ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নতুন করে চলছে উষ্ণতার খোঁজ

উৎসবের পৌষ শেষে এলো বাঘ পালানো মাঘ

প্রকাশিত: ২২:৫০, ১৬ জানুয়ারি ২০২১

উৎসবের পৌষ শেষে এলো বাঘ পালানো মাঘ

মোরসালিন মিজান ॥ শীতকালটা ভীষণ প্রিয় বাঙালীর। কত মানুষের জন্য অপেক্ষা করে থাকে! প্রথম মাসটি পৌষ। এ মাসে শীতকালের আনুষ্ঠানিক শুরু হয়। গরম ভাবটা আর থাকে না। বরং হালকা শীতের পৌষ দারুণ উপভোগ্য হয়ে ওঠে। যখন তখন বৃষ্টির নামারও আশঙ্কা থাকে না। সুযোগ কাজে লাগিয়ে গ্রামে শহরে নানা উৎসব অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এবার অবশ্য কোভিডের কাল। বৈরী সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে গোটা দুনিয়া। এর পরও ঢাকায় কিছু না কিছু উৎসব অনুষ্ঠান চোখে পড়েছে। গত বুধবার রাজধানীর লালমাটিয়ায় বর্ণাঢ্য পৌষ উৎসবের আয়োজন করা হয়। সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুরের ধারা আয়োজিত উৎসবে শীতের পিঠাপুলি তো ছিলই, সঙ্গে ছিল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গীত ও নৃত্যায়োজন। তবে সবচেয়ে বড়সড় আয়োজন ছিল পৌষসংক্রান্তির দিনে। এদিন ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসবে মেতেছিল পুরান ঢাকা। সেখানে মোটামুটি সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় ঘুড়ি উৎসব। নানা রঙের ঘুড়িতে ছেয়ে যায় আকাশ। বাড়ির ছাদে, খোলা মাঠে অবস্থান নিয়ে ঘুড়ি ওড়ান উৎসবপ্রেমীরা। বিশেষ করে কিশোর ও তরুণদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। শীতের পিঠা মজাদার খাাবারসহ আগেভাগেই ছাদে উঠে গিয়েছিল তারা। আর সন্ধ্যা নামতেই আতশবাজি। রঙিন হয়ে ওঠে আকাশ। এর বাইরে বাসা বাড়ির ছাদে সঙ্গীত নৃত্যের আয়োজন করা হয়। ছিল আকর্ষণীয় ফায়ারওয়ার্কস। এবার প্রথমবারের মতো সাকরাইন উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হয় সিটি কর্পোরেশনও। দক্ষিণ সিটির ৭৫ ওয়ার্ডে একযোগে উৎসব আয়োজন করা হয়। দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়ে উৎসব চলে রাত ৮টা পর্যন্ত। এর আগে কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে ১০ হাজার ঘুড়ি আগ্রহীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। পূর্ব নির্ধারিত মাঠ কিংবা বাড়ির ছাদে অবস্থান নিয়ে স্থানীয়রা এসব ঘুড়ি ওড়ান। পৌষে ঢাকায় অনেক পিঠা উৎসবেরও আয়োজন করা হয়। এবার অতটা সম্ভব হয়নি। তাতে কী? পৌষের শুরু হতে না হতেই ঢাকার বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে, ফুটপাথে পিঠা তৈরি ও বিক্রি শুরু হয়ে যায়। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে গরম পিঠার স্বাদ নেন পথচারীরা। তবে মাঘ একটু আলাদা। এ সময় শীতের তীব্রতা বাড়ে। এত বাড়ে যে, উৎসব অনুষ্ঠান তুলে রেখে ঘরে ঢুকে পড়ে মানুষ। এরই মাঝে মাসটির দাপুটে শুরু লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মাঘ যে এসেছে, বোঝা যাচ্ছে। মাসের একেবারে প্রথম দিন থেকেই কনকনে শীত। সামনে কী হবে, কেমন যাবে তা এখনই হয়ত বলা যাবে না। তবে মাঘ তার সক্রিয় হওয়ার খবর দিচ্ছে জোরেসোরেই। এরই মাঝে নড়েচড়ে উঠেছেন সবাই। গত কয়েকদিন আগেও রাজধানীর যারা শীতকে অগ্রাহ্য করেছে, অস্তিত্ব স্বীকার করতে চায়নি তারা এখন চুপ। পৌষের শেষভাগে এসে তাপমাত্রা একটু বেড়ে গিয়েছিল। তাই দেখে উষ্ণ জামাকাপর গা থেকে নামিয়ে রেখেছিলেন তারা। অনেকই ধারণা করেছিলেন শীত বলতে কিছু আর নেই। হারিয়ে গেছে। তবে সহসাই গণেশ উল্টে দিল মাঘ। বলা হয়ে থাকে মাঘের শীতে বাঘ পালায়। আসলেই পালায় কিনা, কে বলবে? তবে শীতের তীব্রতা বোঝাতে এমনই প্রবাদ বহুকাল ধরে প্রচলিত রয়েছে। এবারের মাঘ বলা যায় শৈত্যপ্রবাহ সঙ্গে নিয়ে এসেছে। বর্তমানে ১ বিভাগ ও ৯ অঞ্চলের ওপর দিয়ে মাঝারি থেকে হালকা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, শ্রীমঙ্গল, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামী কয়েকদিন এ অবস্থা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তার মানে, মাঘের শীত আরও কয়েকদিন টানা অনুভূত হবে। এর পর ছোটখাটো বিরতি দিয়ে হানা দেবে তীব্র শীত। উপভোগ করার মতো অবস্থা নাও থাকতে পারে। আর তাই নতুন করে শুরু হয়েছে উষ্ণতার খোঁজ। ঢাকার শীতের কাপড়ের দোকানগুলোতে এখন লক্ষ্য করার মতো ভিড়। ঠাণ্ডা বাড়লে বাড়তে পারে করোনার প্রাদুর্ভাব। এ কারণেও অনেকে আর বাইরের উৎসব অনুষ্ঠানের কথা ভাবছেন না। বরং বারান্দায় বসে সকালের রোদটুকু গায়ে মাখার জন্য অপেক্ষা করছেন। এমনকি বাসার আশপাশ দিয়ে উড়ে বেড়ানো ঘুরে বেড়ানো পাখিরাও কাবু হয়ে যাচ্ছে শীতে। তবে সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে হতদরিদ্র মানুষ। ঢাকার ফুটপাথে মৃতের মতো পড়ে থাকা মানুষগুলোর দিকে তাকানো যাচ্ছে না। মাঘ বাঘের মতোই হামলে পড়েছে ছিন্নমূল মানুষগুলোর ওপর। এ অবস্থায় মানুষ হয়ে আমরা কি মানুষের পাশে দাঁড়াব না?
×