ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এডিপি থেকে বৈদেশিক সহায়তা কমছে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ২১:১৪, ১৫ জানুয়ারি ২০২১

এডিপি থেকে বৈদেশিক সহায়তা কমছে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যয় করতে না পারার ব্যর্থতায় কমছে বৈদেশিক সহায়তা বরাদ্দের সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) থেকে এই বরাদ্দ ছেটে ফেলা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা অংশে বরাদ্দ ছিল ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে এই খাতে প্রস্তাব করা হয়েছে ৬৩ হাজার কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র বলছে, এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বেড়েছে তিন হাজার ৫৩৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা, আর সবচেয়ে বেশি পাঁচ হাজার ৩৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা কমেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে এ বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। গত ১২ জানুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনকে বিষয়টি অবহিত করে চিঠি দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে দুই লাখ ১৪ হাজার ৬১১ কোটি টাকা এডিপি বাস্তবায়ন করছে সরকার। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে আসছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা বা ৬২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বাকি ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা বা ৩২ দশমিক ৮৫ শতাংশ আসার কথা ছিল বৈদেশিক সহায়তা থেকে। এছাড়া সংস্থাগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন রয়েছে ৯ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। তবে চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ থেকে ব্যয় করতে পেরেছে মাত্র ১৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২৪ দশমিক ৯১ শতাংশ। এ প্রেক্ষাপটে বরাদ্দ যোগ-বিয়োগ করেছে ইআরডি। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হিসাবে, গত অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ ছিল ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। পরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর অর্থ ব্যয়ে ব্যর্থতায় ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা কমানো হয়। ফলে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল ৬২ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে ব্যয় হয়েছে আরও কম ৪৭ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৭৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। তবে করোনা মহামারীর কারণে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর বরাদ্দ বেড়েছে স্বাস্থ্য খাতে। এডিপিতে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবারকল্যাণ খাতে বরাদ্দ ছিল ৪ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। সেখান থেকে তিন হাজার ৫৩৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৮৫৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এছাড়া খাত হিসেবে সবচেয়ে বেশি কমেছে বিজ্ঞান, তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে। এ খাতে এডিপিতে মোট বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ১২১ কোটি টাকা। সেখান থেকে ৫ হাজার ৩৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা কমিয়ে সংশোধিত বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৮ হাজার ৮১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এডিপিতে পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ছিল তিন হাজার ৬৬৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, সেটি কমিয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে তিন হাজার ৪৮২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। পানিসম্পদ খাতে ৪১৬ কোটি টাকার জায়গায় বাড়িয়ে ৬৭৫ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, কৃষি খাতে দুই হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার ৫৮২ কোটি ১৪ লাখ টাকা, বিদ্যুত খাতে ১১ হাজার ৫৯৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার জায়গায় কমিয়ে ১১ হাজার ১৩৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, তেল-গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে ৭৬২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার জায়গায় বাড়িয়ে ৮৫৪ কোটি টাকা, পরিবহন খাতে ১৯ হাজার ৬৩২ কোটি ১৬ লাখ টাকার জায়গায় কমিয়ে ১৮ হাজার ৩৩৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া যোগাযোগ খাতে এক হাজার ৩৪ কোটি ২৬ লাখ টাকার জায়গায় কমিয়ে ৮১০ কোটি ৯২ লাখ টাকা, ভৌত পরিকল্পনা ও পানি সরবরাহ খাতে ছয় হাজার ৫০৫ কোটি টাকার জায়গায় কমিয়ে চার হাজার ৫৬২ কোটি ২৬ লাখ টাকা, শিক্ষা ও ধর্ম খাতে দুই হাজার ২৬৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে এক হাজার ৮৯০ কোটি টাকা, গণসংযোগ খাতে ২২ কোটি টাকার জায়গায় কমিয়ে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা, শ্রম ও কর্মসংস্থানে ১৭০ কোটি ৭৬ লাখ টাকার জায়গায় কমিয়ে ১১৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, সমাজকল্যাণ-মহিলা বিষয়ক ও যুব উন্নয়ন খাতে ১৯৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকার কমিয়ে ১৫৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা এবং জনপ্রশাসনে এক হাজার ৪৯৪ কোটি থেকে কমিয়ে এক হাজার ২৩৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করেছে ইআরডি।
×