ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

২৯টিতে হবে ইভিএমে

দ্বিতীয় দফায় আজ ৬০ পৌরসভায় ভোট

প্রকাশিত: ২২:৪০, ১৬ জানুয়ারি ২০২১

দ্বিতীয় দফায় আজ ৬০ পৌরসভায় ভোট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পৌরসভায় দ্বিতীয় দফায় ভোট আজ। এদিন দেশের ৬০ পৌরসভায় সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ করা হবে। বিরতি ছাড়াই বিকেল ৪টায় শেষ হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ৬০ পৌরসভার মধ্যে ২৯টিতে ইভিএমে ভোট নেয়া হবে। বাকি পৌরসভায় ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। ইভিএমে মেশিন, ব্যালট পেপারসহ সব ধরনের ভোটার সরঞ্জাম কেন্দ্রে পৌঁছে গেছে। ভোট কেন্দ্রের পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকায় নেয়া হয়েছে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। এদিকে দ্বিতীয় দফায় পৌরসভায় নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। নির্বাচনী মাঠ বেশ সহিংস হয়ে উঠছে। বিশেষ করে রাজশাহীর আড়ানী, ঝিনাইদহের শৈলকুপায় নির্বাচনের প্রচারে সময় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে হামলা সংঘাত ও মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এ অবস্থায় নির্বাচন কতটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে তা নিয়ে সংশয় বাড়ছে। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, পৌর নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ভোটের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। তিনি বলেন, ভোটের জন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। কিছু এলাকায় ইভিএমে ভোট হবে, তাতে মক ভোটিংও হয়েছে। কিছু এলাকায় ব্যালটে ভোট হবে। সেখানেও প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এদিকে ইসি কর্মকর্তারা জানান দ্বিতীয় দফায় ৬০ পৌরসভায় মেয়র পদে মোট ২২১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে। সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৪৫ এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৩২০ জন। এছাড়া তিনটি পৌরসভায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে মেয়র পদে একক প্রার্থী হওয়ায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৭ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে এই পদে আর ভোটগ্রহণ করা হবে না। তবে বাকি পদে প্রতিনিধি বাছাইয়ে সংশ্লিষ্ট পৌরসভায় নির্বাচনে ভোট নেয়া হবে। এই দফায় নির্বাচনে মোট ভোটার রয়েছে ২২ লাখ ৪০ হাজার ২২৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১ লাখ ৮ হাজার ৪৩১ জন। নারীর ভোটার ১১ লাখ ৩১ হাজার। এই দফায় মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৮০ বুথের সংখ্যা ৬ হাজার ৫০৮টি। মেয়র পদে সিরাগঞ্জের কাজিপুর, পাবনার ভাঙ্গুরা, পিরোজপুরের সদর এবং নারায়ণগঞ্জের তারাব পৌরসভায় একক প্রার্থী থাকায় মেয়র পদে ভোট হবে না। গত ডিসেম্বরের ২ তারিখে দ্বিতীয় দফায় ৬১ পৌরসভায় ভোটগ্রহণের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র পদের একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ওই পৌর নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। জানা গেছে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকার (৬৩) গত বৃহস্পতিবার সকাল পোনে ৭টায় রাজধানীর বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। দ্বিতীয়বারের মতো পৌরসভায় দলীয় ভিত্তিতে ভোট হচ্ছে। তবে অন্য নির্বাচনের মতো পৌরসভায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর। প্রায় সব পৌরসভায় এই দুটি দলের মেয়র পদে প্রার্থী রয়েছেন। আওয়ামী লীগ বিএনপি ছাড়াও এই দফায় ইসির নিবন্ধত ৯টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। বাকি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, জাসদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি। প্রথম দফায় মোট ৫টি রাজনৈতিক দল পৌরসভায় নির্বাচনে অংশ নেয়। গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথম দফায় নির্বাচনে অধিকাংশ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়লাভ করে। প্রথম দফায় নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলে দ্বিতীয় দফায় বিভিন্ন স্থানে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় বাড়ছে। ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, পৌর নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম রয়েছে নির্বাচন দেখভালের জন্য। এছাড়াও প্রতিটি সাধারণ ভোট কেন্দ্রে তিনজন পুলিশ সদস্য (অস্ত্রসহ), একজন অঙ্গীভূত আনসার সদস্য পিসি (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার একজন এপিসি (অস্ত্র/লাঠিসহ) ও অঙ্গীভূত আনসার (লাঠিসহ তিনজন পুরুষ ও তিনজন নারী সদস্য) নিয়ে ১১ জন নিয়োজিত থাকছে। গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে চারজন পুলিশ সদস্য (অস্ত্রসহ), একজন অঙ্গীভূত আনসার সদস্য পিসি (অস্ত্রসহ), অঙ্গীভূত আনসার একজন এপিসি (অস্ত্র/লাঠিসহ) ও অঙ্গীভূত আনসার (লাঠিসহ চারজন পুরুষ ও তিনজন নারী সদস্য) মিলিয়ে ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন। ইসির জনসংযোগ পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, নির্বাচনী এলাকায় বিজিবি, পুলিশ, আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও মোবাইল টিম টহল দেবে এবং স্ট্রাংকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন থাকবে। যেসব পৌরসভায় আজ ভোট ॥ ইভিএমে ভোট : দিনাজপুরের বীরগঞ্জ, বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সান্তাহার, নওগাঁর নজিপুর, রাজশাহীর কাঁকনহাট ও আড়ানী, নাটোরের নলডাঙ্গা, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, পাবনার ফরিদপুর, মেহেরপুরের গাংনী, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, ঝিনাইদহের শৈলকুপা, বাগেরহাটের মোংলা, মাগুরা সদর, পিরোজপুর সদর, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, নেত্রকোনার কেন্দুয়া, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, ঢাকার সাভার, নরসিংদীর মনোহরদী, নারায়ণগঞ্জের তারাবো, শরীয়তপুর সদর, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর, কুমিল্লার চান্দিনা, ফেনীর দাগনভূঞা, নোয়াখালীর বসুরহাট, খাগড়াছড়ি সদর ও গাজীপুরের শ্রীপুর। ব্যালট পেপারে ভোট ॥ চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ, কুষ্টিয়া সদর, মিরপুর, ভেড়ামারা মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, দিনাজপুর সদর, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, গাইবান্ধা সদর, দিনাজপুরের বিরামপুর, পাবনার ভাঙ্গুরা, সাঁথিয়া, সুজানগর, ঈশ্বরদী, সুনামগঞ্জ সদর, হবিগঞ্জের মাধবপুর, নবীগঞ্জ, ফরিদপুরের বোয়ালমারী, বগুড়ার শেরপুর, রাজশাহীর ভবানীগঞ্জ, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, উলাপাড়া, সুনামগঞ্জের ছাতক, নাটোরের গোপালপুর, গুরুদাসপুর, বান্দরবানের লামা, সিরাজগঞ্জ সদর, রায়গঞ্জ, কিশোরগঞ্জ সদর, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা। এদিকে নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ট্রাক ও পিকআপ চলাচলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইসি। তবে জরুরী প্রয়োজনের গাড়ি এবং হাইওয়ে নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। দেশে মোট ৩২৯টি পৌরসভা রয়েছে। গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের ২৩টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয় ধাপের ৬৪ পৌরসভায় ভোট হবে ৩০ জানুয়ারি। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারিতে চতুর্থ ধাপে ৫৬টি পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর ২০১৫ সালে মেয়র পদে প্রথম দলীয় প্রতীকে ভোট হয় পৌরসভায়।
×