ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু কাল

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ১৫ জানুয়ারি ২০২১

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শুরু কাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যারা ছবি দেখতে ভালবাসেন তাদের জন্য চমৎকার এক আয়োজন। রাজধানীতে শুরু হচ্ছে দেশ-বিদেশের আলোচিত চলচ্চিত্রে সজ্জিত এক উৎসব। নয় দিনব্যাপী উৎসবটির সূচনা হবে কাল শনিবার। ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ স্লোগানে অনুষ্ঠিত হবে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২১। মুজিববর্ষ উপলক্ষে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ আয়োজিত ১৯তম উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য মিলিয়ে ৭৩ দেশের ২২৭ চলচ্চিত্রে সাজানো উৎসবটি চলবে ঢাকার আট ভেন্যুতে। ২২৭ ছবির মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১০৭ এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চত্রির সংখ্যা ১২০। এগুলোর মধ্যে বাংলাদশের ছবি থাকছে ৪১। যার মধ্যে ৩৩ স্বল্পদর্ঘ্যৈ এবং আট পূর্ণদৈর্ঘ্য। বরাবরের মতো এবারের উৎসবেও থাকছে এশিয়ান ফিল্ম প্রতিযোগিতা বিভাগ। এই বিভাগের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাকে প্রদান করা হবে এক লাখ টাকার পুরস্কার। এছাড়া অন্য বিভাগগুলো হচ্ছে রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, বাংলাদেশ প্যানারোমা, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিল্ড্রেন ফিল্মস, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট এ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম এবং উইমেন্স ফিল্ম মেকার বিভাগ। উৎসবে এবারই প্রথম সংযুক্ত হয়েছে ‘লিজেন্ডারি লিডারস হু চেঞ্জ দি ওয়ার্ল্ড’ এবং ‘ট্রিবিউট’ নামের দুই নতুন বিভাগ। শনিবার বিকেলের জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে বিকেল ঊনবিংশতম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। বিশেষ অতিথি থাকবেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ মুরাদ হোসেন এবং ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কে দোরাইস্বামী। এছাড়া অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রদর্শিত হবে সুজান্না লিনডন নির্মিত চলচ্চিত্র ‘স্প্রিং ব্লোসম’। ২০২০ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিযোগিতা বিভাগে প্রদর্শিত হয় ছবিটি। বৃহস্পতিবার ঢাকা ক্লাবে রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তথ্য জানান উৎসব পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান কিশোয়ার লায়লা, উৎসবের বিচারকমণ্ডলীর সদস্য মঈনুদ্দীন খালেদ, রোকেয়া প্রাচী, ফেরেদৌস আহমেদ প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন উৎসব কমিটির নির্বাহী সদস্য ম. হামিদ। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজধানীর আট ভেন্যুতে দর্শকরা উৎসবের ছবিসমূহ উপভোগ করতে পারবেন। এই ভেন্যুগুলো হলোÑ জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ও নৃত্যশালা মিলনায়তন, শিল্পকলার নন্দন থিয়েটার (মুক্তমঞ্চ), বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্স এবং সীমান্ত স্কয়ার সিনেপ্লেক্স। এছাড়া এবারের উৎসবে মিলনায়তনের পাশাপাশি অনলাইনেও চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ থাকছে। লাগ ভেলকি অনলাইন প্লাটফর্মে দেখা যাবে উৎসবের জন্য নির্বাচিত ছবিগুলো। জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে সকাল ১০টা, দুপুর ১টা ও বিকেল ৩টার প্রদর্শনী শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে দেখতে পারবেন। সেক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে। এর বাইরে সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য টিকেট মূল্য ৫০ টাকা। গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে সকাল ১০টা থেকে শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। যেখানে অভিভাবকরাও শিশুদের সঙ্গে এই চলচ্চিত্রগুলো বিনামূল্যে উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া সকাল ১০টা, দুপুর ১টা ও বিকাল ৩টার প্রদর্শনী শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে দেখতে পারবেন। এক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে। এর বাইরে সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য টিকেট মূল্য থাকবে ৫০ টাকা। জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনের সব প্রদর্শনী বিনামূল্যে উপভোগ করতে পারবেন সবাই। একইভাবে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা, নন্দনমঞ্চ ও নৃত্যশালায় অনুষ্ঠিত প্রদর্শনীগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এবারের উৎসবে ২০ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে বিশেষ সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। ‘সত্যজিৎ রায় : জাতীয় ও বৈশ্বিক’ শিরোনামের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মফিদুল হক। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান অভিনেত্রী শর্মীলা ঠাকুর, ধৃতমান চ্যাটার্জি, বিচারপতি রিফাত আহমেদ এবং চলচ্চিত্র সমালোচক মঈনুদ্দীন খালেদ। এছাড়া উৎসবরে অংশ হিসেবে ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি চলচ্চিত্রে নারীর ভূমিকাবিষয়ক সপ্তম আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস কনফারেন্স এবং ১৯ জানুয়ারি ওয়েস্ট মিটস ইস্ট শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। মুজিববর্ষ উদ্্যাপনের অংশ হিসেবে উৎসবে যুক্ত হয়েছে ‘লিজেন্ডারি লিডারস হু চেঞ্জ দি ওয়ার্ল্ড’ বিভাগ। এই বিভাগে প্রদর্শিত হবে নাগিসা ওশিমা পরিচালিত ‘ইবহমধষ হড় ঈযরপযর খধসধ’, ওয়ালটার সালেস পরিচালিত ‘গড়ঃড়ৎপুষব উরধৎরবং,’ ভøাদিমির খাতিনেনকো পরিচালিত ‘ঞযব খবহরহ ঋধপঃড়ৎ,’ জাদ-আবি খলিল পরিচালিত ‘অসসধৎ,’ শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত ‘ঞযব গধশরহম ড়ভ ঃযব গধযধঃসধ,’ জিভরাদ জিকা মিত্রোভিক পরিচালিত ‘টুরপশধ ৎবঢ়ঁনষরশধ,’ এস্টেলা ব্রাভো পরিচালিত ‘অহবপফড়ঃবং অনড়ঁঃ ঋরফবষ’ এবং ফজলে আজিম জুয়েল পরিচালিত ‘আমার বাবার নাম’ এবং একলাস আবেদীন পরিচালিত ছবি ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী’। পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য মিলিয়ে উৎসবে অংশ নিচ্ছে ৭৩ দেশের চলচ্চিত্র। যেসব দেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে তার মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, আর্মেনিয়া, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, আজারবাইজান, বাহরাইন, বেলজিয়াম, ভুটান, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, কিউবা, সাইপ্রাস, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, প্যালেস্টাইন, জার্মানি, গ্রিস, হংকং, হাঙ্গেরি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইতালি, জাপান, কাজাখস্তান, কসোভো, কিরগিস্তান, লাটভিয়া, লেবানন, লুক্সেমবার্গ, মালয়েশিয়া, মেক্সিয়া, নেপাল, নরওয়ে, পাকিস্তান, ফিলিপিন্স, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, কাতার, রাশিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সিরিয়া, তাইওয়ান, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, আরব-আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভেনিজুয়েলা, সাইপ্রাস ও স্বাগতিক বাংলাদেশ। সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, আয়োজন, ব্যাপ্তি ও গুণগত মান বিচারে এশিয়ার অন্যতম চলচ্চিত্র উৎসবে পরিণত হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র। একইসঙ্গে এই উৎসব দেশে রুচিসম্পন্ন ও ইতিবাচক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে ব্যাপক অবদান রাখছে। তরুণ ও প্রতিশ্রুতিশীল চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র ধারার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি প্লাটফর্ম তৈরি করতে যেমন সফল হয়েছে, তেমনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অনুরূপ ধারাকে বলিষ্ঠ করেছে।
×