ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে ই-কমার্সে বড় উত্থান হচ্ছে

প্রকাশিত: ২১:১৪, ১৫ জানুয়ারি ২০২১

দেশে ই-কমার্সে বড় উত্থান হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনাকালে মানুষ যখন ঘরবন্দী হয়ে আতঙ্কিত অবস্থায় দিন যাপন করছে, তখন একে একে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে থাকে। লকডাউনে যখন সব অচল, সবাই নিরাপদে থাকতে চাইছে, তখন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছে খাবার, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। ঘরবন্দী মানুষের জীবনযাত্রাকে স্বাভাবিক রাখতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো যে অনন্য অবদান রেখেছে, তার ফলও পেয়েছে এই খাত। ই-কমার্সগুলোর মধ্যে বিশেষ করে গ্রোসারি কয়েকগুণ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। এরপরই ছিল প্রযুক্তিপণ্য বিশেষ করে গ্যাজেটস (ল্যাপটপ, রাউটার, মডেম, ওয়েবক্যাম, স্মার্টফোন ইত্যাদি) ইলেট্রিক আইটেম। মানুষের কেনাকাটার অভ্যাসে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে করোনা। করোনাকালে (ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত) দেশীয় ই-কমার্সে ১৬ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। দৈনন্দিন কাজকর্ম ও শপিং ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে পরিবর্তন আসায় মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক উন্নত জীবনযাপন করছে। কয়েক বছর ধরে দেশে অনলাইনে লেনদেনও বেড়েছে। ধীরে ধীরে ব্যাংকিং, লজিস্টিক কমিউনিকেশন এবং পেমেন্ট মেথডের উন্নতির হাত ধরে ই-বিজনেস সেক্টরটির উন্নয়নের অনেক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্র বিশেষ করে ব্যাংকিং ক্ষেত্রটি ইন্টারনেট পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করছে। গ্রাহকদের কাছে এখন ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড সেবা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট আরও সহজলভ্য হওয়ায় ক্যাশ অন ডেলিভারির (সিওডি) পরিসরও বাড়ছে। লকডাউনের পর লোকজন এগুলোর প্রতি বেশি ঝুঁকছে। বর্তমানে এ ধরনের সেবা কারও কাছেই অপরিচিত নয়। ই-কমার্সের এই প্রবৃদ্ধির রেশ ধরেই করোনা সংক্রমণের মাঝেও আসতে থাকে নতুন নতুন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান, যা এখনও অব্যাহত আছে। করোনা যায়নি। নতুন নতুন কোম্পানিও আসা বন্ধ হয়নি, বরং বাড়ছে। নতুন আসা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- সেরাবাংলা৬৪ ডট কম, সেলেক্সট্রা ডট কম ডট বিডি, বি৭১বিডি ডট কম, ধামাকা শপিং, আলিশামার্ট ডট কম ইত্যাদি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আজ থেকে ১০ বছর আগে বলেছিলাম, আগামীতে প্রচলিত ব্যবসা থাকবে না। প্রচলিত ব্যবসা ডিজিটাল মাধ্যমে রূপান্তর হবে। এটাই ই-কমার্স। টুজি থেকে থ্রি-জি, তারপর ফোর-জিতে আমরা পৌঁছেছি। এরপরে ফাইভ-জিতে যাব। নতুন সভ্যতা আসছে। সেই সভ্যতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। ই-কমার্স থেকে পারে মূল হাতিয়ার। সবকিছু বদলে যাবে। বিপণন, বিক্রি সবকিছু।’ তিনি মনে করেন, ই-কমার্সে ভাল করতে হলে সেই দেশকে আগে বুঝতে হবে। আলিবাবা এভাবেই গ্রো করেছে। দেশের ক্রেতাদের মানসিকতা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য যে যত ভালভাবে বুঝতে পারবে, সেই প্রতিষ্ঠান ই-কমার্সে ভাল করবে। দেশে ই-কমার্সের উত্থান এবং বড় বড় কোম্পানির এগিয়ে আসা দেখে মন্ত্রী বলেন, ‘আগামীতে ই-কমার্সের শো-রুমই হবে ইন্টারনেট। গোডাউন বলে কিছু থাকবে না।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ‘গত বছর দেশে ই-কমার্সের প্রবৃদ্ধি হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। বর্তমানে প্রতিদিন ই-কমার্সে অর্ডার পড়ছে এক লাখ ২০ হাজার থেকে এক লাখ ৫০ হাজারের মতো। এরমধ্যে গ্রোসারি বেশি। এর পরেই রয়েছে ইলেক্ট্রনিক আইটেম ও গ্যাজেটস।’ তিনি আরও জানান, ই-ক্যাবের বর্তমান সদস্য সংখ্যা প্রায় দেড় হাজারের মতো। ফেসবুক নির্ভর (এফ কমার্স) ই-কমার্স পেজের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে বলে তার ধারণা। তিনি আরও বলেন, ‘নতুন নতুন কোম্পানি ই-কমার্সে আসছে। আমরা স্বাগতম জানাই। উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, এটা ভাল দিক। ঢাকার বাইরেও ই-কমার্স তৈরি হচ্ছে। সবাই প্রতিষ্ঠা পাক, দাঁড়িয়ে যাক এটাই চাই।’
×