ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জঙ্গীদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আহ্বান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ১৫ জানুয়ারি ২০২১

জঙ্গীদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরার আহ্বান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এখনও জঙ্গীবাদের মতো ভুল পথে আছে জঙ্গীরা। অবশ্যই তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে হবে। তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ। বৃহ¯পতিবার জঙ্গীবাদ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে র‌্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের ৯ সক্রিয় সদস্য। এ উপলক্ষে তাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি বলেন- ‘তোমরা ফিরে আস। তোমরা ফিরে না এলে বেঘোরে প্রাণ যাওয়ার আশঙ্কা আছে। এই অন্ধকার জগৎ তোমার নিজেকে, পরিবারকে ও রাষ্ট্রকে বিপদে ফেলতে পারে।’ প্রধান অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, আমরা শুধু জঙ্গীবাদ কঠোর হস্তে দমন করছি তা নয়, পাশাপাশি ডি-রেডিক্যালাইজশনের মাধ্যমে তাদের ভুল পথ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন তাদের ট্রাক্টর, কৃষিজ উপকরণ ও নগদ টাকা সহায়তা দেয়া হচ্ছে। র‌্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জঙ্গী আত্মসমর্পণের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোচনা করেন- র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসার ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, এফবিসিসিআইর শেখ ফজলে রহিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের প্রধান খন্দকার ফারজানা রহমান, ক্রাইম রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও ইত্তেফাকের সিটি এডিটর আবুল খায়ের। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একে একে আত্মসমর্পণ করেন আবিদা জান্নাত আসমা (১৮), মোহাম্মদ হোসেন (২৩), মো. সাইফুল্লাহ (৩৭), সাইফুল ইসলাম (৩১), আবদুল্লাহ আল মামুন (২৬), মোঃ সাইদুর রহমান (২২) ও আবদুর রহমান সোহেল (২৮)। হাতে ফুল তুলে দিয়ে তাদের আবার সমাজের মূল ধারায় স্বাগত জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এ বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার তার স্বাগত বক্তব্যে ‘ডি-রেডিক্যালাইজেশন এ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম’ এর প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কখনও জঙ্গীবাদকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় না। প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্সের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এটা আমরা কখনও বলি না, জঙ্গীবাদকে মূলোৎপাটন করেছি। বলেছি, জঙ্গীবাদকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। আমি অনেক দেশেই গিয়েছি। অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছে, তোমরা কীভাবে জঙ্গীবাদকে মোকাবেলা করছ? বলেছি, বাংলাদেশের জনগণ কখনও জঙ্গীবাদকে সমর্থন করে না বলেই আমরা সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, একের পর এক যখন জঙ্গী উত্থান ঘটছিল আমরা সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। তখন প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের কৃষক, শ্রমিক-শিক্ষকসহ দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে ডাক দিয়েছিলেন ঘুরে দাঁড়াবার জন্য। সবাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মানববন্ধন হয়েছে, সমাবেশ হয়েছে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে। সেই থেকে জনগণ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফরিদ উদ্দিন মাসুদ জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন। যা দেশে-বিদেশে সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। সব ধর্মের গুরুদের নিয়ে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলেছি। তিনি স্মরণ করেন- পঞ্চগড়ে হিন্দু ইস্কন মন্দিরে পুরোহিত হত্যা, বৌদ্ধি পুরোহিত হত্যা, শিয়া মসজিদে নামাজরত অবস্থায় ইমামকে গুলির দৃশ্য দেখেছিলাম। এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে র‌্যাব এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আজ তারই প্রতিফলন এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান। যারা বিভ্রান্ত হয়েছিল, পথ হারিয়েছিল, যারা ভুল পথে ভুল আদর্শ বুকে নিয়েছিল তারা আজ বাবা-মার কাছে ফিরেছেন। বাবা-মার মুখে হাসি ফুটিয়েছেন, যা অনেক দিন পর দেখছি। ক্যামেরাবন্দী এ দৃশ্য দেখবে দেশের মানুষ। এজন্য র‌্যাবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিশেষ অতিথি আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, প্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস ককটেল, বোমা, ওই জর্দার কৌটার মতো জিনিসপত্র দিয়ে তারা কখনও বিজয়ী হতে পারবা না। যদিও বাংলাদেশ বারবার জঙ্গীবাদে আক্রান্ত হয়েছে। তবে এর কোনটাই বাংলাদেশ থেকে সৃষ্টি হয়নি। প্রতিবারই বাইরের দেশ থেকে এসেছে, প্রতিবারই শান্তিপ্রিয় মানুষের সহায়তায় তাদের পরাস্ত করেছি। এখনও যারা এ ধরনের কাজে জড়িত আছে, তাদের প্রতি আমাদের নজরদারি অব্যাহত আছে। র‌্যাব, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট, কাউন্টার টেরোরিজমসহ একাধিক টিম তাদের নজরদারিতে রেখেছে। আমাদের গোয়েন্দা কমিউনিটিও এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। হয়তো পরিপূর্ণভাবে সব ঘটনা শুরুতে বিনষ্ট করতে পারিনি। ১০০ ভাগ না হলেও অন্তত ৯০ ভাগেরও বেশি ঘটনা শুরুতেই বিনষ্ট করতে সক্ষম হয়েছি। যারা সমাজের মূলধারায় ফিরে এসেছে তাদের অভিনন্দন জানিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, তোমরা আলোর পথের অভিযাত্রী, এটা দুঃসাহসিক কাজ। এজন্য তোমাদের অভিনন্দন। জঙ্গীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার এই ধারা বাংলাদেশই প্রথম চালু করেছে। বেনজীর আহমেদ বলেন, হলি আর্টিজানের পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের নানা বিধি-নিষেধ দিয়েছে। অনেকে বলেছে বাংলাদেশ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। পৃথিবীর কোন দেশ আমাদের তখন সহায়তা করেনি। কিন্তু দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা জঙ্গীবাদকে পরাজিত করেছি। শুধু একবার নয়, জঙ্গীবাদ বারবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠলে আমরা বারবার পরাজিত করব। কোনক্রমেই দেশে জঙ্গীবাদের কার্যক্রম সফল হতে দেব না। সভাপতির বক্তব্যে র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘যারা আজ সমাজের মূলধারায় ফেরার জন্য আত্মসমর্পণ করেছেন, তাদের এই সমাজ যেন আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করে নেয়। তুই জঙ্গী- এ কথা বলে যেন তাকে আবারও নেতিবাচক পথের দিকে ঠেলে দেয়া না হয়। তিনি বলেন, জঙ্গীবাদ একটা আদর্শিক সমস্যা। এটা মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন সঠিক ধর্মীয় ব্যাখ্যা। তাদের সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনতে চাই। আজ আত্মসমর্পণ করা ৯ জনের মধ্যে আট জনই তাদের পরিবারের কাছে ফেরত যাবেন। একজনকে আইনের কাছে সোপর্দ করা হবে। আইনী কার্যক্রমের মাধ্যমে পরবর্তীতে পরিবারের কাছে ফেরত যাবেন। এর আগে জঙ্গী দমনে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাবের সহযোগিতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ফুল দিয়ে আত্মসমর্পণ করে নয় জঙ্গী সদস্য।
×