রহণ করেন উর্ধতন সরকারী কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, ব্যাংক, উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন খাতের অংশীজন। সভাগুলোতে করোনা মোকাবেলা করে ক্ষুদ্র শিল্প খাত ও সামাজিক নিরাপত্তার আওতা সম্প্রসারণের জন্য নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা ও তা দ্রুত বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয়।
×