ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

দুই শিল্পায়োজনের সমাপ্তি, কালিদাস নাটকের প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ১৭ জানুয়ারি ২০২১

দুই শিল্পায়োজনের সমাপ্তি, কালিদাস নাটকের প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সব মিলিয়ে শনিবার দারুণ সরব ছিল রাজধানীর সংস্কৃতি অঙ্গন। সিনেমাপ্রেমীদের জন্য শুরু হলো চমৎকার এক উৎসব। পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য মিলিয়ে ৭৩টি দেশের ২২৭টি চলচ্চিত্রে সজ্জিত ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সূচনা হলো এদিন বিকেলে। জাতীয় জাদুঘর, গণগ্রন্থাগার, শিল্পকলা একাডেমিসহ ঢাকার আট ভেন্যুতে নয় দিন ধরে চলবে এই উৎসব। আর এমন সুন্দরতম দিনের সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয়েছে থিয়েটার ’৫২ প্রযোজিত কালিদাস শিরোনামের নাটক। অন্যদিকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর শেষ দিন ছিল শনিবার। সেই সুবাদে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনীর সমাপনী আয়োজন। পাশাপাশি ধানমণ্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে ‘মুর্তজা বশীরের সৃষ্টি ও প্রসারিত মন’ শীর্ষক শিল্পায়োজনেরও শেষ দিন ছিল শনিবার। তাই মহামারীর দুঃসময়েও শিল্পানুরাগী ও দর্শকের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে প্রতিটি আয়োজনে বয়ে গেছে স্বস্তির সুবাতাস। তারুণ্যের জয়গানে গত ৩০ নবেম্বর থেকে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায় শুরু হয় নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী। দর্শক চাহিদার কারণে এক মাসের শিল্পায়োজনটির সময়সীমা গড়ায় দেড় মাসে। বহুমাত্রিক শিল্পসম্ভারে সজ্জিত প্রদর্শনীটি বিশেষভাবে নজর কেড়েছে রাজধানীর শিল্পরসিকদের। সব মিলিয়ে পাঁচটি গ্যালারিতে দেখা মিলেছে তরুণ শিল্পীদের সৃজিত চিত্রকলা থেকে ভাস্কর্য, আলোকচিত্র থেকে স্থাপনাশিল্প, কারুশিল্প থেকে মৃৎশিল্প, পারফরমেন্স আর্ট থেকে গ্রাফিক ডিজাইন। তরুণদের সৃষ্ট নানা মাধ্যমের কাজে উদ্ভাসিত হয়েছে জীবন বাস্তবতা থেকে কল্পনার ভুবন। বর্ণিত হয়েছে নগর জীবনের যান্ত্রিকতা থেকে লোকজ বাংলার প্রতিচ্ছবি। উপস্থাপিত হয়েছে সারাদেশের ৩৩৭ তরুণ শিল্পীর ৩৬৮টি শিল্পকর্ম। এবারই প্রথমবারের মতো এ প্রদর্শনীতে শিল্পনির্ভর কিউরেটেড প্রকল্প নিয়ে অংশ নেয় দেশের ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা। এমন বৈভবময় শিল্পয়োজনটির সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় শনিবার সন্ধ্যায়। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনীর শিল্পকর্ম বিষয়ে পর্যালোচনা উপস্থাপন করেন শিল্পসমালোচক মোস্তফা জামান। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। চারুশিল্পের ভুবনে সৃজনের আলোয় উজ্জ্বল এক শিল্পী মুর্তজা বশীর। কাজ করেছেন বহুমাত্রিক মাধ্যমে। এঁকেছেন দেয়াল, শহিদ শিরোনাম, পাখা, রমণী, কলেমা তৈয়বাসহ অসংখ্য সার্থক চিত্রমালা। সামজচেতনায় উদ্বুদ্ধ প্রয়াত এই শিল্পী শিল্পের সমান্তরালে সাহিত্য সৃষ্টিতেও রেখেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর। মুর্তজা বশীরের বৈচিত্র্যময় সেই সামগ্রিক শিল্পযাত্রাকেই মেলে ধরা হয় ধানমণ্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে। ‘মুর্তজা বশীরের সৃষ্টি ও প্রসারিত মন’ শীর্ষক প্রদর্শনীটির সূচনা হয় গত বছরের ১২ অক্টোবর। তিন মাসব্যাপী প্রদর্শনীটির শেষ দিন ছিল শনিবার। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত প্রদর্শনীতে দর্শকরা এক ছাদের নিচে দেখেছে নানা মাধ্যমের শিল্পসম্ভার। সেখানে শোভা পেয়েছে ১৫০টি চিত্রকর্ম, স্কেচ, আলোকচিত্র, ক্যাটালগ, অডিও ক্লিপ, মুর্তজা বশীরের লেখা স্ক্রিপ্টে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নদী ও নারী’র ভিডিও, চিঠিপত্র, পোস্টার ও পেপার কাটিং। এদিন সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয়েছে থিয়েটার ’৫২ প্রযোজিত নাটক ‘কালিদাস’। মহাকবি কালিদাসের জীবনীনির্ভর নাটকটি লিখেছেন অপূর্ব কুমার কুন্ডু। নির্দেশনা দিয়েছেন জয়িতা মহলানবীশ। প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে অপূর্ব কুমার কুন্ডু বলেন, কালিদাসকে নিয়ে ঐতিহাসিক জীবনীগ্রন্থ পাওয়া যায় না, অথচ তাঁর রচিত প্রায় সব গ্রন্থ পাওয়া যায়। সংস্কৃত থেকে সেগুলো বাংলায় অনুবাদের সুবাদে অনায়াসে পড়েও নেয়া যায়। কালিদাসের শৈশব-কৈশোর-যৌবন-বার্ধক্য স্পষ্টভাবে জানা না গেলেও ডালে বসে সেই ডালের গোড়া কাটা কিংবা বাসরঘরে স্ত্রীর ভর্ৎসনাÑ সব তো এককথায় প্রচলিত গল্প। সেসব গল্পের কুয়াশা ভেদ করে কালিদাসকে আপন করে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে এই নাটকে। নাটকে কালিদাস চরিত্রের রূপায়ন করেন মোঃ নজরুল ইসলাম। বিদ্যাবতীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন সেইন্টলী বিশ্বাস। দেবী সরস্বতীর চরিত্রে অভিনয় করেন জয়িতা মহলানবীশ। এছাড়া বাকি চরিত্রে অভিনয় করেন আদিব মজলিশ খান, রুদ্ররায় অপু, সাপলুর রহমান, শেখ আদিব নাহিয়ান ও এম পারভেজ।
×