ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রক্ত ও অর্থের সম্পর্ক

প্রকাশিত: ২০:৫০, ১৫ জানুয়ারি ২০২১

রক্ত ও অর্থের সম্পর্ক

বাংলাদেশে নবনিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী তার সম্মানে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন, দুটি দেশের সম্পর্ক রক্তের। সেই সঙ্গে এই সম্পর্ক অর্থেরও। উল্লেখ্য, এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন যৌথভাবে ইন্ডিয়ান ইম্পোর্টার্স চেম্বার অব কমার্স (আইআইসিসিআই) এবং আইআইসিসিআই বাংলাদেশ। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অপরিসীম অবদান চিরস্মরণীয়। সেই চরম দুঃসময়ে এক কোটি বাংলাদেশী শরণার্থীকে সে দেশে আশ্রয় দিয়েছিল ভারত। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেছে সে দেশের সেনাবাহিনীও। স্বভাবতই সেই যুদ্ধে অগণিত মুক্তি সেনার পাশাপাশি অনেক ভারতীয় সেনাও শহীদ হয়েছেন। বর্তমান হাইকমিশনারের পিতাও তখন ছিলেন ভারতীয় বিমান বাহিনীর একজন চৌকস বৈমানিক। সে প্রেক্ষাপটে দু’দেশের রক্তের নিবিড় ও অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক অবশ্যই স্বীকার্য। তবে এই সখ্য ও বন্ধুত্বকে অক্ষুণ্ন ও চিরস্থায়ী করতে হলে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসা-বাণিজ্যসহ পারস্পরিক বিনিয়োগ তথা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির বিষয়টিও অস্বীকার করা যায় না। সে ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে বেশ কিছু সমস্যা ও জটিলতা রয়েছে। যেগুলো অবশ্যই দূর করা বাঞ্ছনীয় পারস্পরিক আলাপ আলোচনার মাধ্যমে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি তথা ব্যবধান এখনও প্রকট। উদাহরণত বলা যায় যে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারতে ১০৯৬.৩৮ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে একই বছরে আমদানি করেছে ৫ হাজার ৭২৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। এর পাশাপাশি রয়েছে দু’দেশের বিভিন্ন সীমান্তে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনের জটিল নিরীক্ষাসহ আনুষ্ঠানিকতা। ব্যবসা-বাণিজ্যের এসব জটিলতা দূর করা হলে ভারতের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের রফতানি আরও বাড়বে আগামীতে। এক্ষেত্রে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসতে হবে ভারতকেই। বিমসটেক করিডর ও সার্ক হাইওয়ের পর এবার শুরু হয়েছে বিবিআইএন কার্যক্রম। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান সবিশেষ জোর দিয়েছে এতে। উল্লেখ্য, বিগত ২৪ বছর ধরে আন্তঃবাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। এও সত্য যে, কম-বেশি আন্তঃবাণিজ্য চলছেও দেশগুলোর মধ্যে। সম্প্রতি বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করেছে ভুটানের সঙ্গে। সড়ক যোগাযোগও রয়েছে। পারস্পরিক সমঝোতা ও চুক্তির আওতায় যথাযথ অবকাঠামো ও পরিকাঠামো চূড়ান্ত হলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে আন্তঃবাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে বহুলাংশে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-ভারত ইতোমধ্যে নেপালে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব জলবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে বিনিয়োগ করেছে। ইতোমধ্যে ভারতে বাংলাদেশের বাণিজ্য তথা রফতানি আয় বেড়েছে। ভারতের পাশাপাশি চীনের সঙ্গেও বেড়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্য। ইইউ, যুক্তরাজ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির খবর তো আছেই। এমনকি জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করা না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও বাংলাদেশের বাণিজ্য বেড়েই চলেছে। মোট রফতানির ৪০ শতাংশই তৈরি পোশাক। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ভারত বাংলাদেশকে অস্ত্র ও মাদক বাদে প্রায় সব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়। এতে ভারতের এক শ্রেণীর উদ্যোক্তা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বলে খবরও আছে, বিশেষ করে পোশাক খাতে বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়ার প্রশ্নে। তবে ভারতের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এও মনে করে যে, শুল্কমুক্ত সুবিধা বন্ধ বা প্রত্যাহারের কোন সুযোগ নেই। কেননা, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের মজুরি সস্তা, পণ্য বৈচিত্র্যও বেশি। এই প্রেক্ষাপটে বিজিএমইএর সভাপতির বক্তব্য, ভারতে পোশাক রফতানি আরও বাড়তে পারে যদি সে দেশের কাপড় ব্যবহারসহ ডিজাইন ও নক্সায় আরও বৈচিত্র্য আনা হয়। নেপাল ও ভুটানও এ ক্ষেত্রে হতে পারে বড় বাজার। প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভারত ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ। আমাদের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদারও ভারত। ভূটান-নেপালও তাই হতে যাচ্ছে। পারস্পরিক প্রতিবেশী দেশগুলোর বাণিজ্য আরও সহজীকরণে স্থলবন্দর, রেলপথ, সড়কপথসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। বাণিজ্য কার্যক্রমের জন্য এক স্থানে সব সুবিধা (সিঙ্গেল উইনডো ফ্যাসিলিটিজ) দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর উন্নয়নের স্বার্থে বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ করা একান্ত আবশ্যক। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির এখনই সময়।
×