ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে নতুন মাত্রা

প্রকাশিত: ০০:৫০, ১৭ জানুয়ারি ২০২১

বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে নতুন মাত্রা

বিজয় দিবসের ঠিক একদিন পর ১৭ ডিসেম্বর ২০২১ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। এদিন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়া ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে সাতটি খাতে দেশ দুটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে। সমঝোতা স্মারকগুলো হচ্ছে-কৃষি খাতে সহযোগিতা, হাইড্রোকার্বনে সহযোগিতার বিষয়ে রূপরেখা, হাতির সুরক্ষায় অভয়ারণ্য নিশ্চিত করা, নয়াদিল্লীর জাদুঘরের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সহযোগিতা, হাই ইমপ্যাক্ট কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প চালু, বাংলাদেশ-ভারতের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফোরামের টার্মস অব রেফারেন্স এবং বরিশালে সুয়ারেজ প্রকল্পের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্তমানে একটা সুসম্পর্ক বজায় রয়েছে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল সম্মেলনের পর এই সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলা যায়। ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যে সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করেছিল, বাংলাদেশ তা কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করে থাকে। ভারতও বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে উৎসাহী এবং দেশটির এই উৎসাহ কার্যক্ষেত্রেও প্রমাণিত হয়েছে বহুবার। তবে দুই দেশের মধ্যে কিছু বিষয়ে আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও বাস্তব ক্ষেত্রে সেসব বিষয় সমস্যাক্রান্ত হয়ে রয়েছে। তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যুটি সেগুলোর অন্যতম। এই নদীর পানি বণ্টন চুক্তি হয় হয় করেও হচ্ছে না। আমরা আশা করব চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন হবে এবং তাহলে দুই দেশের সম্পর্ক আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। সীমান্তে হত্যাও দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বাধা বৈকি। নরেন্দ্র মোদির সরকারের উচিত হবে তিস্তার পানি বণ্টন ও সীমান্ত হত্যা ইস্যুতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আমরা চাই দুই দেশের সম্পর্ক অকৃত্রিম, অকপট ও নিñিদ্র হবে, যাতে কোন ধরনের ইস্যুই আর অমীমাংসিত থাকবে না। সম্পর্কের নতুন মাত্রা শেখ হাসিনা যেমন দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য ভারতের সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক উত্তরোত্তর আরও দৃঢ় হবে; তেমনই নরেন্দ্র মোদির কথায়ও বন্ধুত্বের সুরই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের কাছে বাংলাদেশ এক নম্বর পিলার। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক, বহু দেনদরবার, সালিশ-মীমাংসা ও প্রতিশ্রুতিতেও যখন বন্ধ হচ্ছে না সীমান্ত হত্যা, তখন বিষয়টি শূন্যতে নামিয়ে আনতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যৌথ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তা যুক্তিযুক্ত। বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ রোহিঙ্গা সঙ্কট। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে দুই শীর্ষ নেতৃত্বের আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি আবার সামনে এসেছে। ভারতের হাইকমিশনার এ ব্যাপারে আশ^স্ত করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুতদের নিরাপদ, দ্রুত এবং টেকসই প্রত্যাবাসনের গুরুত্বের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আমরা চাই, এ ইস্যুতে ভারত আরও এগিয়ে এসে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করুক। মিয়ানমারে সৃষ্ট রোহিঙ্গা সঙ্কটের দায় বাংলাদেশ কেন বহন করবে? এ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী দেশ হিসেবে ভারত বিশ^ সম্প্রদায়কে নিয়ে সঙ্কট নিরসনের পথ বের করতে পারে। পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বাড়াতে হবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক এখন অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল। গত ১০ বছরে ছিটমহল সমস্যার সমাধান, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমা সংক্রান্ত বিরোধ নিরসনসহ অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে। এ সময়ে দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শতাধিক চুক্তি সই হয়েছে। অর্থনৈতিক সহযোগিতার পাশাপাশি সীমান্ত সুরক্ষা, প্রযুক্তি বিনিময়, মহাকাশ গবেষণা সাইবার নিরাপত্তা, কানেকটিভিটি, শিপিং, নদীখননসহ অনেক ক্ষেত্রেই এই সহযোগিতা সম্প্রসারিত হয়েছে। ভার্চুয়াল বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রী তিস্তা ছাড়াও মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার-এই ছয়টি নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির কাঠামো দ্রুত শেষ করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তাঁরা শিগগিরই যৌথ নদী কমিশনের পরবর্তী বৈঠক আয়োজনে সম্মত হয়েছেন। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন) ব্যাংকে যুক্ত হতে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সড়কে যুক্ত হতে আগ্রহ দেখায়। জানা গেছে, ওই দেশগুলো এর আগে আন্তর্দেশীয় সড়কে বাংলাদেশকে যুক্ত করার আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার তাতে রাজি হয়নি। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ক্রমেই নতুন উচ্চতায় এগিয়ে যাবে এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উভয় দেশ উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঠিকই মনে করিয়ে দিয়েছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক ভারতীয় নাগরিক শিল্প ও সেবা খাতে কাজ করে নিজ দেশে বিপুল রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন। বিপরীতে বাংলাদেশের বহু মানুষ প্রতিবছর চিকিৎসা, শিক্ষা ও পর্যটনের জন্য যাচ্ছেন ভারতে। সেভাবেও এ থেকে ডলার যাচ্ছে ভারতে। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতিও রয়েছে। তা কাটিয়ে উঠতে হলে ভারতকেই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। দুই দেশের মধ্যে সব ধরনের চলাচল বেড়েছে কিন্তু তা আরও বাড়াতে হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাংলাদেশের মানুষের জন্যও থাকা দরকার। আমরা আশা করব-এবার যে ছয়টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেগুলোসহ অতীতের সব সহযোগিতা ও বাণিজ্যচুক্তি বাস্তবায়নের তদারকি জোরদার হবে। এজন্য গঠিত যৌথ কমিটির বৈঠক হতে হবে বার বার, নিয়মিত। সবচেয়ে বড় কথা-এসবের বাস্তবায়ন যে প্রত্যাশিত সময়ের মধ্যে হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আশা করি দুই বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার, ফলপ্রসূ হবে এবং আবশ্যই দীর্ঘস্থায়ী হবে। বন্ধুত্বের সুরই প্রতিধ্বনিত হয়েছে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যকার বৈঠকটি ভার্চুয়াল হলেও কার্যত দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে হৃদ্যের দিক থেকে সামান্যতম ব্যতিক্রম ঘটেনি। শেখ হাসিনা দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য ভারত সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক উত্তরোত্তর আরও দৃঢ় হবে। নরেন্দ্র মোদির কথায়ও বন্ধুত্বের সেই সুরই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের কাছে বাংলাদেশ এক নম্বর স্তম্ভ। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী ও সুদৃঢ় করার বিষয়টি তার ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম থেকেই অগ্রাধিকার পেয়ে আসছে। এ সম্মেলনে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট তিস্তাসহ নদ-নদীর পানি বণ্টন, রোহিঙ্গা সঙ্কট, সীমান্তে হত্যাকাণ্ড, করোনার টিকাসহ আলোচিত প্রত্যেকটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক এখন অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল। গত ১০ বছরে ছিটমহল সমস্যার সমাধান, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমা সংক্রান্ত বিরোধ নিরসনসহ অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে। এ সময়ে দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ শতাধিক চুক্তি সই হয়েছে। অর্থনৈতিক সহযোগিতার পাশাপাশি সীমান্ত সুরক্ষা, প্রযুক্তি বিনিময়, মহাকাশ গবেষণা, সাইবার নিরাপত্তা, কানেকটিভিটি, শিপিং, নদী খননসহ অনেক ক্ষেত্রেই এই সহযোগিতা সম্প্রসারিত হয়েছে। ভার্চুয়াল বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রী তিস্তা ছাড়াও মন, মুহুরী, খোয়াই, গোমী, ধরলা ও দুধকুমার-এই ছয়টি নদীর পানি বণ্টনের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তির কাঠামো দ্রুত শেষ করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন, যা ছিল প্রত্যাশিত। তারা শীঘ্রই যৌথ নদী কমিশনের পরবর্তী বৈঠক আয়োজনে সম্মত হয়েছেন। যৌথ বিবৃতিতে উভয় দেশ দুর্যোগ মোকাবেলায় সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। বাংলাদেশ ভারতের শুধু নিকট প্রতিবেশীই নয় বরং দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত অকৃত্রিম বন্ধু ও সুহৃদ।
×