ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পরিকল্পিত নগরায়ণ না করে যানজট নিরসনে অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ২৩:২২, ১৬ জানুয়ারি ২০২১

পরিকল্পিত নগরায়ণ না করে যানজট নিরসনে অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ আধুনিক যন্ত্র যুগে বগুড়া নগরীতে পরিকল্পনা না নিয়ে যন্ত্র চালিত রিক্সা ও দুই যাত্রী আসনের ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক (অটো বা টোটা) প্রধান সড়কে চলাচল করতে না দেয়ায় সুধীজনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে যন্ত্র চালিত রিক্সার মালিকরা বলছেন, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় পৌরসভা আইনকে সংশোধন কর যন্ত্র চালিত রিক্সা চলাচলের ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার অনুমতি দিয়েছে। শহরে চলাচলের ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। দেশের অনেক পৌরসভা লাইসেন্স দিয়েছে। বগুড়া পৌরসভা যন্ত্র যুগে আধুনিক যানবাহনের গতি রুদ্ধ করে লাইসেন্স দিচ্ছে না। পৌরসভা ও পুলিশ প্রশাসন বলেছে শহরে যানজট কমাতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাধারন মানুষ বলছে কোন পরিকল্পনা ছাড়াই এলামেলো ও বিচ্ছিন্নভাবে শহরের পয়েন্টগুলোতে যন্ত্রচালিত তিন চাকার যানবাহন চলাচলের প্রতিবন্ধতার সৃষ্টি করা হয়েছে। বিকল্প পথের নির্দেশনাও নেই। এই অবস্থায় নারী, বয়স্ক ব্যক্তি, অসুস্থ রোগী এবং প্রয়োজনীয় কাজে সাধারণের নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়া যাত্রীরা বিপাকে পড়েছে। পৌরসভা ও পুলিশ প্রশাসনের অপরিকল্পিত এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি বগুড়ার হাজারো যন্ত্রচালিত রিক্সা চালক। প্রথম দফায় ৭ জানুয়ারি তারা শহরের দক্ষিনে বনানী থেকে কেন্দ্রস্থল সাতমাথা পর্যন্ত প্রতিবাদী পদযাত্রা কর্মসূচী পালন করেছে। এরপর তারা যন্ত্র চালিত যানবাহন চলাচলের যৌক্তিক কারন দেখিয়ে সমাবেশ করেছে। তাদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বগুড়ার সুধীজন। আগামী ২৪ জানুয়ারি তারা দ্বিতীয় দফার আন্দোলনে মাঠে নেমে শহরের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে প্রতিবাদী পদযাত্রা করবে। আন্দোলনের নেতারা বলছেন, হয় পৌরসভা তিন চাকার যন্ত্র যানের লাইসেন্স দেবে। না হয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বগুড়া শহরে সকল ধরনের তিন চাকার যন্ত্র যান বন্ধ রাখা হবে। ইতিহাস অনুসন্ধানী বগুড়ার প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুর রহিম বগ্রা স্পষ্ট করেই বলেছেন, একদিকে যন্ত্র প্রযুক্তিকে সঙ্গে নিয়ে জীবন ও উন্নয়নের গতি বাড়ানোকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। আরেকদিকে সেই প্রযুক্তির আবিষ্কৃত যানবাহনকে মানুষের প্রয়োজনীয় এলাকায় চলাচল করতে না দিয়ে গতিকে রুদ্ধ করা হচ্ছে। বগুড়া পৌরসভা ও প্রশাসনের এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড যন্ত্র প্রযুক্তির চলমান গতির প্রতিবন্ধক হয়েছে। অটোরিক্সা-ভ্যান শ্রমিক মালিক সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি কবির হোসেন বলেন, সরকার ইজিবাইক (অটো) সহ ব্যাটারি চালিত উন্নত যানবাহন আমদানি করছে। শোরুমে বিক্রি হচ্ছে। একজন চালক অনেক ধার দেনা করে জীবিকা নির্বাহে এই যানবাহন কিনছে। তারা সাধারণের দ্রুত যাতায়াত, শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দ্রুত পৌঁছানো, অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছানো, বাজার শপিং মলে যাওয়াসহ মানুষের জীবনের গতি বাড়িয়েছে। শ্রমিক নেতা আব্দুল হাই বলেন, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ২০০৯ সালের পৌরসভা আইনকে সংশোধন করে ২০১৪ সালের ২১ অক্টোবর গেজেট প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত গেজেটের ৬ নম্বর অনুচ্ছেদের ১৭ নম্বরে উল্লেখ আছে- তিন চাকার যান্ত্রিক যানবাহনের ট্রেড লাইসেন্স দিতে পারে পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন। ইতোমধ্যে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নাটোর পৌরসভা সহ দেশের অনেক পৌরসভা ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে। বগুড়া পৌরসভা কেন লাইসেন্স দেবে না তার যুক্তি দেখায় নি। শ্রমিকরা বলেন, গেল ১ জানুয়ারি থেকে শহরে যানজট কমানোর যুক্তিতে সাধারনের জরুরী প্রয়োজনের সড়কগুলোতে ইজি বাইক ও যন্ত্র চালিত রিক্সা চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। অথচ এর আগে প্রধান সড়কে এই ধরনের যানবাহন চলেছে। ঐক্যপরিষদের নেতৃবৃন্দ পৌরসভা থেকে অটো রিক্সা ভ্যানের ট্রেড লাইসেন্স প্রদান, প্রধান সড়কে প্রাইভেট কার মোটরসাইকেলসহ সকল গাড়ি পার্কিং বন্ধ, ফুটপাথ দখলমুক্তসহ ৫ দফা দাবি জানিয়েছে। সুধীজন বলছেন যানজটের অন্যতম একটি কারণ হলো প্রধান সড়কের ধারে যত্রতত্র মোটর গাড়ি মোটরসাইকেল পার্কিং করে রাস্তাকে সঙ্কুচিত করা। কয়েক গৃহিণী ও তরুণী বললেন প্রয়োজনীয় কেনাকাটায় নিউমার্কেটে সরাসরি যেতে পারেন না। শেরপুরে রোডে অটোর একজন অসুস্থ রোগীকে দেখা গেল হাসপাতালে দ্রুত পৌঁছাতে পারছেন না। কয়েক শিক্ষার্থী জানালো কয়েকদিন পর কলেজ খুলবে। তারা কিভাবে দ্রুত পৌঁছবে। একজন শিক্ষক বললেন পরিকল্পিত নগরায়ন না করে জনদুর্ভোগের সিদ্ধান্ত নেয়া সমীচীন নয়। এই বিষয়ে পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান বলেন বিষয়টি নিয়ে তিনি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলবেন।
×