ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে বৃদ্ধার একই ঘরে গরুসহ বসবাস

প্রকাশিত: ১৭:০৮, ১৬ জানুয়ারি ২০২১

কুড়িগ্রামে বৃদ্ধার একই ঘরে গরুসহ বসবাস

রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম ॥ আশি-উর্ধ বিধবা বৃদ্ধা শান্তি রানী। প্রায় সময় তার অনাহারে-অর্ধাহারে কাটে দিন। অভাবের তাড়নায় অন্য ছেলেরা আলাদা করে দিয়েছেন বৃদ্ধা মাকে। উপায়হীন তিনি। মানুষের সাহায্যে জীবনটাকে কোন রকমে বেঁচে রেখেছে। তিন দশক আগে স্বামী মারা গেলেও সন্তানদের খুব কষ্টে বড় করেছেন। এক সময় মানুষের বাড়ীতে আর জমিতে কৃষি কাজ করলেও এখন বয়সের ভারে তা পারেন না। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকে না। নানা দুভোর্গে কোন রকমে দিন কাটছে তার। কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলা চাকিরপশার ইউনিয়নের মালিরপাড় গ্রামের বিধবা শান্তি রাণী। স্বামী সুধীর চন্দ্র মারা গেছেন তিন দশক আগে। স্বামী মারা যাবার সময় তিন শতক জায়গার উপর ভিটে মাটি রেখে গেছেন। সন্তানরা বড় হয়ে যাবার পর এতটুকু জায়গায় আলাদা আলাদা করে নিজেদের ঘর তৈরী করে সংসার করছেন। মাকে তারা আলাদা করে দিয়েছেন। শান্তিরানী তার নিজের থাকার ঘরেই একদিকে বিছানা অন্যদিকে খড় বিছানো গরুর থাকার জায়গা করে যুগের পর যুগ কাটাছেন। এভাবেই শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা পার করছেন তিনি। ছেলে ০৩জন আর মেয়ে ০৪জন। ছোট ছেলে বাদে সকলের বিয়ে হয়ে গেছে। শান্তি রাণীর পাশের ঘরে থাকে ছোট ছেলে অমৃত চন্দ্র সরকার। স্বামী মারা যাবার পর সন্তানদের মানুষ কারার জন্য শান্তি রাণী মানুষের বাসায় এবং কৃষি কাজ করেছিল। এখন বয়সের ভারে ন্যুজ¦ হয়ে পড়ায় খাটতে পারেন না। তাই সন্তান কিংবা প্রতিবেশিদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। চলাফেরা করতে পারলেও পরিশ্রম করতে পারেন না। মানুষের কাছ থেকে একটি গরু আদী (গরুর বিনিময়ে গরু পাওয়ার শর্তে) নিয়ে সেই গরু লালন পালন করেন। সেই গরু থেকেই তিনি একটি গরু পেয়েছেন। জরাজীর্ণ ঘরে জায়গা সংকুলান না থাকার কারণে গরুর গোয়াল তৈরি করতে পারেননি। ফলে বাধ্য হয়ে নিজ ঘরেই গরুসহ দিন পার করছেন তিনি। শান্তি রাণী জানান, আমার থাকার ঘর নেই। চুরির ভয়ে গরু গুলিকে নিজের ঘরেই রাখি। ছেলে দিনমজুরি করে। দিন আনে দিন খাই না হলে খাই না। তিনি আরও বলেন মেয়ের বিয়ের সময় ধার দেনা করে সব শেষ হয়ে গেছে। দু বছর আগে একটি বয়স্ক ভাতার একটি কার্ড পেয়েছি তাতেও উপকার হয়েছে। তার একটি গরু থেকে এখন দুটো গরু হয়েছে। শত কষ্টেও তিনি এতে খুশী। শান্তি রাণীর বড় ছেলে প্রবিত্র চন্দ্র সরকার জানান,কাঠমিস্ত্রির কাজ করেই চলে। নিজের পরিবার নিয়ে চলা দায়। তাই এমনিতেই মায়ের খোঁজ রাখলেও ভরণ-পোষণ নিতে না পেরে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে মা কে আলাদা করে দিয়েছেন। প্রতিবেশি স্বপ্না রাণী বলেন, প্রায় বিশ বছর ধরে এমন মানবেতর জীবন-যাপন করছেন বিধবা শান্তি রাণী। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তেমনটি খোঁজ খবর রাখে না। শান্তি রানীর জীর্ণ ঘর থাকলেও নেই কোন স্যানিটেশন ব্যবস্থা। খোলা জায়গা বা প্রতিবেশিদের বাড়িতে গিয়ে সাড়েন প্রাকৃতিক কাজ। প্রতিবেশি গিতা রাণী বলেন,বৃষ্টি আসলে শান্তি রাণীর কষ্ট আরো দ্বিগুণ হয়ে যায়। বাইরে রান্না চুলা ভিজে যায়। রান্না করতে পারে না। বেশির ভাগই সময় না খেয়ে দিন পার করেন ছেলে-মা। বছর খানেক আগে আঙ্গিনায় পিছলে পড়ে শান্তি রাণীর হাত ভেঙ্গে যায়। টাকা অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেনি। তার হাত এখনও ভাল হয়নি। রাজারহাট চাকিরপশার ইউপি ৩নং ওয়ার্ড মেম্বার সন্তোষ চন্দ্র মোহন্ত শান্তি রাণীর দুর্বস্থার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সরকারি বিধি মোতাবেক একই পরিবারকে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেবার নিয়ম নেই। এরপরও বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কথা বলে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরে তাসনিম জানান, শান্তি রাণীর বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমি খোঁজখবর নিয়ে সরকারের সুযোগ-সুবিধা দেবার উদ্যোগ নেব।
×