ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নবীন চারুশিল্পীর জয় রথ

প্রকাশিত: ০০:০৪, ১৪ জানুয়ারি ২০২১

নবীন চারুশিল্পীর জয় রথ

মহামারী প্লেগের কারণে লন্ডনে বসে নাট্যদল রোজ থিয়েটারের অভিনেতা-নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ার যখন নাটক মঞ্চায়নটা করতে পারছে না নাগরিক শহরে গৃহবন্দী দশার কারণে তখন স্বেচ্ছায় মহামারী মুক্ত ব্রিটেনের গ্রামে গ্রামে মঞ্চায়ন করে চলছেন কমেডি অব এররস, ষষ্ঠ হেনরি অথবা টাইটাস এ্যান্ড্রোনিকাস। দুঃসময়ে দুর্দশাগ্রস্ত ভীত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে অভয় দেয়াই তো শিল্পের কাজ, শিল্পীর কাজ। ইতালি যখন মহামারী প্লেগে আক্রান্ত তখন মিলান শহরে বসে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি ক্যানভাসে এঁকে চলেছেন চিত্রকলা পাথুরে মাতৃত্ব যেখানে দৃশ্যমান গোধূলি বেলায় সিরিয়ার মরুপ্রান্তে হিংস্র রাজা হেরোদের কারণে শিশু যিশুর ভীত হওয়ার কোন কারণ নেই, কারণ সুরক্ষা বলয় তৈরি করে নিয়েছেন মাতা মেরি। আর আজ যখন করোনা মহামারীতে পুরো বিশ্বের সমান্তরাল বিপন্ন আমার দেশ তখন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর বিচক্ষণতায় আর নিয়ন্ত্রিত উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে একাডেমির গ্যালারিতে প্রদর্শিত ‘২২তম নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী-২০২০’ বিপদে ভরসা দেয়, বিষাদে বিনোদন দেয়, বিপন্ন সময়ে স্থায়িত্বের ভিত্তি দেয়, বিজলির আলোয় বিদঘুটে অন্ধকারকে তাড়িয়ে জীবনের জয়গান গায়। গানটায় জীবনের জয়গান তার প্রথম নিদর্শন প্রদর্শনীর সময় সীমা। উদ্বোধিত হয়েছিল গত ৩০ নবেম্বর যেটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২৯ ডিসেম্বর। মাসব্যাপী উদ্যাপিত এই প্রদর্শনের আরম্ভ সময় সকাল ১১ হয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত থাকলেও বিস্ময়করভাবে শেষ দুই সপ্তাহ একাডেমির লিফটের গেট থেকে জামতলাঅবধি লাইনে সারিবদ্ধ দর্শকচাপ মেনে নিয়েই নির্ধারিত সময়ে প্রদর্শন বন্ধ করতে হয়েছে। ফলে দর্শক চাহিদাকে মেনে নিয়েই প্রদর্শনীর সময় কর্তৃপক্ষকে বাড়াতে হয়েছে যেটির সময় সীমা আগামী ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত যেদিন সন্ধ্যায় অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের সনদ প্রদানেরও আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে। জয়গানের দ্বিতীয় কারণ, চারুকলা বিভাগে ১১টি মাধ্যমে সম্মান ও প্রয়োজনীয় অর্থ সম্মানীর সহযোগে পুরস্কার প্রদান এবং ১১টি মাধ্যমের সেরা শিল্পীকে একইভাবে অধিক সম্মান ও সম্মানী সহযোগে পুরস্কার প্রদান। জয়গানের তৃতীয় কারণ, ৩৩৭ শিল্পীর ৩৬৮ শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ১২ প্রতিষ্ঠানকে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে লক্ষাধিক টাকা প্রদানের মধ্য দিয়ে এ বছরে নতুন সংযোজন কিউরেটেড প্রদর্শনীর আয়োজন। জয়গানের চতুর্থ কারণ, স্থবির সময় প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের সঙ্গে অপ্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের মেলবন্ধন এবং বিপুল অনুরাগী দর্শকদের অংশগ্রহণে শিল্পের মূল্যায়ন তথা জীবনকে উদ্যাপন। জীবনের উদ্যাপনে করোনা সংক্রমণ, বিশ্ব রাজনীতির মূল্যায়ন, সাধারণের স্বপ্নের ভাঙ্গন-গড়ন, সামাজিক শক্তির ক্ষতি-বৃদ্ধি এবং বিবর্তন, ব্যক্তির অস্তিত্ব-অস্তিত্বহীনতা, রুদ্ধ প্রকৃতি, দমবন্ধ নগরায়ণ, নির্লিপ্ত পুুঁজিবাদ, কূল-কিনারহীন জল সীমায় মানুষের ভেসে চলার মতো অনিশ্চয়তা প্রভৃতি বিষয় তীক্ষè এবং তীব্রভাবে এসেছে বিভিন্ন মাধ্যমের ফিগারে-প্রতীকে, মূর্ত-বিমূর্তের আঙ্গিকে শিল্পীদের মরমিয় শিল্প ভাষায়। চারুকলা বিভাগের গাইড লেকচারার সুজন মাহাবুবের অনুরাগী দর্শকদের প্রদর্শনী সংক্রান্ত তথ্য প্রদান আন্তরিকতাপূর্ণ এবং শিল্পবান্ধব। শিল্পের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এবারের বিজয়ী পুরস্কার প্রাপ্ত শিল্পীরা সকলেই নবীন। হলেন চিত্রকলায় মোঃ তরিকুল ইসলাম, ভাস্কর্যে মোঃ মোজাহিদুর রহমান, ছাপচিত্রে মোঃ রফিকুল ইসলাম, স্থাপনা শিল্পে কুন্তল বাড়ৈ, পারফর্মেন্স আর্টে মোঃ নাঈন হোসেন, প্রাচ্য কলায় সঞ্জয় কুমার প্রামানিক, নিউ মিডিয়া আর্টে মোঃ ফজলুল হক, গ্রাফিক্স ডিজাইনে ইমরান হাসান, মৃৎ শিল্পে তানভীন হোসের রিদম, কারু শিল্পে রুবাইত-ই-শারমিন, আলোকচিত্রে মহসীন কবীর এবং চারুকলা পুরস্কার ২০২০ সোমা সুরভী জান্নাত।
×