ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রুহুল আমিন ভূঁইয়া

গান নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন তারা

প্রকাশিত: ০০:০২, ১৪ জানুয়ারি ২০২১

গান নিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন তারা

ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে বিদায় নিয়েছে ২০২০ সাল। করোনায় ফেলে আসা বছরটি মোটেও সুখকর ছিল না। বিশেষ করে সঙ্গীত অঙ্গনের জন্য। করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সঙ্গীত শিল্পীদের। শীত মৌসুমে স্টেজ শো করে যে পারিশ্রমিক পান তা দিয়ে পুরো বছরটি কেটে যায়। তবে এবার করোনার কারণে সবাইকে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয়েছে। করোনা আতঙ্ক ভুলে নতুন বছরটি নিয়ে আশায় বুক বাঁধছেন সঙ্গীত শিল্পীরা। তাদের প্রত্যাশা পুরাতনের সব কষ্ট ভুলে নতুন বছরটি হবে সঙ্গীতের জন্য আশা জাগানিয়া বছর। প্রতীক হাসান : জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী খালিদ হাসান মিলুর বড় ছেলে প্রতীক হাসান। কেউ কেউ বলেন, বাবার মতোই গায়কী তার। এরইমধ্যে বেশকিছু গান দিয়ে তৈরি করে নিয়েছেন গ্রহণযোগ্যতা। অডিও গানের পাশাপাশি প্রতীক গান করেছেন চলচ্চিত্র ও নাটকে। প্রতীক নতুন বছরটি নতুন গান দিয়ে শুরু করেন। গত বছর সবার মতো তিনিও ছিলেন কাজহীন। শিল্পীদের স্টেজ শো আগামী দু-তিন বছর ধরে বন্ধ। শিল্পীদের আয়ের বড় এই জায়গা নিয়ে একটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যারা সঙ্গীতকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন কীভাবে মনোবল শক্ত রাখার কথা বলবেন? জবাবে আনন্দকণ্ঠকে প্রতীক হাসান বলেন, নতুনদের জন্য এটি বড় ধরনের একটা ধাক্কা। পুরাতনদের জন্যও ধাক্কা। তবে নতুনরা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যারা এই পেশার উপরই নির্ভরশীল। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সেই চলার পথটি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এই ধাক্কা পুষিয়ে নেয়া অনেকের জন্য কষ্ট হয়ে যাবে। নবীন-প্রবীণ সবার জন্যই কষ্ট হবে। শিল্পীরা কখনও একবারে বিপদে না পড়লে মুখ খুলে না। একজন শিল্পী হয়ে অন্য শিল্পীর সেটা দেখাও কাম্য নয়। শিল্পীদের নিয়ে একটা দুর্নামও আছে যে শিল্পীদের শেষটা ভাল হয় না। শিল্পীদের শেষটা কেন ভাল হয় না সেটি যদি কেউ খুঁজে তাহলে বুঝবে শিল্পীদের শেষ বয়সে কেন হাত পাততে হয়। আমাদের কাজের পারিশ্রমিক যদি দশ ভাগের এক ভাগও ঠিকমতো পেতাম তাহলে ‘দুস্থ’ শিল্পী কথাটি শোনা লাগত না। করোনার কারণে পৃথিবীর অনেক কিছুই একটা সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। সঙ্গীতাঙ্গনও এই সঙ্কটময় সময় পার করছে। এই অঙ্গনের ভবিষ্যত কী মনে করছেন? এখন সবারই ভবিষ্যত অনিশ্চিত। কবে নাগাত এর সমাধান হবে কেউ বলতে পারে না। পূর্বে যে রকম কাজ করেছি সে ধরনটি পরিবর্তন হয়ে যাবে। আর ভাললাগা খারাপ লাগা দুটিই আছে। সালমা : সম্প্রতি ‘হায়দার’ নামের একটি সিনেমায় গান করেছেন মৌসুমী আক্তার সালমা। ধীরে ধীরে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া এবং কাজে ফিরতে পেরে উচ্ছ্বসিত তিনি। এ ছাড়াও নতুন কিছু গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। খুব শীঘ্রই মুক্তি পাবে ‘পিরিতের ঘর’, ‘বন্ধু দিলা কেন মন’সহ বেশকিছু গান। গেল তিন মাসে তিনি প্রায় ৪০টি নতুন গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। করোনার এ সময়ে অনেক শিল্পী গান সঙ্কটে সেখানে সালমা অনন্য রেকর্ড করেছেন। লতা মুঙ্গেশকারের ‘কেন কিছু কথা বলো না’ জনপ্রিয় এ গানটি নতুন সঙ্গীত আয়োজনে গাচ্ছেন। ফোক গানের এ শিল্পী কমিয়েছেন নিজের পারিশ্রমিক। কারণ করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সঙ্গীত অঙ্গনে তাই সবার কথা বিবেচনা করে তিনি পারিশ্রামিক কমিয়েছেন। তার ভাষায় একজন শিল্পী হিসেবে আমাকে আগে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি দেখতে হবে। নতুন গানগুলো করেছি আগের চেয়ে অর্ধেক পারিশ্রমিকে। আশা করছি গানের সুদিন ফিরবে। কাজী শুভ : নতুন বছর নতুনভাবে শুরু করলেন সঙ্গীতশিল্পী কাজী শুভ। গেল বছর সবার মতো তিনিও ছিলেন কাজহীন। বছরজুড়ে স্টেজ শো-এর ব্যস্ততা থাকলেও গত বছর করোনার কারণে বেকার ছিলেন তিনি। মিস করেছেন স্টেজ। তাই পুরাতন একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে নিজের মনকে বুঝিয়েছেন। স্টেজ শো করে ভাল একটি ইনকাম আসলেও গত বছর ভাগ্য সহায় হলো না। আজ বৃহস্পতিবার মুক্তি পাচ্ছে শুভর নতুন গান ‘তুমি ফিরে তাকালে’। মুক্তির অপেক্ষায় আছে ভালবাসি ওরে পাগল, নিঠুর ফাঁকি, সাধের ময়না-২, আসো গো কান্দনসহ বেশকিছু গান। এ বছর শুভ নিজেকে গানেই ব্যস্ত রাখবেন। অডিও ক্যাসেট, ভিসিয়ার ভিডিও পেরিয়ে গান এখন শুধুই অনলাইনে। প্রশ্ন উঠেছে গান তুমি কার? আবার গানের মেধাস্বত্ব নিয়ে অনেক কথা হয়। কি বলবেন? একটি সৃষ্টির পেছনে গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত শিল্পীর অবদান। এই তিনজনের প্রচেষ্টার ফলে গানটি শ্রোতাদের কাছে পৌঁছায়। তবে সবচেয়ে বেশি অবদান গীতিকার ও সুরকারের। তাদের গানের মেধাস্বত্ব থাকা উচিত। গীতকার ও সুরকারই একটি গান সৃষ্টি করে। ঐশী : সময়ের আলোচিত তরুণ কণ্ঠশিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা ঐশী। ইতোমধ্যে সে নিজস্ব গায়কী দিয়ে শ্রোতাদের মন জয় করে নিয়েছেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এবছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন। ঐশী জানান, চলতি বছর গানেই বেশ ব্যস্ত সময় পার করবেন। গত বছর থেকেই নতুন বছরের পরিকল্পনা করেছেন তিনি। গান প্রকাশের মাধ্যম পরিবর্তন হয়েছে। তার কাছে জানতে চাই অনলাইন নির্ভর সঙ্গীত অঙ্গন কিভাবে দেখছেন? সময়ের পরিবর্তন আমাদের সবাইকে মেনে নিতে হবে। এটি সময়ের দাবি। এর যেমন সুফল আছে এবং কুফল ও আছে। এখন আমি কোনটা বেঁছে নেব সেটি আমার একমাত্র সিদ্ধান্ত। আশা করছি চলতি বছর সঙ্গীত অঙ্গন ফের ঘুরে দাঁড়াবে। মিলন : তরুণ শ্রোতাপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী মুহাম্মদ মিলন। নতুন বছর উপলক্ষে পহেলা জানুয়ারি সাধের ময়না নামের মাহিন আওলাদ পরিচালিত তার নতুন একটি গান প্রকাশ হয়েছে। নতুন বছরের পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, নতুন কিছু গান দিয়ে নতুন বছর শুরু করেছি। যেগুলো গত বছর রেকর্ড করা ছিল করোনার কারণে মিউজিক ভিডিও নির্মাণ সম্ভব হয়নি সেই গানগুলোর চিত্রায়ণ পরিকল্পনা হচ্ছে। পর্যায় ক্রমে গানগুলো মুক্তি পাবে। এ বছর ভিন্ন ধাঁচের কিছু কাজ করব। সবচেয়ে বড় চমক দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘সখী ভালোবাসা টু’ গানের নতুন ভার্সন আসছে। আশা করি সবার স্বপ্নগুলো পূরণ হবে। এ বছরটি হবে গানের বছর।
×