ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাইডেনের অভিষেকের দিন ওয়াশিংটন ছাড়বেন ট্রাম্প

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ১৭ জানুয়ারি ২০২১

বাইডেনের অভিষেকের দিন ওয়াশিংটন ছাড়বেন ট্রাম্প

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেকের দিন সকালেই রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি ছেড়ে ফ্লোরিডা যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্ট প্রথম দিকে অভিষেকের আগের দিন মঙ্গলবারই রাজধানী ছেড়ে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন; পরে বুধবার সকালে ফ্লোরিডা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার এ কথা জানিয়েছে। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, রয়টার্স, সিএনবিসি, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ফক্স নিউজ, ওয়াশিংটন পোস্ট, লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমস, নিউইয়র্ক টাইমস ও ইন্ডিপেন্ডেন্টের। বাইডেনের অভিষেকে থাকবেন না বলে আগেই ঘোষণা দেয়া ট্রাম্প ওয়াশিংটন ডিসির বাইরে এয়ার ফোর্স ওয়ানের সদরদফতর জয়েন্ট বেস এ্যান্ড্রুজ ঘাঁটিতে তার বিদায় অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করছেন বলেও জানিয়েছে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা। ট্রাম্পের এ পরিকল্পনা যেকোন মুহূর্তে বদলে যেতে পারে; বুধবার কখন তিনি বক্তৃতা দেবেন তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সেক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট হিসেবে এয়ারফোর্স ওয়ানে শেষবারের মতো ভ্রমণের সুযোগ পাবেন ট্রাম্প। বাইডেনের শপথ গ্রহণ হয়ে গেলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফ্লোরিডার মার এ লাগোতে এয়ারফোর্স ওয়ান নিয়ে অবতরণের সম্ভাবনা নেই। তাকে এমন সুবিধা নিতে হলে নতুন শপথ নেয়া প্রেসিডেন্টের অনুমোদন নিতে হবে। ট্রাম্পের বিদায়বেলা কর্মকর্তারা বিস্তৃত অনুষ্ঠানের কথা ভাবছেন, যাতে ট্রাম্পের মনে কোন রাষ্ট্রীয় সফরের মতো অনুভব তৈরি হয়। থাকবে লালগালিচা, কালার গার্ড, সামরিক ব্যান্ড ও ২১-বার তোপধ্বনি দিয়ে তাকে বিদায় দেয়ার বিষয়টি। এরপর এয়ারফোর্স ওয়ানে ফ্লোরিডার উদ্দেশে উড়াল দেবেন তিনি। ওয়াশিংটন ছেড়ে ট্রাম্প যাবেন ফ্লোরিডার পাম বিচে; সেখানে মার-আ-লাগো অবকাশযাপন কেন্দ্রেই শুরু হবে তার প্রেসিডেন্ট-পরবর্তী জীবন। হোয়াইট হাউসে তার উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করা একাধিক ব্যক্তিও সেখানেই তার সঙ্গে কাজ করার পরিকল্পনা করছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হোয়াইট হাউসের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা অভিষেকের আগে হোয়াইট হাউসে বাইডেনের সঙ্গে একটি বৈঠকের আয়োজন করতে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ জানালেও এখন পর্যন্ত সে অনুরোধে সাড়া দেয়ার কোন লক্ষণই ট্রাম্পের মধ্যে দেখা যায়নি। এক জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেছেন, বাইডেনের শপথের আগে তাকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানাতে ট্রাম্পকে অনুরোধ জানিয়েছেন তার কয়েক উপদেষ্টা। তবে এতে কান দিচ্ছেন না ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দুই দফা অভিশংসিত হওয়া একমাত্র প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার বিদায়ের আগে আরও অনেককে ক্ষমা ও দায়মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা করছেন। তিনি নিজেই নিজেকে ক্ষমা করে দেয়ার নজিরবিহীন পদক্ষেপ নেয়ার কথাও ভেবে দেখছেন বলে তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন জানিয়েছেন। কমলাকে অভিনন্দন জানালেন পেন্স ॥ মার্কিন নির্বাচনে জয়লাভের প্রায় দেড় মাস পর নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। প্রথা অনুযায়ী চিঠি নিয়ে শঙ্কা ॥ যুক্তরাষ্ট্রের প্রথা অনুযায়ী, বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওভাল অফিসের ড্রয়ারে একটি চিঠি রেখে যান পরবর্তী প্রেসিডেন্টের জন্য। যেখানে উত্তরসূরিকে নানা বিষয়ে পরামর্শ দেয়া থাকে বিদায়ী প্রেসিডেন্টের। ট্রাম্প তার উত্তরসূরি বাইডেনের জন্য এমন কোন চিঠি রেখে যাবেন কি না- এ নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের নিয়ে বাইডেনের পরিকল্পনা ॥ করোনার টিকা প্রদান কার্যক্রমে গতি আনতে নিজের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন বাইডেন। সিরিঞ্জসহ টিকা প্রদানের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম উৎপাদন বৃদ্ধির নির্দেশ দেবেন তিনি। এছাড়া বাইডেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ফেডারেল দুর্যোগ প্রশমন কর্মীরা স্থাপন করবেন হাজার হাজার টিকাদান কেন্দ্র। মার্কিন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ ॥ যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রী এ্যালেক্স এ্যাজার পদত্যাগ করেছেন, কারণ হিসেবে তিনি মার্কিন ক্যাপিটল ভবনে হামলার কথা উল্লেখ করেছেন। মার্কিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘ক্রিয়াকলাপ ও বাগাড়ম্বর’ প্রশাসনের উত্তরাধিকারকে কলঙ্কিত করেছে বলে পদত্যাগপত্রে অভিযোগ করেছেন তিনি। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে ১২ জানুয়ারি এ্যাজার পদত্যাগপত্র পেশ করেছেন এবং শুক্রবার এর একটি কপি গণমাধ্যমের হাতে পৌঁছায়। ট্রাম্পকে সম্বোধন করা চিঠিটিতে এ্যাজার জানিয়েছেন, গত চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগ সেরা সাফল্য অর্জন করেছে বলে মনে করেন তিনি। এ্যাজার লিখেছেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে, নির্বাচনের পর ক্রিয়াকলাপ ও বাগাড়ম্বর, বিশেষকরে গত সপ্তাহের, এই প্রশাসনের এসব ও অন্যান্য ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে কলঙ্কিত করার হুমকিতে ফেলেছে। ক্যাপিটালে হামলা ছিল আমাদের গণতন্ত্রের ওপর এবং ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরের ঐতিহ্য যা বিশ্বে আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র প্রথম প্রবর্তন করেছে তার ওপর আক্রমণ। আমি আপনাকে (ট্রাম্প) দ্ব্যর্থহীনভাবে যেকোন ধরনের সহিংসতার নিন্দা অব্যাহত রাখার, কেউ যেন ওয়াশিংটন বা অন্য কোথাও অভিষেক অনুষ্ঠান বিঘ্নিত করার উদ্যোগ না নেয় তার দাবি জানানোর এবং ২০ জানুয়ারি শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে অকপটভাবে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করছি। ২০ জানুয়ারি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের টিম দায়িত্ব গ্রহণ করা পর্যন্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন বলেও এ্যাজার জানিয়েছেন। এ্যাজার প্রথমেই করোনা মহামারীর কথা উল্লেখ করেছেন আর এখন পর্যন্ত এটি ট্রাম্পের প্রশাসনের সবচেয়ে বড় পরিণতি। এই মহামারীতে যুক্তরাষ্ট্রের তিন লাখ ৯০ হাজার বাসিন্দার মৃত্যু হয়েছে এবং আক্রান্ত হয়েছেন দুই কোটি ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় আগে মার্কিন পার্লামেন্টে নজিরবিহীন হামলার ঘটনা ঘটে। দেশটির আইন প্রণেতারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদনের জন্য পার্লামেন্ট ভবনে এক যৌথ অধিবেশনে বসেছিলেন। সেসময় ট্রাম্পের সমর্থকরা ওই ভবনে ঢুকে পড়েন। সেখানে নজিরবিহীন তাণ্ডব চালানো হয়। এতে কমপক্ষে চারজন বিক্ষোভকারী ও এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়। ওই ঘটনার পরপরই হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের পদত্যাগের খবর আসতে থাকে। বাইডেনের শপথ নেয়ার আগেই ট্রাম্প প্রশাসনে একের পর এক পদত্যাগের খবর সামনে আসছে। ক্যাপিটাল ভবনে হামলার পর পরই হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সারাহ ম্যাথিউস, সোশ্যাল সেক্রেটারি রিকি নিকেটা ও ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের চীফ অব স্টাফ স্টেফানি গ্রিশ্যাম পদত্যাগপত্র জমা দেন। বিবৃতিতে নিজের পদত্যাগের বিষয়ে সারাহ ম্যাথিউস জানান, ট্রাম্প প্রশাসনে সেবা দিতে পেরে এবং যে নীতিগুলো আমরা গ্রহণ করেছি তাতে আমি গর্বিত। আমি যা দেখেছি তাতে আমি ভীষণভাবে বিরক্ত। আমি আমার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি যা এই মুহূর্ত থেকে কার্যকর হবে। আমাদের জাতির একটি শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর প্রয়োজন। মেলানিয়া ট্রাম্পের চীফ অব স্টাফ গ্রিশ্যাম এক টুইট পোস্টে বলেন, হোয়াইট হাউসে কাজ করে দেশকে সেবা দিতে পারাটা গর্বের ব্যাপার। মেলানিয়া ট্রাম্পের মিশনে বিভিন্ন স্থানে শিশুদের সহযোগিতা করতে পেরে ও এই প্রশাসনের অনেক অর্জনের অংশ হতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি। স্টেফানি গ্রিশ্যাম ও রিকি নিকেটা ট্রাম্প প্রশাসনে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করা কর্মকর্তাদের অন্যতম। গ্রিশ্যাম এর আগে হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ পরিচালক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। ট্রাম্প প্রশাসনের আরও কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাও পদত্যাগের বিষয়ে বিবেচনা করছেন বলেও গুঞ্জন উঠেছে। এদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক রবার্ট ওব্রেইন, উপ জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক ম্যাট পটিংগার ও ডেপুটি চীফ অব স্টাফ ক্রিস লিডেল। ট্রাম্প কি‘নিউক্লিয়ার ফুটবল’ দেবেন ॥ মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেখানেই যাতায়াত করুন না কেন, সবখানেই তার সঙ্গে ৪৫ পাউন্ড ওজনের একটি বিশেষ ব্রিফকেস থাকে। এই বিশেষ ব্রিফকেসকে বলে নিউক্লিয়ার ফুটবল। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে থাকা সামরিক লোকজন এই নিউক্লিয়ার ফুটবল বহন করেন। আর প্রেসিডেন্টের পকেটে একটি কার্ডে থাকে নিউক্লিয়ার কোড। নিউক্লিয়ার কোডের এই কার্ডকে ‘বিস্কুট’ বলা হয়। হোয়াইট হাউসের ক্ষমতার পালা বদলে এবার ‘নিউক্লিয়ার ফুটবল’ ও ‘বিস্কুট’ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ২০ জানুয়ারি সকালে বা তার আগের দিনও যদি ট্রাম্প ফ্লোরিডা চলে যান তাহলে নিউক্লিয়ার ফুটবল ও বিস্কুট হস্তান্তর করা হবে কিভাবে এ নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম নানা জল্পনা-কল্পনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক হাজার মাইলের দূরত্বে ট্রাম্প ও বাইডেন অবস্থান করলে হস্তান্তরে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যে মুহূর্তে বাইডেন শপথ গ্রহণ করবেন, সে মুহূর্ত থেকেই নিউক্লিয়ার ফুটবল ও বিস্কুট তার নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা। হাজার মাইলের দূরত্বে থাকা দুজনের মধ্যে এ হস্তান্তরের বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে। হোয়াইট হাউসের সামরিক কর্মকর্তারা বলছে, সেক্ষেত্রে দুটি নিউক্লিয়ার ফুটবল প্রস্তুত রাখা হবে। বাইডেনের শপথ নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্রাম্পের বিস্কুটের কোড অকার্যকর হয়ে পড়বে। ধারালো তারকাঁটা দিয়ে ঘেরাও করা হলো কংগ্রেসকে ॥ ভেতরে শত শত সেনা, বাইরে হাজার হাজার। হাতে অত্যাধুনিক সব মারণাস্ত্র। চলছে দিনরাত পাহারা-টহল। এবার প্রাচীরের ওপর বসানো হয়েছে ক্ষুরধার কাঁটাতার। ঘিরে ফেলা হয়েছে পুরো কংক্রিট চত্বর। যেন কাক-পক্ষীও ঢুকতে না পারে। দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই এটি মার্কিন পার্লামেন্ট ভবন-মার্কিন রাজনীতির পাওয়ার হাউস, গণতন্ত্রের শেষ ভরসা! ক্যাপিটাল হিল এখন এমনই এক ভয়ঙ্কর দুর্গ। বাইডেনের অভিষেকে হামলার আশঙ্কায় নিñিদ্র নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে মার্কিন গণতন্ত্রের কেন্দ্রস্থল। বাইডেনের শপথের আর মাত্র তিন দিন বাকি। তার আগেই রাজধানী ওয়াশিংটনজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এমন জোরদার করা হয়েছে যে, মার্কিন ইতিহাসে যা একেবারেই নজিরবিহীন। রাজধানীকে তাই ডাকা হচ্ছে ‘ফোরট্রেস ওয়াশিংটন’ বলে।
×