ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মমতাজ লতিফ

রাজনীতিকের প্রতিহিংসা, পুলিশের লোভ ও দানব দিহান

প্রকাশিত: ২১:১১, ১৫ জানুয়ারি ২০২১

রাজনীতিকের প্রতিহিংসা, পুলিশের লোভ ও দানব দিহান

ভাবছিলাম অন্য বিষয় নিয়ে লিখব। কিন্তু সাংবাদিক কাজলের, চট্টগ্রামের এক সাংবাদিকের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের প্রতিহিংসার শিকার হতে হবে কেন- এ বিষয়টি আরও একবার আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ, এ ঘটনা অর্থাৎ যে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার আজ এই দুর্নীতি-দুর্বৃত্ত কবলিত রাজনৈতিক পরিবেশে সরকারের বড় বেশি প্রয়োজন, সেটিকেই বাধাগ্রস্ত করছে এই প্রতিহিংসার আগুনে দগ্ধ কতিপয় খুদে রাজনৈতিক নেতা। কাজলকে বা চট্টগ্রামের সেই নিখোঁজ, পরে নির্যাতনে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত সাংবাদিককে সুনির্দিষ্ট কোন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বা ফেসবুকে প্রদত্ত কোন মন্তব্যের কারণে কারও বিশেষত রাজনীতিকের মনে এত বেশি প্রতিহিংসার জন্ম দিতে পারে, তা আগে জানা ছিল না। বলতে দ্বিধা নেই সমাজে সবচাইতে বেশি সমালোচনা গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকতে হবে রাজনীতিকদের। এক অর্থে রাজনীতিক ‘জনগণের সেবক’ হলেও এত বেশি ক্ষমতার অধিকারী অন্য কোন পেশার মানুষেরা হতে পারে না। হয়ত এ কারণেই পৃথিবীর সব দেশেই রাজনীতিকরাই অন্য পেশাজীবীদের চাইতে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের এক বাতাবরণ তৈরি করে থাকে। কিছুদিন আগেও সমাজে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়িত ক্ষমতার রাজনীতির মূলোৎপাটনে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের প্রয়োজনীয়তার কথা লিখেছিলাম। তছাড়া, সমালোচনা বা কোন ব্যক্তির কোন অন্যায় কাজ, সেটা দখলদারি হোক বা অর্থ আত্মসাত হোক, শঠতা হোক বা সংখ্যালঘু হিন্দু, আদিবাসীদের ভূমি দখল হোক, রাজউকের অপরের প্লট দখল করে নেয়া হোক অথবা ফুটবলের ক্লাবকেন্দ্রিক ক্যাসিনো-জুয়া খেলার মাধ্যমে কোটি কোটি কালো টাকার মালিক বনে যাওয়া, অফিসের টেন্ডার বাগিয়ে নিতে সহায়তাকারী ছোট কর্মকর্তা, কেরানি, ড্রাইভারদের শত শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক হওয়া- যা কিছুই অন্যায় কর্ম, তার ওপর সাংবাদিকরা যদি অনুসন্ধান করে জনগণকে এসব অন্যায় কাজ সম্পর্কে অবহিত না করে- তাহলে সমাজ থেকে এসব অন্যায় দূর করার সূচনা হবে কিভাবে? সরকারই বা কিভাবে এসব দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের ঘটনা জানতে পারবে? ধরা যাক, ফটোজার্নালিস্ট কাজলের নিখোঁজ হওয়া এবং পরে জেল বাস- ওই নির্যাতনের বিষয়টি জনগণ জানল সাংবাদিকদের প্রতিবেদনের মাধ্যমে। ফটোজার্নালিস্ট কাজল ২০২০-এর ১০ মার্চ নিখোঁজ হন এবং ৫৩ দিন পর অর্থাৎ প্রায় দু’মাস পর বেনাপোল বর্ডারের কাছে ঘোরাঘুরি করা অবস্থায় বর্ডার গার্ড তাকে দেখে ‘উদ্ধার’ করে এবং তাকে জেলে অন্তরীণ করে! কেন? কারণ, সাইফুজ্জামান শিখর নামের এক সাংসদ এবং দুজন মহিলানেত্রী কাজলের একটি ফেসবুক মন্তব্যকে ভিত্তি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তিনটি মামলা করেছে। এটি কোন খুন, ধর্ষণ, দখলের মতো বে-আইনী কাজ না হলেও নিম্ন আদালত বিগত সাত মাস তাকে জামিন দেয়নি! প্রশ্ন, একজন সাংবাদিককে বা কোন শিক্ষক অন্য পেশাজীবীকে ‘নিখোঁজ’ করে কারা? অবশ্যই দুর্বৃত্ত, পেশাধারী গুণ্ডা দল। ওরা তো অন্যের নির্দেশে অর্থ পেয়ে কাজ করে। তাহলে, ওই নির্দেশদাতা, অর্থদাতা ওই সাংসদ, দুই নারী নেত্রীই তো- তাই নয় কি? কেননা, মামলা তিনটিও তারাই করেছেন। এবার একজন ব্যক্তিকে কোন মন্তব্যের জন্য ‘নিখোঁজ’ করার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে নিখোঁজের ভিকটিমের পক্ষে মামলা করতে হবে নিশ্চয়। এটি হবে বড় ধরনের ক্ষতি পূরণের মামলা। ‘নিখোঁজ’ বা ‘গায়েব’ করে ফেলা নিশ্চয়ই কোন আইনী পথ নয়। কাজলকে নিখোঁজকারীরা কেমন নির্যাতন করেছিল, তা প্রধানমন্ত্রীকে জানতে হবে বৈকি। কারণ, এ কাজটিতে সরকারী দলের এবং ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা আছে। কাজল এই নির্মম নির্যাতনের অনেক কিছুই জানাবেন না বলেছেন। সামান্য যেটুকু জানিয়েছেন, তাহলে যে ৫৩ দিন তিনি নিখোঁজ ছিলেন, সেটি কবরের মতোই, খুবই সঙ্কীর্ণ জানালাহীন চার দেয়ালে আবদ্ধ, দু’চোখ বাঁধা, হাত দুটি পেছনে হাতকড়া দিয়ে বাঁধা, মুখ কাপড়ে বাঁধা! আলো এবং অন্ধকার বুঝে দিন গণনা করা ও স্বজনদের কথা ভাবা ছিল একমাত্র কাজ, যাদের আর দেখতে পাবেন কিনা জানতেন না। কাজলকে বাংলা একাডেমির সামনে থেকে তুলে নেয়া হয়! তিনি বাংলা একাডেমি থেকে বের হওয়ার সময় অনেক মোটরবাইক আরোহী দ্বারা বেষ্টিত হন। ১০ মিনিটের মধ্যে দুটো মিনিভ্যান দেখা গেল এবং মুহূর্তে তার চোখ-মুখ বেঁধে একটিতে উঠিয়ে ফেলল! তারপর সেই বদ্ধ কবরের মতো কুঠরিতে ৫৩ দিন! পরদিন হঠাৎ তাকে একটা গাড়িতে চোখ-মুখ বন্ধ অবস্থায় তুলে বেনাপোলের দিকে যাত্রা করে। ওখানে তাকে গাড়ি থেকে ধাক্কা মেরে চুপ থাকতে বলে বাইরে ফেলে দেয়। তখন তাকে বিজিবি যশোর নিয়ে যায়। যশোর জেলে ছিল তুলনামূলক ভদ্র, মার্জিত পরিবেশ। ঢাকা জেল ছিল বিপরীত। অবশেষে, হাইকোর্ট তাকে নবেম্বরে ১টি, ডিসেম্বরে দুটি মামলায় জামিন দিলে তিনি মুক্তি লাভ করেন! অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দলের ওইসব ‘কি বা হনুরে’ নামক দুর্বৃত্ত পোষণকারী নেতানেত্রীদের কঠিন বার্তা দিয়েছেন। আমার কথা রাজনীতি করবেন আর সমালোচনা মানবেন না- এটি চলতে পারে না। এইসব অসহিষ্ণুতা তো মৌলবাদী অশিক্ষিত জঙ্গীদের আচরণ! এটি জনগণ মেনে নেবে না। এসব ঘটনার ফলে একদিকে প্রধানমন্ত্রীর সফলতা বিফল হবে, অন্যদিকে সরকার অনেক ভাল কাজ করেও বিতর্কিত হবে। এটা দলের কোন মঙ্গলকামী সদস্য করতে পারে না বলেই মনে করি। চট্টগ্রামে এক সাংবাদিক ছোট এক কাগজে কোন ক্ষমতাসীন দলের প্রাক্তন বা বর্তমান সাংসদের ভূমি দখল সম্পর্কিত কোন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখেন। তিনি নিখোঁজ ছিলেন বেশ কিছু দিন। পরে রাস্তার পাশে তাকে বস্ত্রহীন, অচেতন অসহায় অবস্থায় উদ্ধার করেছিল যারা, তিনি ভয়ার্তভাবে বারবার তাদের বলছিলেন, ‘আমি আর লিখব না, আর কখনও লিখব না’- এ থেকে জনগণ মাত্রই উপলব্ধি করেন কি ভয়াবহ মাত্রার নির্যাতন তার ওপর চলেছিল। তার পক্ষে মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করাও সম্ভব হয়নি! এখন ছেলেটি সুস্থ হয়েছে কিনা, জানি না। আশা করি মানবিক প্রধানমন্ত্রী তাদের সাহায্য-সহযোগিতা এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছেন। এখন ভিন্ন প্রশ্ন- সেই অমানবিক নির্যাতক, খুনী পুলিশের কাহিনী! ভেবেছিলাম পুলিশ প্রধান ড. বেনজীরের অতি প্রশংসনীয় উদ্যোগ- মানবিক পুলিশ গড়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে এক তরুণ শিক্ষানবিস আইনজীবী রেজাউল করিম রেজাকে কেন রায়হানের মতো, রকির মতো থানায় নির্মম নির্যাতনের ফলে প্রাণ হারাতে হলো? মেজর সিনহা হত্যার পর ওসি প্রদীপ ও তার অনুগত দুর্বৃত্ত-খুনী পুলিশের দল এসব অপরাধ করা থেকে নিবৃত্ত হবে- আশা করেছিল জনগণ। কিন্তু, বরিশালে আরেক প্রদীপ, পুলিশের এসআই মহিউদ্দীন মহি নামক ডিবির কনস্টেবল চা দোকানে চা-পানরত বন্ধুদের মধ্য থেকে রেজাউলকে সাদা পোশাকে গ্রেফতার করে মারধর, গালাগালি সহকারে নিয়ে যায় ডিবি অফিসে মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে! ৩০ ডিসেম্বর আদালতে ওঠানোর দিন তার স্ত্রী, স্বজনেরা তার সঙ্গে দেখা করলে সে তার ওপর চরম বর্বর নির্যাতনের কথা জানায়। তাকে আদালত জেলে পাঠায়। জেল সুপার অবনতিশীল দৈহিক অবস্থা দেখে তাকে জেল হাসপাতালে পাঠায়। প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর ১ জানুয়ারি জেল সুপারের ভাষ্য মতে, রেজার পা থেকে রক্তপাত শুরু হলে তাকে শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। এখানে ২৪ ঘণ্টার বেশি ফেলে রাখার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন ডাক্তার। হাসপাতালের ডাক্তার বলেন, রেজার প্রস্রাব ও পায়খানার রাস্তা দিয়ে অতিরিক্ত এবং অব্যাহত রক্তক্ষরণের কারণে সে মারা যায়! অথচ, ১ জানুয়ারি রেজার গ্রেফতারের খবর পেয়ে স্ত্রী যশোর থেকে ছুটে এসে শেরে বাংলা হাসপাতালে তার শয্যার পাশে এসে দেখতে পায়, রেজার পায়খানা ও প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে অসম্ভব রক্তপাত হচ্ছে। এ সময় বেঁচে থাকা রেজা তার স্ত্রীকে জানায়, তাকে পুলিশ কি নির্মমভাবে লোহার পাইপ দিয়ে পিটিয়েছে, ওর পেটে বারংবার লাথি মেরেছে। যার ফলে তার পেটের ভেতরের অঙ্গ অবশ্যই অসম্ভব আঘাত প্রাপ্ত হয় এবং সে দীর্ঘক্ষণ যাবত অব্যাহত রক্তপাত হলেও কোন চিকিৎসা বা রক্ত দেয়া কিছুই হাসপাতাল থেকে পায়নি! সে বাঁচবে কিনা সে নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিল! রেজা সে রাতেই মারা যায়! এই মহিউদ্দিন ওই এলাকায় প্রদীপের মতোই ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে বলে স্থানীয় সব সূত্রই জানিয়েছে। কথা হচ্ছে- কেন পুলিশ কাস্টডিতে রকি হত্যা, রায়হান হত্যা, এমনকি টেকনাফে ক্রসফায়ারে পুলিশ, ওসি প্রদীপ কর্তৃক নিরীহ মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা, মাদক ব্যবসার নামে চাঁদা দাবি করে হত্যা, চাঁদা পেয়েও হত্যাকাণ্ড ঘটানোর দায়ে কলঙ্কিত পুলিশ বাহিনীর কতিপয় সন্ত্রাসী সদস্যকে শাস্তি পেতে দেখার পরও বরিশালে শিক্ষানবিস তরুণ আইনজীবীকে ধরে এনে প্রচণ্ড অমানবিক দৈহিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা- কোনভাবেই মেনে নেয়া সম্ভব নয়। এমনকি কোন প্রকৃত মাদকসেবীকেও ধরে এনে মারধর, অমানুষিক নির্যাতন করে মেরে ফেলা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি বেআইনী এবং অপরাধ তো বটেই। এই পুলিশ এসআই মহিউদ্দীনকে অবশ্যই রেজা হত্যার জন্য দৃষ্টান্তমূলক উচ্চ দণ্ড দিতে হবে। আমরা জনগণ আর কোন মতেই ওইসব নমনীয় দণ্ড- বিভাগীয় বিচার অথবা বদলি- এসব মেনে নেব না। তাছাড়া, ওই এসআই মহিউদ্দীন তো টেকনাফের ওসি প্রদীপের মতো, ওই এলাকায় প্রবল সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে অব্যাহতভাবে। সে এলাকায় মূর্তিমান মৃত্যু দূত, লুট-দখল, চাঁদাবাজির জন্য দীর্ঘদিন যাবত মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে রাজত্ব চালাচ্ছিল! পুলিশ প্রধানকে বলব- পুলিশের বেশে সন্ত্রাসী-খুনীদের সন্ত্রাসী খুনীর মতোই গণ্য করুন এবং উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করে নিহত রেজার পরিবারকে নিরাপত্তা প্রদান করুন। তাহলেই আপনার সদিচ্ছা সফল হবে। এবার সর্বশেষ, আমাদের জানা মতে বীভৎস, নির্মম নির্যাতন-ধর্ষণের শিকার আনুশকা ও ধর্ষক দিহান নামক এক পর্নো-দানবের বিষয়ে আসি। এই ধর্ষক দেখছি ভারতের দিল্লীর বাসে চালক-কন্ডাক্টরের দ্বারা বীভৎস ধর্ষণে লোহার কোন দণ্ড ব্যবহার করার ফলে নির্ভয়া নামের মেয়েটি যে চৈতন্য থাকা পর্যন্ত বলেছিল- ‘আমি বেঁচে উঠব’, যার বাবা বলেছিলেন- ‘আমার মেয়েটি খুব শক্ত, ও বেঁচে উঠবে’। কিন্তু ওটি শুধু ধর্ষণ হলে সত্যিই তরুণীটি প্রাণে বেঁচে উঠত। কিন্তু ডাক্তাররা জানিয়েছেন, কোন ধাতব বস্তুর আঘাতে ওর ভেতরের সেনসিটিভ অঙ্গগুলো এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা চিকিৎসা করে আরোগ্য যোগ্য ছিল না। এই প্রথম আমার মনে হয় আমরা, সাধারণ জনগণ এ তথ্য জেনে পুরুষরূপী মানুষের নির্মমতার অবিশ্বাস্য পরিচয় পেয়ে বিস্মিত ও মর্মাহত, শোকার্ত হয়েছিলাম। আমাদের মাস্টারমাইন্ড স্কুলের সতেরো বছরের কন্যাটির চরম দুর্ভাগ্য যে, সে তথাকথিত ধনীর সন্তান, কিন্তু ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ইন্টারনেটের পর্নো দানবের অসহায় শিকার বলে সন্দেহ হয়। কেননা, ময়নাতদন্তকারী ডাক্তারের মন্তব্য খুবই প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘বিকৃত যৌনাচারের কারণে মেয়েটির যৌনাঙ্গ, এমনকি পায়ুপথ ক্ষত-বিক্ষত হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে তার মৃত্যু হয়! সতেরো বছরের মেয়েটি সরল বিশ্বাসে তার কথায় নোট নিতে চলে যায়। তাকে কোক খাওয়ানোর কথা এই দানব-ছেলেটি স্বীকার করেছে। কোক শুধু শুধু খাওয়ানোর কথা নয়। কোন উদ্দেশ্যে এর সঙ্গে কোন কিছু মিশিয়ে দেয়ার জন্য অবশ্যই কোক খাওয়ানো হয়। মেয়েটির অচেতন অবস্থায় এই দানব তার পর্নো-চিত্র, তথ্য-সামগ্রী, যা এই ইন্টারনেট থেকে সে ইন্টারনেটের ভাল দিকটি গ্রহণ না করে, এর কালো দিকটি গ্রহণ করে মানবিক অনুভূতিহীন দানবে পরিণত হয়েছে। ইন্টারনেট পৃথিবীর সব রকম ভাল-মন্দ তথ্য, চিত্র সামগ্রী পুরো পৃথিবীর কাছে উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এই দানবীয় ছেলেটি সেই কালো-তথ্য ছবি সামগ্রীর ভোক্তা- এটি বলতে দ্বিধা নেই। নতুবা, বিশ বছরের তরুণ আমাদের কত স্বজনকে দেখছি- তারা কত মানবিক, সরল এবং ইন্টারনেটের গেম খেলায় মনোযোগী। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে তরুণ-তরুণীরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে অভিভাবক এবং শিক্ষকদের প্রযুক্তি থেকে কোন ভাল তথ্য সামগ্রী ব্যবহার করলে তাদের যোগ্যতা, মানবিকতা, সামাজিকতা সবই সমৃদ্ধ হবে। সেইসব বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করে তাদেরকে প্রযুক্তির ভাল দিকের ব্যবহারের প্রতি উৎসাহিত করা দরকার। তাদেরকে স্বাধীনতা দিতে হবে। কিন্তু একইসঙ্গে তাদের সঙ্গে এক ধরনের খোলামেলা সম্পর্ক তৈরি করতে হবে, যাতে তারা অভিভাবকদের অগোচরে কোন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে না পড়ে অথবা তথ্যপ্রযুক্তির মন্দ দিকগুলোর প্রতি আসক্ত না হয়। কাজটি কঠিন হলেও অভিভাবক- শিক্ষকরা চাইলে এটি করা সম্ভব। প্রথমত, তরুণ-তরুণীদের সমাজের দুখী, অভাবগ্রস্ত অথবা সমস্যায় পড়া মানুষের প্রতি মানবিক ও সামাজিক কর্তব্যবোধে জাগ্রত হয়ে তাদের জন্য কিছু না কিছু করার মধ্যে সম্পৃক্ত করানো গেলে তারা অবশ্যই ভাল মানুষ হবে। আবার পুলিশ প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এই মেয়েটিকে হাসপাতালে আনা তরুণটিকে রক্ষা করার একটা চেষ্টা সম্ভবত পুলিশ করছে। কেননা, তারা মেয়েটির বয়স নিয়ে বিতর্ক তুলেছে, মেয়েটির বয়স উনিশ বলার অর্থ হলো- মেয়েটিকে প্রাপ্তবয়স্ক প্রমাণ করে তার সম্মতিতে ধর্ষণ হয়েছে। এটি প্রমাণে যেন উঠে পড়ে লেগেছে পুলিশ। শুনতে পাচ্ছি ওই দানবের পিতা খুব বিত্তশালী ও প্রভাবশালী। প্রভাবশালী বলতে আমরা বুঝি কালো টাকা-পেশী-অস্ত্রধারী মানুষ, যারা এক একটি এলাকার মানুষকে জিম্মি করে রাখে। পুলিশ প্রধান এসব অর্থ-পেশীধারীকে তার প্রাপ্য শিক্ষা দিতে হবে এবং এলাকার মানুষকে ওর মতো সব অমানুষের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। খুনী-ধর্ষককে অবশ্যই তার উপযুক্ত দণ্ড দিতে হবে। মেধাবী মেয়েটিকে হারিয়ে আমরা তার মা, বাবা, ভাই-বোন-বন্ধু-বান্ধবীদের মতো সমান শোকার্ত। মেয়েটিকে ফিরে পাব না, সেজন্য ওই দানবের যথার্থ বিচার চাই। সমাজকে এইসব কালো টাকা, পেশী-অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী মুক্ত করে বাসযোগ্য করুন। কাজটি কঠিন, কিন্তু একেবারে অসাধ্য নয় যদি দৃঢ় অঙ্গীকার ও প্রতিজ্ঞা নিয়ে কাজে হাত দেয়া যায়। লেখক : শিক্ষাবিদ
×