ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু

করোনাকালে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা, দেশী-বিদেশী ২২৫ সিনেমা দেখার সুযোগ

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ১৭ জানুয়ারি ২০২১

করোনাকালে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা, দেশী-বিদেশী ২২৫ সিনেমা দেখার সুযোগ

মোরসালিন মিজান ॥ একেবারেই অন্যরকম একটি সময়। বৈরী। বন্ধ্যা। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় সবকিছুই চলছে। আসলে না। পুকুরের জলের মতো কোথায় যেন আটকে আছে সময়। এমন বিরুদ্ধ সময়ে একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজনের চিন্তা কারও কল্পনাতেও আসার কথা নয়। কিন্তু এসেছে এবং শনিবার থেকে দিব্যি শুরু হয়ে গেছে উৎসব। উৎসবটির সঙ্গে সবাই মোটামুটি পরিচিত। হ্যাঁ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। আয়োজক রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি। এবার ১৯তম আসর। তারও আগে ১৮বার উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলা চলচ্চিত্রের সুসময়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে এ উৎসব। তবে অচিরেই এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের সিনেমা মেধা ও বোধ-বুদ্ধিহীন স্থূল চর্চায় পরিণত হয়। হলবিমুখ হয়ে পড়েন দর্শক। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে চলচ্চিত্র উৎসবেও। গত কয়েক বছর স্বাভাবিক সময়েও তেমন দর্শক টানতে পারেনি। করোনাকালে সঙ্কট আরও বড় হওয়ার কথা। কারণ এরই মাঝে খুলে দেয়া হয়েছে সিনেমা হল। কিন্তু তেমন ফল পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায়, অনুমান করা যায়, দর্শক উপস্থিতির বিষয়টি আর মাথায়ই রাখেননি আয়োজকরা। উৎসব আয়োজনের ধারাবাহিকতা রক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তবে এর ফলে যারা নতুন নতুন বিদেশী চলচ্চিত্র দেখতে আগ্রহী, চলচ্চিত্র উৎসবের স্মৃতিতে যারা ফিরে যেতে চান তাদের জন্য একটা ভাল সুযোগ সৃষ্টি হলো। প্রতিবারের মতো এবারও ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে উৎসবের ভেন্যু প্রস্তুত করা হয়েছে। অন্যতম প্রধান ভেন্যু জাতীয় গণগ্রন্থাগার ও জাতীয় জাদুঘর। জাদুঘরের মূল মিলনয়াতনে বিকেলে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। খুব বর্ণাঢ্য কিছু নয়। আবার পানসে শুরুও বলা যাবে না। প্রথমেই ছিল নৃত্যায়োজন। কয়েকটি দলীয় পরিবেশনার মাধ্যমে উৎসবের আনন্দটা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। সংক্ষিপ্ত পরিবেশনা উপভোগ শেষে মঞ্চে উঠে আসেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। না, চলচ্চিত্রের সঙ্গে সরাসরি কোন ব্যক্তিত্বকে এদিন মঞ্চে দেখা যায়নি। উৎসবের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি। বক্তব্য রাখেন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামী। আয়োজকদের পক্ষে কথা বলেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ ও উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা চর্চায় অগ্রণী লেখক গবেষক ও বাঙালী সংস্কৃতির একনিষ্ঠ সাধক মফিদুল হক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। আলোচনা পর্বে উৎসব আয়োজনে সহায়তা করার জন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। সেইসঙ্গে কিছু সঙ্কট তুলে ধরে বলা হয়, স্থায়ী ভেন্যুর অভাবে ভুগতে হচ্ছে আয়োজদের। অনেক বছর ধরে চলা সমালোচনা স্বীকার করে নিয়ে আয়োজকরা বলেন, আমরা রিয়েল প্রজেকশন করতে পারছি না। এ জন্য সরকারের সহায়তা চান তারা। সরকারের প্রতিনিধি অবশ্য এদিন তার লিখিত বক্তব্যের বাইরে খুব একটা যাননি। এর বাইরে অনুষ্ঠানে ঘুরে ফিরেই এসেছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বায়োপিক প্রসঙ্গ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে কথা বলেন। আর ভারতীয় হাইকমিশনার জানান, এ মাসে ভারতে শূটিং শুরু হতে যাওয়া ছবিতে একইসঙ্গে বাঙালীর ‘এপিক স্ট্রাগলটা’ উঠে আসবে। যৌথ প্রযোজনার ছবি দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে বলেও আসাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সর্বোপরী উৎসবটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করার কথা জানান আয়োজকরা। করোনাকালে চ্যালেঞ্জ নিয়ে শুরু করা উৎসবের ইতিবাচক প্রভাব প্রতিক্রিয়া সমাজে সঞ্চারিত হবে বলেই আশা। এ জন্য সবাইকে উৎসবে এসে ছবি দেখার আমন্ত্রণ জানান আয়োজকরা। জাতীয় জাদুঘর ও গণগ্রন্থাগার মিলনায়তন ছাড়াও ছবি দেখা যাবে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ও নৃত্যশালা মিলনায়তনে। এবারই প্রথম একাডেমির খোলামেলা নন্দন মঞ্চে সিনেমা দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছেন আয়োজকরা। এ ব্যবস্থাটি দর্শকদের বিশেষ আকৃষ্ট করবে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্য মিলনায়তনগুলোর মধ্যে রয়েছে আলিয়ঁস ফ্রঁসেস, মধুমিতা সিনেমা হল, স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা সিটি ও সীমান্ত স্কয়ার। উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামান জানান, জাতীয় জাদুঘর ও গণগ্রন্থাগার ছাড়া অধিকাংশ ভেন্যুতে টিকেট ছাড়াই ছবি দেখা যাবে। অনলাইনে ছবি দেখার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে উৎসবে। এবারের উৎসবেও এশিয়ান ফিল্ম প্রতযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, বাংলাদেশ প্যানোরমা, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিলড্রেন ফিল্মস, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট এ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম এবং উইমেন্স ফিল্ম মেকার বিভাগে ৭৪ দেশের ২২৫টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ সেøাগানে শুরু হওয়া উৎসব চলবে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।
×