ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মৃত বাবাকে স্মরণ করে কাঁদলেন স্বর্ণজয়ী রাকিবুল

প্রকাশিত: ২১:৪৯, ১৭ জানুয়ারি ২০২১

মৃত বাবাকে স্মরণ করে কাঁদলেন স্বর্ণজয়ী রাকিবুল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ রবিবার। শীতের পড়ন্ত বিকেল। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। জাতীয় এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতার সমাপনী দিন। পুরুষদের ৮০০ মিটার দৌড় ইভেন্টে যিনি বিজয়ী হলেন, তাকে দেখে মনেই হবে না তিনি জয়ী হতে পারেন। কারণ একেবারেই রোগা, শীর্ণকায়, পুষ্টির অভাবে অভুক্ত। কিন্তু দৌড়াতে শুরু করলে পেছনে ফেলে দেন বাকিদের। তার খেলার ধরণ যে কাউকেই আকৃষ্ট করতে বাধ্য। দৌড় শেষে কথা হয় তার সঙ্গে। আলাপের বেশিরভাগই জুড়ে থাকলো তার মৃত বাবার প্রসঙ্গ। বাবাকে মনে পড়ছে অনেক। তিনি থাকলে অনেক খুশি হতেন। একের পর এক সাফল্য পাচ্ছি। বাবা বলতো তোকে দেখতে ইচ্ছা করে। তখন দেখতে যেতে পারিনি। মারা যাওয়ার পর দেখেছি। রবিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত জাতীয় এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় পুরুষদের ৮০০ মিটার দৌড়ের জেতার পর কথাগুলো বলতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর রাকিবুল ইসলাম। এ নিয়ে এই ইভেন্টে তিনবার ৮০০ মিটারে জিতলেন ১৮ বছর বয়সী রাকিবুল। এছাড়া স্বর্ণ জিতেছেন ১৫০০ মিটার দৌড়েও। ২০১৮ সাল থেকে জাতীয় পর্যায়ে খেলতে শুরু করেন। অভিষেক আসরে অংশ নিয়েই (পাবনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার হয়ে) দৃষ্টি কেড়েছিলেন সারা বাংলাদেশের মধ্যে চতুর্থ সেরা এ্যাথলেট হয়ে। রাকিবুলের বাবা দুলাল প্রামাণিক। মাস ছয়েক আগে লিভার সমস্যায় মারা গেছেন তিনি। পেশায় ছিলেন ফেরিওয়ালা। মূলত ছন পাপড়ি ফেরি করে বিক্রি করতেন। তার ছিল এক ছেলে, তিন মেয়ে। গোটা সংসারের ভার ছিল তার কাঁধেই। অশ্রুসজল চোখে রাকিবুল স্মৃতিচারণ করেন সেই কথাই, আমাদের যাই লাগতো, বাবা না খেয়ে দিতেন। সবসময় চাইতেন যেন ভাল কিছু করতে পারি। আজ বাবাকে অনেক মিস করছি। তিনি থাকলে অনেক ভালো হতো। বাবা বেঁচে থাকতে দেখে গেছেন আমি প্রথম হয়েছিলেন ২০১৮ সালের জাতীয় এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায়। বছর তিনেক আগের ঘটনা। ছন পাপড়ি ফেরি করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন দুলাল প্রামাণিক। পঙ্গু হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন বিছানায়। সেই সময়েই এ্যাথলেটিক্স ক্যারিয়ার শুরু করেন রাকিবুল। বাবা মারা যাওয়ার পর মা কুলসুম বেগম সংসার চালাতে রাকিবুলকে সহায়তা করেছেন। এলাকার অনেকেই বাড়িয়ে দিয়েছেন সহযোগিতার হাত। নৌবাহিনীর নাবিক পদে চাকরি করা রাকিবুলই এখন সংসার চালান। ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ৪.৭৯ গ্রেড পেয়েছেন।। তিন মাস অনুশীলন করে নিজেকে শাণিত করা রাকিবুল আজ দেশের সেরা এ্যাথলেটদের একজন। তাকে যখন প্রশ্ন করা হয়, ৮০০ এবং ১৫০০ মিটার দৌড়ের মধ্যে কোনটা তার প্রিয় ইভেন্ট, তখন তার সপ্রতিভ জবাব, দুটোই সমান প্রিয়। যদিও শুরুতে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন রাকিবুল। পাবনার ঈশ্বরদীর থানা পর্যায়ে খেলেন ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে, স্ট্রাইকার হিসেবে। ফুটবল এখনও প্রিয় তার। কিভাবে দৌড়বিদ হলেন রাকিবুল, নৌবাহিনীতে সেই গল্পটা কেমন? আন্তঃকলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ভালো খেলার সুবাদেই নৌবাহিনীতে যাওয়া র পথটা খুলে যায় রাকিবুলের জন্য।
×