ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইঞ্জিনিয়ারদের অটোপাস দেয়া যাবেনা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সংবাদ সম্মেলন

আন্দোলনরত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরার আহবান

প্রকাশিত: ১৮:০২, ১৭ জানুয়ারি ২০২১

আন্দোলনরত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরার আহবান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অটোপাসসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলনরত ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাদের ঘরে ফোর আহবান জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রনালয় একই সঙ্গে অযৌক্তিক আন্দোলন নিয়ে রাজপথে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও হুশিয়ারী দিয়েছে। রবিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান। ইঞ্জিনিয়ারদের অটোপাস দেয়া যায় না মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ পলিটেকনিক ছাত্র পরিষদ ভিন্ন উদ্দেশ্যে আন্দোলন করছে। সংবাদ সম্মেলনে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোরাদ হোসেন মোল্লা, বোর্ডের সচিব মো. জাহেদুল হাসানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আন্দোলনরত কারিগরি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, আমরা মনে করছি তারা ফিরে আসবে। অথবা তারা যদি অসত্য, বিভ্রান্তিকর অপতৎপরতা অব্যাহত রাখে তাহলে আমাদেরকে ধরে নিতে হবে তাদের উদ্দেশ্য, শিক্ষা নয়। শিক্ষার বাইরেও তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। একটা অস্থিতিশীলতা, একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা তাদের অপচেষ্টা রয়েছে। সেক্ষেত্রে সরকার যথা নিয়মে মোকাবেলা করবে। ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা এক বছরের ইয়ার লস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্থগিত হওয়া দ্বিতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ পর্বের তাত্ত্বিক পরীক্ষায় অটোপাস ও প্রথম, তৃতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম পর্বের ক্লাস চালু করে শর্ট সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়া, অতিরিক্ত ফি প্রত্যাহার এবং প্রাইভেট পলিটেকনিকের সেমিস্টার ফি মওকুফ এবং সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপ্লোমা ছাত্রদের আসন বরাদ্দের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছে। হঠাৎ তৈরি হওয়া নতুন সংগঠন ‘বাংলাদেশ পলিটেকনিক ছাত্র পরিষদ’র দাবি করার আগেই সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। তারা এখন কোনও ভিন্ন উদ্দেশ্যে আন্দোলন করছে। ইঞ্জিনিয়ারদের অটোপাস দেয়া হবে না। সচিব জানান, শনিবারই কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের বৈঠকে পরীক্ষার নম্বর ও সময় কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রতিটি বিষয়ের মোট ১০০ নম্বরের মধ্যে পরীক্ষা দিতে হবে ৫০ নম্বরের। আর তিন ঘণ্টার পরীক্ষা দুই ঘণ্টা এবং দুই ঘণ্টার পরীক্ষা দিতে হবে দেড় ঘণ্টায়। এই সিদ্ধান্তের পরেও রংপুর ও বরিশালে সড়ক অবরোধ করা হয় ‘বাংলাদেশ পলিটেকনিক ছাত্র পরিষদ’র ব্যানারে। সচিব বলেন, তারা চার দফা দাবির প্রথম দাবিতে বলছেন তাদের এক বছর লস পুষিয়ে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে যে পরীক্ষাগুলো হয়নি, সেগুলোর ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে করে দুই বছর করলে এক বছরের লস এডজাস্ট হবে। ‘দ্বিতীয় দাবি যেসব পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে সেগুলো শর্ট সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়ার কথা বলছে তারা। আমরা দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ পর্বের তাত্ত্বিক পরীক্ষার আগেই সংক্ষিপ্ত সিলেবাস করেছি। সেখানে তারা সংক্ষিপ্ত পরীক্ষা দিতে পারবে। অর্থাৎ যেখানে ১০টি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার প্রয়োজন হতো সেখানে ৫টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এই প্রশ্নের ক্ষেত্রে যে গ্রুপ ছিল সেগুলোও ফ্লেক্সিবল করে দিয়েছি। যেকোনও গ্রুপ থেকে নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে তারা। এ ক্ষেত্রে অটোপাস দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ যে রিকয়ার কম্পিটেন্সি প্রয়োজন হবে তা থাকতে হবে। এ জন্য আমরা পরীক্ষা পদ্ধতি রিডিজাইন করেছি। ‘তৃতীয় দাবিতে শিক্ষার্থীরা বলছে অতিরিক্ত ফি গ্রহণ না করা এবং প্রাইভেট পলিটেকনিকে সেমিস্টার ফি মওকুফ। আমরা ইতোমধ্যেই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছি। সেখানে টিউশন ফি ও পরীক্ষার ফি ছাড়া সরকারি পলিটেকনিকে অন্য ফি মওকুফ করেছি। বেসরকারি পলিটেকিনিকগুলোকে অনুরোধ করেছি, তারাও এই ধরনের ফি (টিউশন ও পরীক্ষার ফি ছাড়া অন্য ফি) মওকুফ করেছে। আপনারা জানেন প্রাইভেট পলিটেকিনিকগুলোতে শিক্ষকের বেতন, ঘরভাড়া ল্যাবরেটরির জন্য খরচ রয়েছে। তারপরও তারা রজি হয়েছে। তারা বলেছে, ফিসের কারণে যেন কোনও শিক্ষার্থী পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়। তারা অতিরিক্ত ফি দাবি করছে না। ‘চতুর্থ দাবি প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের জন্য আসন বরাদ্দ করা। আমরা জানি, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কারিগরি শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা পাস করার পর ভর্তি হতে পারে। পর্যায়ক্রমে ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, নড়াইল ও খাগড়াছড়িতে চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হচ্ছে। সেখানে ৫০ শতাংশ ডিপ্লোমা এবং ৫০ শতাংশ সরাসরি ভর্তি হতে পারবে। এটা বুয়েট আর আমরা করবো। এর ফলে প্রচুর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা শিক্ষার্থীরা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিয়ে পড়ার সুযোগ পাবে। সচিব আরো বলেন, এই দাবি নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা, মোটেই সমীচীন নয়। আমরা বিশ্বসি করি, তারা ঘরে ফিরে আসবে। যথা নিয়মে ফেক্সিবল পদ্ধতিতে শর্ট সিলেবাসে তারা পরীক্ষায় অংশ নেবে। যদি তারা ফিরে না আসে, তাহলে আমাদের ধরে নিতে হবে শিক্ষার বাইরেও তাদের অন্য কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে। অস্থিতিশীলতা, বিভ্রান্তি-এগুলো সৃষ্টির অপচেষ্টা রয়েছে। এটা সরকার যথা নিয়মে মোকাবিলা করবে। আমি মনে করি, আমাদের সন্তানতুল্য আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা বিষয়টি উপলদ্ধি করবে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সচিব মো. জাহেদুল হাসান বলেন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পর্বের পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে অধ্যক্ষ ও পরিচালকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে পরিস্থিতি বিবেচনায় একটি যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য পরীক্ষা পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্রে মুদ্রিত মোট নম্বরের ৫০ শতাংশ নম্বরের উত্তর দিতে হবে। পরীক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরকে দ্বিগুণ করে ফল প্রস্তুত করা হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন নিয়ে আন্দোলনে শিক্ষক সমিতি: জাতীয় সংসদের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দুই কিলোমিটারের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ অনুযায়ী নেয়া সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে ‘বাংলাদেশ নব জাতীয়করণকৃত ও বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। রবিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানানো হয়। এ সময় সমিতির নেতারা দেশে সরকারি নীতিমালার আওতা থেকে বাদ পড়া সাত হাজার ২২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান। মানববন্ধনে ছিলেন সংগঠনটির সভাপতি কামাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক শেখ মতিয়ায়, সহ-সভাপতি লিটন খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান সুজা, ময়মনসিংহ বিভাগের সভাপতি আবু সাঈদসহ প্রমুখ।
×