ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

২০ জানুয়ারি আদালতে উপস্থাপন

পি কে হালদারসহ ৮৩ সহযোগী ও ৪৩ প্রতিষ্ঠানের নাম উঠছে

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ১৭ জানুয়ারি ২০২১

পি কে হালদারসহ ৮৩ সহযোগী ও ৪৩ প্রতিষ্ঠানের নাম উঠছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঋণের আড়ালে অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের মোট অর্থের দুই তৃতীয়াংশের বেশি আত্মসাত করা পি কে হালদারসহ ৮৩ সহযোগী ও ৪৩টি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নাম-পরিচয় উঠছে হাইকোর্টে। ২০ জানুয়ারি বুধবার রাষ্ট্রপক্ষ ওই নথি আদালতে উপস্থাপন করবে বলে জানা গেছে। ওই দিন বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ মামলার শুনানিও অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডিএজি একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিনউদ্দিন মানিক জনকণ্ঠকে বলেছেন, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রতিবেদন পেয়েছি। আমরা অর্থ পাচারের অভিযোগে পি কে হালদারসহ ৮৩ জনের নাম ২০ জানুয়ারি এফিডেভিট আকারে তা হাইকোর্টে দাখিল করব। তথ্য উপাত্তে যাদের নাম এসেছে তার ভিত্তিতে হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দেবে তাতে অর্থনৈতিক অপরাধ কমে আসবে বলে মনে করি। অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী মোঃ খুরশীদ আলম খান বলেছেন, ইতোমধ্যে বিএফ আইইউ ওই রিপোর্ট রাষ্ট্রপক্ষের কাছে জমা দিয়েছে। যা বুধবার আদালতে উপস্থাপন করা হবে। সম্প্রতি এ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে দাখিল করা বিএফআইইউর নথিতে পি কে হালদার ও তার ৮৩ সহযোগী এবং ৪৩ টি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দিয়ে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাত ও পাচারের বিস্তারিত তথ্যও উঠে এসেছে। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যে ফ্রিজ অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর তথ্য অনুযায়ী, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ, শীর্ষ ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ, চীফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার ও ক্রেডিট ডিভিশনের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ২ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাত করা হয়েছে। যা আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি কর্তৃক বিতরণকৃত মোট ঋণের ৩৬৩৪.১৮ কোটি টাকার ৬৭.৯১ ভাগ। এ বিষয়ে ইন্টেলিজেন্স প্রতিবেদনে ৪৩টি ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের নামে প্রদানকৃত ঋণের অর্থের গতিপথসহ প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়েছে। সার্বিক পর্যালোচনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ, শীর্ষ ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ, চীফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার, ক্রেডিট ডিভিশন-এর কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় প্রশান্ত কুমার হালদার এবং সঙ্গীরা ইন্টেলিজেন্স প্রতিবেদনে বর্ণিত ব্যক্তিবর্গ ঋণের আড়ালে নানাবিধ দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির দুই তৃতীয়াংশের বেশি অর্থ আত্মসাত করেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়। উল্লেখ্য, দুর্নীতি ও জালিয়াতি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (২০১৫ সালের সংশোধনীসহ) এর ২(শ) ধারা অনুযায়ী মানিলন্ডারিং এর সম্পৃক্ত অপরাধ। আত্মসাত করা অর্থ আবার নামে বেনামে পাচার হয়েছে ভারত, কানাডা ও সিঙ্গাপুরে। ওইগুলোই আদালতে উপস্থাপন করা হবে। এর আগে দেশের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা ‘আত্মসাতের’ ঘটনায় পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদারসহ ২৫ ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাইকোর্ট। গত ৫ জানুয়ারি বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নিষেধাজ্ঞা দেয়। যে ২৫ ব্যক্তির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় তারা হলেন: বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর এস কে সুর চৌধুরী, হারুনুর রশিদ (ফাস ফাইন্যান্স), পি কে হালদারের বন্ধু উজ্জ্বল কুমার নন্দী, সামি হুদা, পি কে হালদারের চাচাত ভাই অমিতাভ অধিকারী, অবন্তিকা বড়াল, শামীমা (আইএলএফএসএল), রুনাই (আইএলএফএসএল), সাবেক সচিব ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের চেয়ারম্যান এন আই খান, সুকুমার মৃধা (ইনকাম ট্যাক্স আইনজীবী), অনিন্দিতা মৃধা, তপন দে, স্বপন কুমার মিস্ত্রি, অভিজিৎ চৌধুরী, রাজিব সোম, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক পরিচালক ইরফান উদ্দিন আহমেদ, অঙ্গন মোহন রায়, নঙ্গ চৌ মং, নিজামুল আহসান, মানিক লাল সমাদ্দার, সোহেল সামস, মাহবুব মুসা, একিও সিদ্দিকী, মোয়াজ্জেম হোসেন ও পি কে হালদারের মা লীলাবতী হালদার। এ্যাটর্নি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চারটি নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের আত্মসাত করা অর্থের পরিমাণ হাজার হাজার কোটি টাকা। এই চার প্রতিষ্ঠান হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, ফাস ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স। নিজ আত্মীয়-স্বজন ও সহযোগীদের দ্বারা নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান তৈরি করে তিনি এই অর্থ আত্মসাত করে কানাডায় পালিয়ে যান। হাজার হাজার কোটি টাকা কানাডা, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেন। এসব প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচার নিয়েও তদন্ত অব্যাহত রেখেছে দুদক ও বিএফআইইউ। এদিকে পাচারের অর্থে কানাডায় বিলাসী জীবন যাপন করছেন। খুলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। বিদেশে অবস্থান করা পি কে হালদারকে দেশে ফেরাতে দুদকের পদক্ষেপ কি তা জানতে চায় দেশের উচ্চ আদালত। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ এক আদেশের পর দুদকসহ সকল সরকারী সংস্থা পি কে হালদারকে দেশে ফেরাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়। এরই মধ্যে দুদকের দুর্নীতির মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ। ওই পরোয়ানার অনুলিপি ও পি কে হালদারের অপরাধের যাবতীয় নথি দুদক থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকে সেসব নথি পাঠানো হয় ফ্রান্সের লিয়নে ইন্টারপোলের সদর দফতরে। এরপরই পি কে হালদারের বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারি করে ইন্টারপোল। দুদক আইনজীবী মোঃ খুরশীদ আলম খান জনকণ্ঠকে বলেন, পি কে হালদারসহ অর্থ পাচার মামলায় ৮৩ জনের নাম দিয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। যা ২০ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উপস্থাপন করবে। এ ৮৩ জনের মধ্যে রয়েছেন প্রশান্ত কুমার হালদার, রেজাউর রহমান, মিজানুর রহমান, মিসেস সৈয়দা রুহি গজনভী, এম নুরুল আলম, মোঃ নওসের উল ইসলাম, মমতাজ বেগম, আশুতোষ চৌধুরী, উৎপল মজুমদার, বাসুদেব ভট্টাচার্য, পাপিয়া ভট্টাচার্য, প্রিতিশ কুমার হালদার, আফরোজা সুরাইয়া মজুমদার, প্রশান্ত দেউরি, মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, স্বপন কুমার মিস্ত্রি, কাজী মমরেজ মাহমুদ, পূর্ণিমা রানী হালদার (স্বপন কুমার মিস্ত্রির স্ত্রী), রাজিব সোম, শিমু রায় (রাজিব সোমের স্ত্রী), রতন কুমার বিশ্বাস, ওমর শরীফ, উজ্জল কুমার নন্দী, অনিতা কর (উজ্জল কুমার নন্দীর স্ত্রী), উজ্জল মল্লিক, মোস্তান বিল্লাহ, শাহ আলম শেখ, অনন্ত মোহন রায়, সোমা ঘোষ, সুদেব কুমার ভৌমিক, শেখ মইনুল ইসলাম মিঠু, সঞ্জীব কুমার হালদার, সুব্রত দাশ চেয়ারম্যান, শুভ্রা রানী ঘোষ (সুব্রত দাশের স্ত্রী), উত্তম কুমার মিস্ত্রি (স্বপন কুমার মিস্ত্রির ভাই), জতশী মৃধা (উত্তম কুমার মিস্ত্রির স্ত্রী), সুস্মিতা সাহা (প্রিতিশ কুমার হালদারের স্ত্রী), গোপাল চন্দ্র গাঙ্গুলী, মোহাম্মদ আবু রাজিব মারুফ, পুষ্প ব্যাপারি, রাম প্রসাদ রায়, ইরফান উদ্দিন আহম্মেদ, শাহনাজ বেগম, জামিল মাহমুদ, ইমাম হোসেন, অভিজিত অধিকারী, সুকুমার সাহা, অনিশিতা মৃধা (সুকুমার মৃধার মেয়ে), এ কে এম শাহীন রেজা, জোবেদা বেগম, নাহিদ রেজা, এ কে এম হারুন রশীদ, মোঃ মোশারফ হোসেন ভূইয়া, মোঃ শাহাদাত হোসেন, জামাল উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী, রাম প্রশান, শাহ আবরার ফাইয়াজ, মোঃ দেলোয়ার হোসেন, মিলন কুমার দাশ, অমল কৃষ্ণ দাশ, মশিউর রহমান, মোঃ মনিরুল ইসলাম, আসমা সিদ্দিক, কাজী মাহজাবিন মমতাজ, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, মোঃ সোলায়মান চৌধুরী, মোঃ কামারুজ্জামান, মোঃ ইকবাল সাইদ, অরুন কুমার কুন্ডু, মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, মাহফুজা রহমান বেবী, ইনসান আলী শেখ, হাফিজা খানম, এন এম পারভেজ চৌধুরী, লীলাবতী হালদার (পি কে হালদারের মা), অবন্তিকা বড়াল, মোঃ রেজাউল করিম, আরফান আহমেদ খান।
×