ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

বিজয়ের ইতিহাস মনে রাখার মতো আরও ছবি চাই

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ১৮ জানুয়ারি ২০২১

বিজয়ের ইতিহাস মনে রাখার মতো আরও ছবি চাই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়ের ইতিহাস প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে অধিকহারে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটা কিন্তু ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর বিকৃত করা হয়েছে। কাজেই ইতিহাসটা যেন সবাই জানে। আমরা তো বীরের জাতি। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। কাজেই আমাদের সেই বিজয়ের ইতিহাসটা প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন মনে রাখতে পারে, সেই ধরনের চলচ্চিত্র আরও নির্মাণ হওয়া দরকার। রবিবার গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তথ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত ২০১৯ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শিশুদের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, শিশুদের জন্য এমনভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে, যাতে তারা সেখান থেকে ভবিষ্যত জীবন গড়ার অনুপ্রেরণা পায়। এর মধ্যে দিয়ে কিন্তু একটা শিশু তার জীবনটাকে দেখতে পারবে, জীবনটাকে তৈরি করতে পারবে, বড় হতে পারবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই শিশুদের জন্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা, তার মধ্যে দিয়ে তাদের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো প্রতিফলিত করা, এটাও কিন্তু আমাদের করতে হবে। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই সামাজিক দায়িত্বটুকু পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সিনেমাগুলো সেভাবেই তৈরি করতে হবে যেন পরিবার-পরিজন নিয়ে দেখতে পারে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার অপচেষ্টা হয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান আরও বলেন, আমাদের চলচ্চিত্রে শিল্প ও সংস্কৃতি যেমন থাকবে, তেমনি বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য উপকরণও থাকতে হবে। যাতে আন্তর্জাতিকভাবে সেগুলো গ্রহণযোগ্যতা পায়। পাশাপাশি আমাদের সেই বিজয়ের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আমাদের চেতনা, আমাদের যে আদর্শ, আমাদের নীতি- সেগুলো প্রতিফলিত হওয়াও একান্ত দরকার। ২০১৯ সালে ২৬টি ক্যাটাগরিতে ৩৩ শিল্পী এবং কলাকুশলীকে পুরস্কৃত করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ পুরস্কার বিজয়ীদের মাঝে পদক, রেপ্লিকা, সম্মাননার চেক এবং সনদ বিতরণ করেন। এবার জনপ্রিয় প্রবীণ চলচ্চিত্র অভিনেতা মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা এবং জনপ্রিয় অভিনেত্রী কোহিনুর আক্তার সুচন্দা আজীবন সম্মাননা লাভ করেন। পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে আজীবন সম্মাননা বিজয়ী মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা তাঁর নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান ও তথ্য সচিব খাজা মিয়াও বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, চলচ্চিত্র শিল্পে সংশ্লিষ্ট নবীন-প্রবীণ অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ কলাকুশলীবৃন্দ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসসহ গণভবন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এরপর চলচ্চিত্র অঙ্গনের জনপ্রিয় অভিনেতা, অভিনেত্রী ও দেশের স্বনামধন্য কণ্ঠ ও নৃত্য শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। চলচ্চিত্রকে একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা রাজনীতিবিদরা যত কথাই বলি না কেন একটি নাটক, সিনেমা বা গান বা কবিতা দিয়ে অনেক কথা বলা যায় এবং মানুষের অন্তরে প্রবেশ করা যায়। মনের গহিনে প্রবেশ করা যায়। সেজন্য এর একটা আবেদন রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে চলচ্চিত্র। অথচ এটি কিন্তু দিনে দিনে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া, এই ডিজিটাল যুগে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে না করা হলে এর আকর্ষণ যেমন থাকে না তেমনি বাজারও পাওয়া যায় না। সেজন্যই বিএফডিসিকে উন্নত করতে তাঁর সরকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ঢাকার সন্নিকটে কালিয়াকৈরের কবিরপুরে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ফিল্ম সিটি’ নির্মাণের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, সেখানে আধুনিক সিনেমা তেরি করতে যা যা প্রয়োজন সে ধরনের সব সুবিধা রাখা হচ্ছে, যাতে আমাদের সিনেমা শিল্পটা যেন উপযুক্ত হয়। তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। কেননা, এখন ডিজিটাল যুগ। আমাদের চলচ্চিত্র কেবল দেশে নয় বিদেশেও যাতে যেতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা সেন্সর সংক্রান্ত আইন ও বিধি আধুনিকভাবে তৈরি এবং সেগুলো কঠোরভাবে যেন মানা হয় সেদিকেও বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি। চলচ্চিত্রের উন্নয়নে এক হাজার কোটি টাকার তহবিল তৈরির কথা জানিয়ে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, এখান থেকে স্বল্প সুদে টাকা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা সিনেমা হল বা সিনেপ্লেক্স তৈরি করতে পারবে। যাতে ঐ অঞ্চলের মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থাটা হবে। আর অনেক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। কাজেই সেগুলোকে পুনরায় চালু করা শুধু নয়, এর আধুনিকায়ন করতে হবে। কারণ ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন অনেক উন্নতমানের সিনেমা তৈরি করা যায়। সেদিকেই আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি এবং সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প নষ্ট হয়ে যাক সেটা সরকার কখনও চায় না। এক সময় টেলিভিশন যুগের আবির্ভাবে সিনেমা শিল্প থমকে গেলেও এখন আবার সিনেমার যুগ ফিরে এসেছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানুষ সিনেমা দেখছে। হয়ত হলে যায় না, ঘরে বসে দেখে। কিন্তু হলেও আমাদের মানুষ টানতে হবে। আর মানুষ যাতে আসে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সচেতন করতে দায়িত্ব পালন করায় চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। দেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়ন ও প্রসারে জাতির পিতার নেয়া ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এই শিল্পের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। মহামারীর মধ্যে এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারায় নিজের দুঃখের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো আছি সব সময় আপনাদের পাশে। কারণ আমার বাবার হাতে গড়া এফডিসি। সিনেমা তৈরি করার যে উৎসাহটা, সেটা তিনি দিয়েছিলেন। কাজেই সেদিকটা মাথায় রেখে সব সময় আমি কাজ করি।’ সমাজে শিল্পীদের একটি ‘আলাদা সম্মান আছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি আলোচনা করে দেখব যে অন্তত যারা আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন, তাদের সম্মানটা যেন তারা সব সময় পান, সেই ব্যবস্থাটা করার জন্য যা করণীয়, আমরা করব। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সিনেমা শিল্প অনেক অবদান রাখতে পারে। সেভাবেই আপনারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মানুষকে আরও উদ্বুদ্ধ করা, প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন আমাদের ইতিহাসটা জানতে পারে, বিজয়ের ইতিহাস জানতে পারে এবং মানুষ যেন ভালভাবে জীবনযাপন করতে পাওে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে আপনারা কাজ করবেন। এখন তরুণরা চলচ্চিত্র শিল্পে এগিয়ে আসায় ইতিবাচক পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তো বৃদ্ধ হয়ে গেছি, আজ আছি কাল নেই। কিন্তু আমাদের তরুণ সমাজের যে সিনেমা শিল্পের দিকে তাদের আগ্রহ বেড়েছে, তারা যে এগিয়ে আসছে, আমরা মনে করি এটা ভাল লক্ষণ। শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে জাতির পিতার আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনাও প্রধানমন্ত্রী এ অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট আমাদের জীবনটাকে পাল্টে দিল। তারপর থেকে আর বাংলাদেশের সংস্কৃতি চর্চার সেই গুরুত্বটাই নষ্ট হলো, আদর্শটা নষ্ট হলো। আমরা যে বাঙালী, আমাদের বাঙালীর সংস্কৃতির চিন্তা-চেতনাটাও নষ্ট হতে বসেছিল। এটাই হলো বাস্তবতা। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন করার উদ্যোগের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান আরও বলেন, আমি এই উদ্যোগ নিয়েছি এই কারণে যে, আমি দেখেছি, আমাদের অনেক শিল্পী, যাদেরকে আমি নিজে চিনতাম ভাল করে আর আমাদের বাসায় সব সময় সকলের একটা অবাধ যাতায়াত ছিল। এমনকি ধানমণ্ডি লেকের সামনে যখন শূটিং হতো তখন সবাই আমাদের বাসায় এসেই বসত, চা-পানি খেত, খাবার খেত। আমার মা সবাইকে আপ্যায়ন করতেন। নিজের পরিবারের অনেকে সাংস্কৃতিক জগতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ফলে শিল্পীদের অনেকের দুঃখ, দুর্দশার চিত্র নিজ চোখে দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই কষ্টটা যখন আমি দেখি, আর বিশেষ করে আমার ছোট বোন শেখ রেহানা লন্ডনে থাকে। সে অনলাইনে নিয়মিত পত্রিকা পড়ে, কারো কোন কষ্ট দেখলে সঙ্গে সঙ্গে আমাকে সে খবর পাঠায়। আমি চেষ্টা করি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থাটা নিতে। আমি জানি, যখন আমি আছি, আমি হয়ত সহযোগিতা করে যাচ্ছি, কিন্তু যখন আমি থাকব না, তখন কী হবে? সেই চিন্তা করেই কিন্তু আমি এই চলচ্চিত্র কল্যাণ ট্রাস্টটা গঠন করেছি। এই ট্রাস্টের সুফল যাতে সবাই পায়, সে ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনটি আমরা পাস করব পার্লামেন্টে। এরপর আমরা সরকারের পক্ষ থেকে একটা সিড মানি দেব। আর সেই সঙ্গে আমরা চাইব যে, যারা আছেন চলচ্চিত্রের সঙ্গে তারাও এখানে আরও অর্থের জোগান দেবেন, যাতে প্রত্যেকে এই ট্রাস্ট থেকে যে কোন সময়ে তাদের বিপদে, আপদে অনুদান নিতে পারেন। চিকিৎসা থেকে শুরু করে সব কাজ যাতে করতে পারেন। তেজগাঁও আসনের সংসদ সদস্য থাকার সময় তিনি বিএফডিসির সড়কটি নির্মাণ করেন উল্লেখ করে বলেন, এর কাছেই থাকা কাওরানবাজারের পাইকারি বাজারও ধীরে ধীরে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করবে সরকার। কাছেই থাকা হাতিরঝিলসহ আশপাশের এই এলাকাটাকেও সরকার সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে চায়। এজন্য ৩২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারের বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এই শিল্পের আধুনিকায়নে যা যা দরকার তাঁর সরকার সেসব কিছুই করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও করে যাবে বলে সবাইকে আশ্বস্ত করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। করোনার কারণে বিশ^ স্থবিরতার প্রসঙ্গ টেনে এর মধ্যেও তাঁর সরকার চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশে কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত যাতে সিনেমা শিল্প ভালভাবে প্রচলিত হয়, মানুষ যেন বিনোদনের সুযোগ পায়, সে চিন্তা থেকেই আমরা ফান্ড সৃষ্টি করছি। তিনি বলেন, তাঁর সরকারের প্রচেষ্টায় ইতিহাস ও ঐতিহ্য সুরক্ষায় চলচ্চিত্র ব্যবস্থার উন্নয়ন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সনাতন চলচ্চিত্রের সংরক্ষণ এবং বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের কার্যক্রম পুনরুদ্ধারকরণ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। বিশ^মানের চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার এজন্য ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছে এবং বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট এবং জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট ভবন সম্প্রসারণ করা হয়েছে। যেন যথাযথ প্রশিক্ষণ নিয়ে আমাদের শিল্পীরা উন্নতমানের চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পারেন। তিনি বলেন, চলচ্চিত্রে তরুণ প্রজন্মের ভাবনা, মেধা ও মননশীলতাকে কাজে লাগানোর উদ্দেশে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট ও কলকাতার সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্র্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এজন্য, ইতোমধ্যে বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগালকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে অজীবন সম্মাননাপ্রাপ্ত সোহেল রানার নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করার সময় চলচ্চিত্র শিল্পে নিয়োজিত নেপথ্য শিল্পীদের জন্য সহযোগিতার ক্ষেত্র সৃষ্টির আবেদন প্রসঙ্গে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০২০’ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি চলচ্চিত্রে আজীবন সম্মাননা প্রাপ্তদের সিআইপি (কালচারাল ইমপোর্টেন্ট পারসন) হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টিও আলোচনা করার আশ^াস দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা নেপথ্যে থেকে এই চলচ্চিত্রকে সুন্দর করার জন্য দিনরাত কাজ করছেন, সেই যন্ত্রশিল্পী থেকে কলা-কুশলী, মঞ্চসজ্জায় সম্পৃক্ত সকলের বিষয়টাই তাঁর সরকার এই ট্রাস্টে রেখেছে। যাতে বিপদে-আপদে প্রত্যেকেই এই ট্রাস্ট থেকে অনুদান নিতে পারেন। তিনি এই ফান্ড সম্প্রসারণে চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সামর্থবানদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, শিল্পের সমস্ত মাধ্যমকে একত্রিত করে যে শিল্প, সেটাই হচ্ছে চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্র শুধু জীবনের কথাই বলে না, এটি সমসাময়িক কালকে সংরক্ষণ করে এবং যেই সময়ে নির্মিত হয় সেই সময়ের সমাজচিত্রকে পরিস্ফুটন করে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে চলচ্চিত্র শিল্পের যাত্রা শুরু, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তাকে শুধু এর স্বর্ণালি দিন ফিরিয়ে আনা নয় বরং আমাদের চলচ্চিত্র যেন বিশ্ব বাজারেও একটি স্থান দখল করে নিতে পারে সেই লক্ষ্যে অনেক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।
×