ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে এক হাজার সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট তৈরির পরিকল্পনা জাতিসংঘ মিশনে অবদান রাখার মতো করে তৈরি করা হবে এক্সপার্টদের বিশ্বকে সাইবার ঝুঁকিমুক্ত রাখতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে

রুখবে সাইবার ক্রাইম ॥ বিশ্বে সিকিউরিটি সার্ভিস প্রোভাইডিং হাব হবে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ১৮ জানুয়ারি ২০২১

রুখবে সাইবার ক্রাইম ॥ বিশ্বে সিকিউরিটি সার্ভিস প্রোভাইডিং হাব হবে বাংলাদেশ

শংকর কুমার দে ॥ বিশ্বের সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিস প্রোভাইডিং হাব হিসেবে গড়ে উঠবে বাংলাদেশ। এমন পরিকল্পনা নিয়ে সাইবার নিরাপত্তায় সক্ষমতা অর্জনের পথে অগ্রসর হচ্ছে সরকার। এই লক্ষ্য অর্জনের পর্যায়ে এখন বৈশ্বিক সাইবার নিরাপত্তা সূচকে ৭৩তম স্থান থেকে ৮ ধাপ এগিয়ে ৬৫তম স্থানে উন্নীত হতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। দেশে ১ হাজার সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট তৈরি করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সারাদেশে প্রতি বছরই সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সর্বক্ষেত্রেই সাইবার ক্রাইম হুমকি ও নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে উদ্বেগজনকভাবে। এসব সমস্যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নয়নের পাশাপাশি সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিতে ব্যাপকভিত্তিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সাইবার ক্রাইম সিকিউরিটি ইউনিট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সারাদেশে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্থা, সংগঠন, প্রতিষ্ঠানে সাইবার হুমকি এবং নিরাপত্তার হুমকির মধ্যে এই বিভাগ ও বিষয়ে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট এখন সময়ের দাবি। দেশের ব্যাংকিং, হেলথ, সিভিল এভিয়েশনসহ বিভিন্ন সেক্টর নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন। সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্ট তৈরি করে দেশের মেধাবী সাইবার নিরাপত্তা কর্মীরা অবদান রাখতে পারবেন বিশ্বে। নতুন কর্মসংস্থান হবে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বাড়বে। জাতিসংঘ মিশনে অবদান রাখার মতো করে তৈরি করা হবে সাইবার এক্সপার্ট। আগামীতে বিশ্বকে সাইবার ঝুঁকিমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বাংলাদেশ। এই ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি হচ্ছে সিকিউরিটি সার্ভিস প্রোভাইডিং হাব। সাইবার ক্রাইম এ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিসিএ ফাউন্ডেশন)-এর গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে সাইবার ক্রাইম উদ্বেগজনকভাবে ক্রমবর্ধমান। এই ধরনের প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘটছে সহিংস উগ্রবাদ, গুজব, রাজনৈতিক অপপ্রচার, মিথ্যা সংবাদ, গ্যাং কালচার, আত্মহত্যা, পর্নোগ্রাফি, সাইবার বুলিং, জালিয়াতি, চাঁদাবাজি, পাইরেসি, আসক্তি ইত্যাদি ধরনের অপরাধ। বাস্তব জীবনে ঘটমান অপরাধগুলো এখন স্থানান্তরিত হয়ে রূপ নিচ্ছে ডিজিটালে। সাইবার অপরাধে আক্রান্তের জরিপে বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী বেশির ভাগ ভুক্তভোগীর বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের কম। পরিসংখ্যানে ভুক্তভোগীদের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শিশু। ১৮ বছরের কম বয়সী এই ভুক্তভোগীদের হার ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ। সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছে ৬৮ শতাংশ নারী। অপরাধের শিকার একটি বড় অংশই অভিযোগ করেন না। সিসিএ ফাউন্ডেশনের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের মধ্যে ১১ ধাপে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এর মধ্যে চারটিই নতুন ধারার অপরাধ। এই অপরাধের শিকার হওয়াদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ব্যক্তি পর্যায়ে ভুক্তভোগীদের মধ্যে চালানো জরিপে দেখা গেছে, দেশে সাইবার অপরাধের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে ফোনে বার্তা পাঠিয়ে হুমকি দেয়ার ঘটনা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কপিরাইট আইন লঙ্ঘন, অনলাইনে পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে প্রতারণা এবং অনলাইনে কাজ করিয়ে নেয়ার কথা বলে প্রতারণা। সাইবার অপরাধে আক্রান্তদের মধ্যে ফোনে বার্তা পাঠিয়ে হুমকির শিকার হচ্ছেন ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। কপিরাইট লঙ্ঘনের মাত্রা ৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ দখল করেছে। অনলাইনে কাজ করিয়ে নিয়ে প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে ১ দশমিক ৪০ শতাংশ। জরিপের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এগুলো দেশে নতুন ধরনের অপরাধ। আর এতদিন পণ্য কিনে প্রতারণার শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটলেও এবার সামনে এসেছে এর ব্যতিক্রমী ঘটনা। অনলাইনে বিক্রীত পণ্য ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে গিয়ে প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ। গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগের বছরের তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে পর্নোগ্রাফি। এই অপরাধ ২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে। অনলাইনে বার্তা পাঠিয়ে হুমকির ঘটনা ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের ঘটনা কিছুটা কমলেও এখনও তা আশঙ্কাজনক। ভুক্তভোগীদের ২২ দশমিক ৩৩ শতাংশই এই ধরনের অপরাধের শিকার হচ্ছেন। ছবি বিকৃত করে অনলাইনে অপপ্রচারের ঘটনা রয়েছে আগের মতোই। এবার এই হার ১৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ। দেশে ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রতারণাও। ভুক্তভোগীদের ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ এই অপরাধের শিকার, যা আগের প্রতিবেদনে ছিল ৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। তবে সময়ের সঙ্গে অনলাইন ব্যাংকিং এ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের ঘটনা কমেছে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বয়সভিত্তিক আক্রান্তের ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এদের মধ্যে বেশির ভাগ ভুক্তভোগীর বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের কম। পরিসংখ্যানে ভুক্তভোগীদের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শিশু। ১৮ বছরের কম বয়সী এই ভুক্তভোগীদের হার ১১ দশমিক ১৬ শতাংশ। জরিপে অংশ নেয়াদের একটি বড় অংশ বলেছেন, অপরাধের শিকার হয়েও তারা আইনের আশ্রয় নেন না। এটা প্রায় ৮০ দশমিক ৬ শতাংশ। যারা আইনের আশ্রয় নেন তাদের মাত্র ১৯ দশমিক ২ শতাংশ আইনী সহায়তা চেয়ে আশানুরূপ ফল পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। দেশে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে ১০ দফা সুপারিশও তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাইবার পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা, অফিস-আদালত সৎ ও নৈতিক জনবল নিয়োগ নিশ্চিত করা, দক্ষ জনশক্তি তৈরি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে দক্ষ প্রশিক্ষিত জনবল বাড়ানো, সাইবার নিরাপত্তায় দেশী প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দেয়া, প্রযুক্তি সেবায় দেশী প্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করা। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের সঙ্গে সমান্তরাল হারে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। সহিংস উগ্রবাদ, গুজব, রাজনৈতিক অপপ্রচার, মিথ্যা সংবাদ, গ্যাং কালচার, আত্মহত্যা, পর্নোগ্রাফি, সাইবার বুলিং, জালিয়াতি, চাঁদাবাজি, পাইরেসি, আসক্তি-এর সবই হচ্ছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। বাস্তব জীবনে ঘটমান অপরাধগুলো এখন ডিজিটাল মাধ্যমে স্থান্তরিত হচ্ছে। কৃষক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পর্যন্ত সব শ্রেণী ও পেশার মানুষ ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছেন। অথচ এই ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে একটি ভার্চুয়াল জগতের বাসিন্দা হলেও বিশ্বনাগরিক হিসেবে ব্যবহারকারীদের সিংহভাগই সচেতন নন। অন্তর্জালে যুক্ত হতে গিয়ে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় জড়িয়ে পড়ছেন ভ্রান্তির-জালে। এভাবেই অপরাধের ডিজিটাল রূপান্তর মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বলে গবেষণা প্রতিবেদনের দাবি করা হয়েছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে সাইবার অপরাধীরা। প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জমা পড়ছে শতশত অভিযোগ। ছোটখাটো ঝামেলা, সম্পর্কে টানাপোড়েন হলেই প্রেমিকার আপত্তিকর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে তরুণরা। এমনকি স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হলে তাকে অনলাইন মাধ্যমে হেনস্তা করছে স্বামী। শিক্ষিত লোকজনের মধ্যেই এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা বেশি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি, সাইবার বুলিং, যৌন হয়রানি হচ্ছে হরহামেশা। ভুয়া এ্যাকাউন্ট খুলে মানহানি, বিভ্রান্তিকর পোস্ট, গুজব ছড়ানোর ঘটনা তো আছেই। জঙ্গী কার্যক্রম, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে জমা পড়ছে বলে জানা গেছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, সাইবার অপরাধ দিনে দিনে বাড়ছে। পর্নোগ্রাফি থেকে শুরু করে অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণার ঘটনায় প্রতি মাসেই ভুক্তভোগীরা আইনী সহায়তার জন্য আসেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে বিকাশে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেছে হ্যাকাররা। সেই টাকা এখনও উদ্ধার হয়নি। দেশের সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংকগুলো সাইবার সিকিউরিটির হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছে। পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, ছোট ছোট অপরাধের বেশির ভাগই এখন সাইবার স্পেসে সংঘটিত হচ্ছে। নেশাজাতীয় দ্রব্যের কেনাবেচাও এখন অনলাইনে হচ্ছে। এর বাইরে ফিশিং, ডিডিওএস এ্যাটাক, র‌্যানসমওয়্যার, চাইল্ড পর্নোগ্রাফি, ই-কমার্স প্রতারণা বা জালিয়াতি, অনলাইন এমএলএম, অনলাইন গ্যাম্বলিং, টেররিস্ট ফাইন্যান্সিংয়ের মতো অপরাধের ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি মোবাইল নম্বর স্পুফিং ও সিম ক্লোনিংয়েরও অভিযোগ উঠেছে। প্রতারক চক্রের সদস্যরা স্পুফিংয়ের মাধ্যমে অন্যের পরিচয় ধারণ করে ব্যবহারকারীর ঘনিষ্ঠজনের কাছে ফোন দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণায় জড়িত অভিযোগে প্রায় ২০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা বিভিন্নজনের কাছ থেকে প্রায় ৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। স্পুফিংয়ের অভিযোগ পাওয়া গেলেও সিম ক্লোনিংয়ের অভিযোগ এখনও আসেনি। সিমের পিন নম্বর ও মোবাইল অপারেটরদের সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সিম ক্লোনিং সম্ভব নয়। সাইবার সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশে সংঘটিত সাইবার অপরাধগুলো অনেকটাই ভিন্ন। এসব অপরাধের বেশির ভাগই পারিবারিক বিদ্বেষ, স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া, বন্ধু-বান্ধবদের সুসম্পর্কের অবসানের কারণে সৃষ্ট জটিলতা থেকে হচ্ছে। এসব ঘটনার মধ্যে আছে- বিদ্বেষপূর্ণ স্ট্যাটাস-মন্তব্য, অন্তরঙ্গ ভিডিও-ছবি আপলোড, ফেক এ্যাকাউন্ট পেজ তৈরি, ব্যবহারকারীর অসচেতনতা বা অজ্ঞতাবশত ফিশিংয়ের মাধ্যমে বা পাসওয়ার্ড অনুমান করে আইডি হ্যাকিং ইত্যাদি ঘটনা ঘটছে বলে সাইবার ক্রাইম বিভাগের কর্মকর্তার দাবি। সাইবার সিকিউরিটি স্কোরে ॥ এস্তোনিয়াভিত্তিক ই-গবর্নেন্স একাডেমি ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে, বিশ্বের ১৬০ দেশের সাইবার নিরাপত্তা ও ডিজিটাল উন্নয়ন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্স তৈরি করা হয়েছে। এনসিএসআইয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ সূচকে ৯৬ দশমিক ১০ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে ভাল অবস্থায় আছে গ্রিস। এরপর ৯২ দশমিক ২১ স্কোর নিয়ে চেকরিপাবলিক এবং ৯০ দশমিক ৯১ স্কোর নিয়ে এস্তোনিয়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এই তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সূচকের ১৬ নম্বরে, যুক্তরাজ্য আছে ১৮তম অবস্থানে। প্রথম ২০টি দেশের মধ্যে এশিয়ার একমাত্র প্রতিনিধি সিঙ্গাপুরের অবস্থান ১৫ নম্বরে। চীন আছে ৮০তম স্থানে। ১৬০ দেশের এ তালিকায় সবচেয়ে বাজে অবস্থানে আছে সাউথ সুদান। অন্যদিকে, সূচকে ৪৪ দশমিক ১৬ স্কোর নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভাল অবস্থায় থাকা ভারতের স্কোর ৫৯ দশমিক ৭৪, সূচকে অবস্থান ৩৫ নম্বরে। এছাড়াও পাকিস্তান সূচকের ৬৬তম (স্কোর ৪২.৮৬), নেপাল ৯৩তম (২৮.৫৭), শ্রীলঙ্কা ৯৮তম (২৭.২৭), ভুটান ১১৫তম (১৮.১৮), আফগানিস্তান ১৩২তম (১১.৬৯), মিয়ানমার ১৩৯তম (১০.৩৯) অবস্থানে রয়েছে। প্রসঙ্গত, মৌলিক সাইবার হামলা প্রতিরোধের প্রস্তুতি, সাইবার অপরাধ এবং বড় ধরনের সঙ্কট ব্যবস্থাপনায় তৎপরতা মূল্যায়ন করে ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি ইনডেক্স- এনসিএসআই তৈরি করা হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশে সাইবার ক্রাইম বাড়ার সঙ্গে সাইবার সক্ষমতা অর্জনও বেড়েছে। গত ১২ বছরে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে, তা শুধু সেবা প্রদান, ইন্টারনেট সংযোগ, ফ্রিল্যান্সিংয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। সাইবার নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও তরুণ প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে। এই সাইবার ড্রিলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশ সাইবার নিরাপত্তার জায়গায় কতটা সক্ষম। জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সূচকে ৭৩ নম্বর থেকে ৬৫ নম্বরে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। এ বছর এই সূচকে আট ধাপ উন্নতি হয়েছে, যা ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নেরও রোল মডেল হিসেবে পরিগণিত হওয়ার পথে অগ্রসরমান।
×