ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি চেয়ে আবেদন

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ১৮ জানুয়ারি ২০২১

বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি চেয়ে আবেদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বঙ্গভ্যাক্সের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বা মানবদেহে প্রয়োগের নীতিগত অনুমোদন চেয়ে বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলে (বিএমআরসি) আবেদন করেছে গ্লোব বায়োটেক। রবিবার দুপুরে আবেদনটি জমা পড়েছে। বিএমআরসির অনুমোদন পেলেই দেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হবে। দেশে আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য দীর্ঘদিন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে গ্লোব বায়োটেক। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে যা গতি পেয়েছে। এর আগে গ্লোবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য তাদের স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর এর নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করতে হয়। এরপর তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। গ্লোব একই সঙ্গে প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে। গ্লোব বায়োটেকের হয়ে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা দলের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল রবিবার বিএমআরসি প্রায় ১০ হাজার পৃষ্ঠার এই আবেদন জমা দেন। বিএমআরসির একজন সহকারী পরিচালক তা গ্রহণ করেন। মানবদেহে বঙ্গভ্যাক্সের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের এই গবেষণায় কাজ করবেন ৫৭ সদস্যের একটি দল। সিআরও লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি গ্লোব বায়োটেকের হয়ে টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কাজটি করবে। এই ট্রায়াল হবে একটি সরকারী হাসপাতালের একটি ইউনিটে। অনুমোদন পাওয়ার পর সেই হাসপাতালের নাম প্রকাশ করা হবে। ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেছেন, ১০০ জনের বেশি মানুষের ওপর এই ট্রায়াল পরিচালনা করা হবে, সেভাবেই প্রটোকল জমা দিয়েছেন তারা। ভ্যাকসিন প্রটোকল জমা দেয়ার সময় গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান মোঃ হারুনুর রশিদ, গ্লোব বায়োটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. কাকন নাগ, আইইডিসিআরের পরিচালক তাহমিনা শিরিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছার এবং গ্লোবের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সিআরও লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ হেলাল উদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ব যেসব টিকা তৈরির কাজ করা হচ্ছে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকাতে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে ৪২ টিকা আর প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অর্থাৎ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের আগের অবস্থাতে রয়েছে ১৫৬ টিকার। এই তালিকাতে বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের নাম রয়েছে। প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষার ফল পাওয়ার পর দেশে বা দেশের বাইরেও কোন কোন দেশে ভ্যাকসিনটির তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাতে হবে। সকল প্রক্রিয়া সফল হলে ভ্যাকসিনটির অনুমোদন নিতে হবে আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে। এরপর বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর অনুমোদন পেলেই ভ্যাকসিনটি মানবদেহে প্রয়োগের অনুমোদন পাওয়া যাবে। তবে এই সকল প্রক্রিয়া শেষ করতে কয়েক মাস সময় প্রয়োজন হবে। গ্লোব বায়োটেকের প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা ড. আসিফ মাহমুদ জানান, তাদের পক্ষে সিআরও লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কাজটি করবে। আর অনুমোদন হলে একটি সরকারী হাসপাতালে এই ট্রায়াল দেবেন। শুরুর দিকে গ্লোবের এই টিকার নাম ব্যানকোভিড থাকলেও সেটি পরিবর্তন করে বঙ্গভ্যাক্স নাম রাখা হয়। প্রটোকল জমা দেয়ার পর ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলেন, গ্লোবের টিকাটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যাওয়ার যোগ্যতা রাখে। সেই জায়গা থেকে আমরা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রটোকল তৈরি করেছি। বিএমআরসির ন্যাশনাল রিসার্চ ইথিকস কমিটি এখন আবেদনটি বিবেচনা করবে। বিএমআরসি নীতিগত সম্মতি দিলে তা যাবে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে। সেখানকার ন্যাশনাল ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এ্যাডভাইজারি কমিটি তখন অনুমোদন দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে। এর আগে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করার জন্য টিকা উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছিল গ্লোবকে। ডাঃ স্বপ্নীল বলেন, ডিজিডিএ অনুমোদন দিলে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করতে পারব। চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর সর্বোচ্চ সাতদিনের মধ্যে আমরা কাজ শুরু করব, আমাদের সে প্রস্তুতি আছে। প্রথমে ১০০ জনের বেশি মানুষের ওপর পরীক্ষা চালানোর বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, ফাইজার, মডার্নার মতো প্রতিষ্ঠানের ট্রায়াল স্যাম্পলও এমন ছিল। আমরা সেসব প্রতিষ্ঠানের সব তথ্য বিবেচনা করে এই সংখ্যা নির্ধারণ করেছি। যাদের কোভিড-১৯ নেগেটিভ থাকবে, কোমবিডিটি থাকবে না, ১৮ বছরের ওপর সুস্থ বাংলাদেশী, তারা এই ট্রায়ালে অংশ নিতে পারবেন। গত বছরের ৩ জুলাই তেজগাঁওয়ে গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে গ্লোব বায়োটেকের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়া হয়। পরে ১০ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করে তাদের ওই সম্ভাব্য টিকা কার্যকর ও সম্পূর্ণ নিরাপদ প্রমাণিত হয়েছে। পরে আইসিডিডিআরবি-এর সঙ্গে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য সমঝোতা স্মারক সই হলেও তা সফল হয়নি।
×