ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ১৫ জানুয়ারি ২০২১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ আজকের ঢাকায় পৌষ বিদায়ের আলাদা কোন তাৎপর্য নেই। অবস্থাদৃষ্টে তাই মনে হয়। এখন কে রাখে বাংলা মাসের খবর? কার এত সময় যে, পৌষকে ঘটা বিদায় জানাবে? তবে যারা বাঙালীত্বের চর্চা করে, ঐতিহ্যপ্রেমী, শেকড়টাকে যারা একেবারে ভুলে থাকতে চান না তারা পুরনো প্রাচীন উপলক্ষ্যগুলোকেও ভালবেসে আঁকড়ে ধরেন। এই অঞ্চলের মানুষের অতীত স্মৃতি বিশ্বাস জীবনবোধ ও সংস্কৃতি তাদের এখনও কৌতুহলী করে। সচেতন এ অংশটি লোকজীবনের শক্তি নিয়ে বর্তমানকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করে। একই কারণে রাজধানীতে শীতের প্রথম মাসটি ঘিরে নানা ধরনের লোকউৎসব আয়োজন করা হয়। পৌষমেলার কথাই যদি বলি, প্রতি বছর বাংলা একাডেমি চত্বরে বড় পরিসরে এই মেলার আয়োজন করেন সংস্কৃতিকর্মীরা। শিল্পকলা একাডেমিতে চলে পিঠা উৎসব। আর মাসের সমাপনী দিনে থাকে ঐতিহ্যবাহী পৌষসংক্রান্তি উৎসব। এবার কোভিড পরিস্থিতির কারণে অনেক কিছুই বাদ পড়েছে। আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তবে ওই যে বললাম শেকড়ের টান, শেকড়ের টানে কেউ কেউ পৌষসংক্রান্তি উদ্যাপনে এগিয়ে আসেন। পৌষ সংক্রান্তির আরেক নাম তিলুয়া সংক্রান্তি বা পিঠা সংক্রান্তি। একসময় এ দিনে শিশু কিশোররা বাস্তুর গান, কুলাইর ছড়া, হোলবোলের গান, বাঘাইর বয়াত গেয়ে চাল ও অর্থ সংগ্রহ করে পৌষপালা, বনভোজন ইত্যাদির আয়োজন করতো। সেই ঐতিহ্য স্মরণে গত বুধবার লালমাটিয়ায় বর্ণাঢ্য পৌষ উৎসবের আয়োজন করা হয়। সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুরের ধারা আয়োজিত উৎসবে শীতের পিঠাপুলি তো ছিলই, সঙ্গে ছিল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীতের সঙ্গীত ও নৃত্যায়োজন। করোনাকালের মধ্যেই এমন একটি আনন্দঘন আয়োজন সফল করে তোলা সহজ ছিল না। বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা নেপথ্যে থেকে উৎসবকে সফল করে তুলেন। এর বাইরে কোনো কোনো বাসা বাড়িতে লোক আচার পালন করতে দেখা যায়। অন্যের আচারের অভ্যস্থ হয়ে পড়া আজকের প্রজন্মকে মূল ধারায় ফেরাতে এ ধরেনর খুঁটিনাটি উদ্যোগও প্রশংসার দাবি রাখে বৈকি। পুরান ঢাকায় মহা ধুমধামে সাকরাইন ॥ পুরান ঢাকায় গত কিছুদিন ধরেই চলছিল সাকরাইন উৎসবের প্রস্তুতি। বিপুল প্রস্তুতি শেষে বৃহস্পতিবার উদ্যাপনে মাতেন স্থানীয়রা। মোটামুটি সকাল থেকেই শুরু হয়ে যায় ঘুড়ি উৎসব। নানা রঙের ঘুড়িতে ছেয়ে যায় আকাশ। বাড়ির ছাদে, খোলা মাঠে অবস্থান নিয়ে ঘুড়ি ওড়ান উৎসবপ্রেমীরা। বিশেষ করে কিশোর ও তরুণদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। শীতের পিঠা মজাদার খাাবারসহ আগেভাগেই ছাদে উঠে গিয়েছিল তারা। আর সন্ধ্যা নামতেই আতশবাজী। রঙিন হয়ে ওঠে আকাশ। এর বাইরে বাসা বাড়ির ছাদে সঙ্গীত নৃত্যের আয়োজন করা হয়। ছিল আকর্ষনীয় ফায়ারওয়ার্কস। দিন রাতের এ উৎসব সত্যি মনে রাখার মতো। এবার প্রথমবারের মতো সাকরাইন উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হয় সিটি কর্পোরেশনও। দক্ষিণ সিটির ৭৫টি ওয়ার্ডে একযোগে উৎসব আয়োজন করা হয়। দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়ে উৎসব চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। এর আগে কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে ১০ হাজার ঘুড়ি আগ্রহীদের মধ্যে বিতরন করা হয়। পূর্ব নির্ধারিত মাঠ কিংবা বাড়ির ছাদে অবস্থান নিয়ে স্থানীয়রা এসব ঘুড়ি ওড়ান। দুপুরে উৎসবের উদ্বোধন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমাদের লক্ষ্য ঢাকার ঐতিহ্যকে লালন করা, সংরক্ষণ করা, পালন করা। এ লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে প্রথমবাড়ের ঘুড়ি উৎসব আয়োজন করা হলো। এখন থেকে আমাদের পক্ষ থেকে প্রতি বছর ঘুড়ি উৎসব আয়োজন করা হবে। পুরান ঢাকার সংস্কৃতিকে গর্বের সঙ্গে তুলে ধরতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানান মেয়র। করোনাকালে উৎসব আয়োজনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে মেয়র বলেন, করোনা গত মার্চ থেকে আমাদের অনেক ক্ষতি করেছে। এর মধ্যেও যে আমরা উৎসব করতে জানি, আনন্দ করতে জানি তা সাকরাইন উৎসবের মাধ্যমে আমরা বিশ্বব্যাপী জানাতে চাই। তবে উৎসব আনন্দের দিনে কোন কোন ক্ষেত্রে কিছু বাড়াবাড়িও চোখে পড়েছে। উচ্চস্বরে অবিরাম হিন্দি গান বাজানো কারও কারও যন্ত্রণার কারণ হয়েছে। এমন দু একটি ব্যাপারে ভবিষ্যতে আরও সতর্ক হওয়া গেলে সাকরাইন ঘিরে আনন্দ বাড়বে বৈ কমবে না। বইমেলা কখন কীভাবে ॥ অমর একুশে গ্রন্থমেলা নিয়ে শঙ্কা সংশয় রয়েই গেল। প্রতি বছর ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন ঢাকায় মাসব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করা হয়। এবার সেটি সম্ভব হচ্ছে না। তাহলে ঠিক কবে হবে? কেমন হতে পারে করোনাকালের মেলা? জানতে কৌতুহলী চোখে আয়োজক বাংলা একাডেমির দিকে তাকিয়ে আছেন সবাই। তবে একাডেমির কর্মকর্তারা ইস্যুটি নিয়ে আগে একবার কথা বলে মোটামুটি তোপের মুখে পড়েছিলেন। তাদের কথায় অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন এবারের মেলা বাতিল করা হচ্ছে। আপাতত ভার্চুয়ালী মেলা করার বিরুদ্ধে ব্যাপক হৈ চৈ শুরু করে দিয়েছিলেন প্রকাশক নেতারা। পরে দুই পক্ষের আলোচনায় ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় মেলা শুরুর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। এ পর্যায়ে এসে দেখা যাচ্ছে ওই তারিখেও মেলা আয়োজন সম্ভব হবে না। প্রকাশকরাও এই সত্য মেনে নিয়েছেন বলে জানা যায়। তাহলে? শেষতক কী হবে মেলার? উত্তর জানাতে এবার প্রস্তুত হচ্ছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। সে পর্যন্ত আসুন অপেক্ষা করি। একটা আনুষ্ঠানিক জবাব অন্তত পাওয়া যাবে।
×