ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চসিক নির্বাচন

ছুটির দিনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচার

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ১৬ জানুয়ারি ২০২১

ছুটির দিনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচার

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনের আর বাকি মাত্র ১১ দিন। প্রচারে ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব এলেও জনজোয়ার বলতে যা বোঝায়, তা এখনও দৃশ্যমান নয়। ফলে প্রার্থীরা পাড়া-মহল্লা ও অলিগলিতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে ভোটকেন্দ্রে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে তৎপর। নির্বাচন কমিশনও ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করার প্রচারে নেমেছে। বিশেষ করে সর্বাধিক জোর দেয়া হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ওপর। এখনও পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনীত এক কাউন্সিলর এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে একজনের মৃত্যুর ঘটনা বাদ দিলে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বেশকিছু পাল্টাপাল্টি অভিযোগ জমা পড়েছে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে। এদিকে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার আরও বেগবান হয়। এতে সমর্থকদের অংশগ্রহণও ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। আগামী ২৭ জনুয়ারির নির্বাচনে সাত মেয়রসহ মোট ২৩৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোট হবে সংরক্ষিত ১৪টি নারী ওয়ার্ড এবং ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে। তবে একটি ওয়ার্ডে একক প্রার্থী থাকায় সেখানে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের প্রয়োজন হবে না। ওয়ার্ডটি হল পূর্ব বাকলিয়া। সেখানে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। চসিকে এবার মোট ভোটার ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার নয় লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ এবং পুরুষ ভোটার নয় লাখ ৯২ হাজার ৩৩। মোট ৭৩৫টি কেন্দ্রে এ ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ জমা পড়েছে ১৭টি। এর মধ্যে পাঁচটি অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলের মেয়র প্রার্থী একে অপরের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর একটি অভিযোগসহ মোট পাঁচটি অভিযোগ জমা পড়ে। অজ্ঞাত কিছু সন্ত্রাসী প্রচারে বাধা এবং মাইক ভাংচুর করেছে বলে অভিযোগ করেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মোঃ হাসানুজ্জামান। বিএনপি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়- অভিযোগ রেজাউলের ॥ আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী শুক্রবার তার নেতাকর্মী ও বিপুলসংখ্যক সমর্থক নিয়ে গণসংযোগ করেন পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে। তিনি ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় এবং উন্নয়নের স্বার্থে নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়। এটা প্রমাণিত। দেশে অগ্রযাত্রা বজায় রাখতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগকেই বিজয়ী করতে হবে। এর আগে সকালে রেজাউল করিম চৌধুরী নির্বাচনী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় এক মতবিনিময় সভা। এতে বক্তব্য রাখেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, মীরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন প্রমুখ। আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন তার বক্তব্যে ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়াতে ঘরে ঘরে গিয়ে উদ্বুদ্ধ করতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কারের সুপারিশ করে বলেন, যারা বিদ্রোহীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে, তাদের বিষয়েও কঠোর সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আমরা যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি, তারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কাজ করতে পারি না। তাছাড়া মনোনয়ন চেয়ে যারা আবেদন করেছিলেন, প্রত্যেকেই দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দলীয় পদ হারাবেন বলে মুচলেকায় উল্লেখ ছিল। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রার যুগপূর্তি, মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আমরা নৌকার বিজয়ের মধ্য দিয়ে পালন করতে চাই। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী হিসেবে চট্টগ্রামের মেয়র পদে আমাদের প্রার্থীর বিজয় অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। বক্তব্যে তিনি নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে উন্নয়নের বার্তা নিয়ে গিয়ে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করার আহ্বান জানান। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দশকে বাংলাদেশ কতদূর এগিয়েছে তা তুলে ধরতে পৃথক পৃৃথক কর্মসূচী নিয়ে পাড়া মহল্লায় গিয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে এই কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করে ঘরে ঘরে উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিয়ে নৌকায় ভোট চাইতে হবে। মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আমরা নির্বাচনে বিশ^াসী, গণমানুষের রায়ে বিশ^াসী। সুষ্ঠু, সুন্দর ও উৎসবমুখর পরিবেশে উন্নয়নের প্রতীক নৌকায় ভোট দিতে মানুষ ভোট কেন্দ্রে আসবে বলে আমি আশাবাদী। তিনি বলেন, গণসংযোগে নৌকা ও আওয়ামী লীগের প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত মানুষের অংশগ্রহণ দেখে বিএনপি নানা অজুহাত তুলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে পরাজয়ের গ্লানি এড়াতে চাইছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযান দাবি ডাঃ শাহাদাতের ॥ বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেন শুক্রবার ব্যাপক গণসংযোগ চালান চকবাজার ওয়ার্ডে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর এবং উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। প্রচারকালে তিনি নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সকল বৈধ অস্ত্র জমা নিয়ে সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করার দাবি জানান। তিনি বলেন, প্রতিটি নির্বাচনের আগে নিয়মানুযায়ী সকল বৈধ অস্ত্র জমা নিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসন তৎপর থাকে। কিন্তু চসিক নির্বাচনে প্রশাসন এখনও পর্যন্ত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান কিংবা বৈধ অস্ত্র জমা নেয়ার কোন ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে প্রতিদিন ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের ঝনঝনানি, হানাহানি শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে পাঠানটুলি ও বাকলিয়াতে নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি ও ছুরিকাঘাতে দুজন নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নগরীর হালিশহর রামপুর ওয়ার্ডের বড়পুকুর পাড়ে ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার লাগাতে গেলে যুবলীগ কর্মীরা হামলা চালায়। সকালে তিনি নগরীর চকবাজার ধনিরপুলস্থ ডিসি রোড়ে মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করেন। পরে তিনি ধনিরপুল থেকে চকবাজার ওয়ার্ডের গণসংযোগ শুরু করে সিরাজউদৌলা রোড়, চন্দনপুরা, গনি বেকারি, কলেজ রোড়, অলি খাঁ মসজিদ মোড়, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ও সেভরন এলাকা, পাঁচলাইশ বড় গ্যারেজ, কাতালগঞ্জ হয়ে তেলিপট্টি মোড় এলাকায় শেষ করেন। পথসভায় বক্তৃতা করেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইউনুচ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী বেলাল উদ্দিন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, সদস্য গাজী সিরাজউল্লাহ, মোঃ কামরুল ইসলাম, নগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক জেলী চৌধুরী এবং বিভিন্ন ওয়ার্ড বিএনপির নেতারা।
×