ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শাহজালালে কোয়ারেন্টাইন, লন্ডনফেরত যাত্রীদের ভোগান্তি

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ১৬ জানুয়ারি ২০২১

শাহজালালে কোয়ারেন্টাইন, লন্ডনফেরত যাত্রীদের ভোগান্তি

আজাদ সুলায়মান ॥ লন্ডন থেকে কাতার হয়ে দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে ঢাকায় নেমেই বিপাকে পড়েন কাজী মোহসেন দম্পতি। সঙ্গে তাদের দুই মাসের শিশু। সকাল ৯টা ৫৬ মিনিটে ফ্লাইট ল্যান্ড করার পর বিমানবন্দর থেকে কোয়ারেন্টাইন প্রক্রিয়ায় তাদেরকে দীর্ঘ সময় সীমাহীন ভোগান্তি সইতে হয়েছে। সকাল দশটায় বিমানবন্দরে অবতরণ করলেও তাদেরকে হোটেলে যেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে বেলা দেড়টা পর্যন্ত। এখানকার কোয়ারেন্টাইন ম্যানেজমেন্টে থাকা বিভিন্ন সংস্থার লোকদের সমন্বয়হীনতার দরুন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে এই দম্পতিকে। শুধু তাদেরই নয়- অন্যদেরও একই পরিণতি হচ্ছে। বিমানবন্দর সূত্র জানায়-শুক্রবার সকাল ৯ টা ৫৬ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে কাতার থেকে আসা একটি ফ্লাইট। তাতে লন্ডনের যাত্রী ছিল ৬ জন। কাজী মোহেসেন, তার স্ত্রী ও দু’মাসের শিশুকে নিয়ে তারা যথারীতি হেলথ ডেস্কে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কাগজপত্র চেক করা হয়। শরীরের তাপমাত্রা মেপে করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেট যাচাই করে স্বাভাবিক পাওয়া যায়। পরের প্রক্রিয়া তাদের ইমিগ্রেশন ছাড়পত্র ও লাগেজ সংগ্রহ করে হেলথ ডেস্কেই বসে থাকতে হয়। সেখানে প্রায় তিনঘণ্টা বসে থাকতে হয় কোন ধরনের কারণ ছাড়াই। এদিকে তাদের জন্য বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন স্বজনরা। কিন্তু ভেতর থেকে বলা হয়-সব কাজ শেষ হওয়ার পরও হেলথ কাউন্টারে তাদেরকে অপেক্ষা করতে হয়। বেলা সোয়া একটায় বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শাহরিয়ার সাজ্জাদকে ফোন করা হলে তিনি জানান- সব প্রক্রিয়া শেষ করার পরও তাদেরকে নিতে গাড়ি আসেনি। সকাল ১১টা ৩৮ মিনিটে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে খবর পাঠানো হয় কোয়ারেন্টাইনের দায়িত্বে থাকা লোকজনকে এসে নিয়ে যেতে। কিন্তু তারা সঠিক সময়ে আসেনি। শেষ পর্যন্ত আমি নিজে তৎপর হয়ে বিমানবন্দরে এসে কাজী মোহসেন পরিবারকে বেলা দেড়টায় বিমানবন্দর ছাড়তে সহায়তা করি। একই সঙ্গে অপর তিন যাত্রীকেও নিয়ে যাওয়া হয় আশকোনা হজ ক্যাম্পের কোয়ারেন্টাইনে। ্জানা গেছে- শুক্রবার ওই ফ্লাইটে ৬ যাত্রীর কোয়ারেন্টাইন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও তাদেরকে আড়াই ঘণ্টার মতো বিমানবন্দরে বসে থাকতে হয়েছে কোন কারণ ছাড়াই। কাজী মোহসেন তার দু’মাসের বাচ্চাকে নিয়ে এ সময়টা চরম ভোগান্তির শিকার হন। দীর্ঘ ভ্রমণ করায় ক্লান্ত-শ্রান্ত এই পরিবারকে কেন আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় কোন কারণ ছাড়াই বসে থাকতে হয়েছে; তার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি কেউ। জানতে চাইলে বিমানবন্দর বিভাগীয স্বাস্থ্য প্রধান ডাঃ সাজ্জাদ শাহরিয়ার বলেন-আমাদের কোন গাফিলতি নেই। সঠিক সময়ে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কাজী মোহসেনকে উত্তরার হোয়াইট প্যালেস হোটেলে নিয়ে যাবার জন্য প্রস্তুত রাখা হলেও অপেক্ষা করতে হয়েছে। এ দায় আমাদের নয়। যারা হোটেলে নেয়, তাদের। জানতে চাইলে ঢাকা জেলা সিভিল সার্জন মাইনুল দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, হেল্থ বিভাগের অর্পিত দায়িত্ব সঠিক কাজ সঠিক সময়েই করা হয়েছে। হোটেলে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তাদের নয়। এ বিষয়ে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের এক কর্মকর্তা বলেন -কাতারের দোহা হয়ে লন্ডন থেকে আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টাইন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ডেডিকেটেড কাউন্টার রয়েছে। ওই ৬ জনের জন্য প্রয়োজনীয় কাজটুকু মাত্র সম্পন্ন করতে কিছুতেই এক ঘণ্টার বেশি লাগার কথা নয়। তারপর লাগেজ ও ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে বেশি সময় লাগার নয়-বড়জোর আরও আধ ঘণ্টা। মাত্র দেড় ঘণ্টায়ই সব করা সম্ভব। সকাল দশটায় অবতরণ করার পর তাদেরকে বিমানবন্দর ত্যাগ করতে কিছুতেই সাড়ে তিনঘণ্টা লাগার নয়। আসলে এজন্য কোয়ারেন্টাইনে থাকা একাধিক সংস্থার প্রতিনিধিদের মধ্যে সমন্বয়ের প্রচণ্ড অভাব আর উদাসীনতাই দায়ী। তারা আরেকটু আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে ওই দম্পতিকে এতটা সময় দু’মাসের বাচ্চা নিয়ে বিমানবন্দরে বসে থাকতে হতো না। শুধু ওই দম্পতিই নয়- প্রায়ই লন্ডন থেকে আসা যাত্রীদের এভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। কোয়ারেন্টাইন শিথিলে যাত্রী বাড়ছে ॥ এদিকে কোয়ারেন্টাইনের সময়সীমা ১৪ দিনের পরিবর্তে ৪ দিন করায় লন্ডন থেকে যাত্রী দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দেশে ফিরবেন কি ফিরবেন না- এ নিয়ে যারা এতদিন সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন তাদের অনেকেই এখন স্বাস্থ্য অধিদফতরের নতুন নির্দেশনায় দ্রুত দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বিভিন্ন এয়ারলাইন্স অফিসে টিকেট কাটার জন্য অনেকেই ভিড় করছেন।
×