ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মাতবে পুরান ঢাকা

পৌষসংক্রান্তি ও সাকরাইন উৎসব আজ

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ১৪ জানুয়ারি ২০২১

পৌষসংক্রান্তি ও সাকরাইন উৎসব আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পৌষ বিদায় নিচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার সমাপনী দিনে উদ্যাপিত হবে বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী উৎসব পৌষ সংক্রান্তি। একই দিনে পুরান ঢাকা মাতবে সাকরাইন উৎসবে। পৌষ সংক্রান্তিকে পৌষ পার্বণ বা মকর সংক্রান্তিও বলা হয়ে থাকে। এটি মূলত জ্যোতিষশাস্ত্রের একটি ক্ষণ। মকর সংক্রান্তি বলতে, নিজ কক্ষপথ থেকে সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশের ক্ষণটিকে ইঙ্গিত করা হয়। পৌষ সংক্রান্তিতে পিঠা পুলির আয়োজন করা হয়। গ্রীষ্মকালে পিঠাপুলি অত রুচিকর হয় না। এ কারণে শীতকালে বেশি আয়োজন করা হয়। বছরের বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠিত পিঠা উৎসবের মধ্যে পৌষ সংক্রান্তি বিশেষ স্থান অধিকার করে নিয়েছে। লোকজ সংস্কৃতির গবেষকদের মতে, মকর সংক্রান্তি বা উত্তরায়ণ সংক্রান্তির দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পিতৃপুরুষ ও বাস্তুদেবতার জন্য তিল কিংবা খেজুড় গুড় দিয়ে তিলুয়া তৈরি করত। নতুন চালে তৈরি করা পিঠার অর্ঘ্য দান করত। এ কারণে পৌষ সংক্রান্তির আরেক নাম তিলুয়া সংক্রান্তি বা পিঠা সংক্রান্তি। এ দিন বিভিন্ন অঞ্চলে শিশু-কিশোররা বাস্তুর গান, কুলাইর ছড়া, হোলবোলের গান, বাঘাইর বয়াত গেয়ে চাল ও অর্থ সংগ্রহ করে পৌষপালা, বনভোজন ইত্যাদির আয়োজন করে। একইদিন দধি সংক্রান্তির ব্রতের শুরু হয়। এই ব্রতে প্রতি সংক্রান্তিতে লক্ষ্মীনারায়ণকে দধি দ্বারা স্নান করিয়ে ব্রাহ্মণকে দধি ও ভোজদান করা হয়। তাই বলে পৌষ সংক্রান্তিকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার বিশেষ সুযোগ নেই। লেখক যতীন সরকারের মতে, কারও কারও মনে হতে পারে, পৌষ সংক্রান্তি ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বৈ কিছু নয়। বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। আবহমান কাল থেকেই বাংলায় ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ নীতি। ফলে পৌষ সংক্রান্তিও বাঙালীর প্রতি ঘরে উদ্যাপিত হয়ে আসছে। অবশ্য এখন অনেক কিছুই আগের মতো নেই। হয় না। প্রত্যেকেই নিজেদের মতো করে উৎসবে কিছু যোগ করেছেন। কিছু বিয়োগ। এভাবে স্বতন্ত্র মাত্রা পায় পৌষ সংক্রান্তি। অনেকে আবার পৌষের শেষ দিনটি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান না। বরং পৌষজুড়েই নানা উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন চলে। এ সময় গ্রামের ঘরে ঘরে তৈরি হয় ভাপা, পাটিসাপটা, সন্দেশ, দুধ চিতই, মুগ পুলি, ছিট পিঠা। মায়েরা মেয়েরা রাত জেগে পিঠার গায়ে অলঙ্করণ করেন। ফুল লতাপাতা, পাখি, মাছের চোখ আঁকেন। এভাবে গোটা রাত পার হয়ে যায়। একদিকে চুলো থেকে পিঠা ওঠে। অন্যদিকে চলে গরম গরম খাওয়া। মায়ের হাতে তৈরি এসব পিঠার স্বাদ বরাবরই বেশি। আত্মীয় স্বজনদেরও নিমন্ত্রণ করে বাড়ি এনে পিঠা খাওয়ানো হয়। বাংলা এই মাসের আরেকটি ঐতিহ্যবাহী আয়োজন পৌষমেলা। রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে পৌষমেলার আয়োজন করতেন। এখনও পৌষমেলায় লোকজ সংস্কৃতির নানা পণ্য দিয়ে স্টল সাজান দোকানিরা। রাখা হয় পিঠা পায়েস খেজুরের রস। রাজধানীতে সংস্কৃতিকর্মীরা একটি বড়সড় পৌষমেলার আয়োজন করে থাকে। মেলায় যথারীতি থাকে পিঠেপুলি। কেশ কিছু স্টল বসে। সকলের চোখের সামনেই চলে পিঠা তৈরির কাজ। চাইলেই কিনে খাওয়া যায়। একই সময় লোক আয়োজন থাকে অনুষ্ঠান মঞ্চে। মঞ্চ থেকে জারি, সারি, ভাটিয়ালি গানে তুলে ধরা লোকায়ত সংস্কৃতি। পুঁথিপাঠ, নৃত্য, নাটকের ভাষায় শহুরে প্রজন্মকে আহ্বান জানানো হয় মাটির কাছাকাছি আসার। অভিন্ন চিন্তা থেকে বুধবার লালমাটিয়া হাউজিং সোসাইটি স্কুল এ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে পৌষ সংক্রান্তি উৎসবের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। তার সঙ্গীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সুরের ধারা অনেক বছর ধরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। সে ধারাবাহিকতায় এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিকেলে এর উদ্বোধন করেন পরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। পিঠাপুলি গান নাচসজ নানা আয়োজনে মুখরিত ছিল দিনটি। আজ একই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে পুরান ঢাকায় ব্যাপকভাবে উদ্যাপন করা হবে সাকরাইন উৎসব। একে নাগরিক উৎসব মনে হলেও, এর সঙ্গে লোকঐতিহ্য ও উদ্যাপনের যোগ আছে। মূল আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো। ঢাকা বিশারদ হাশেম সূফী জানান, ঢাকার এই উৎসবের ইতিহাস অনেক পুরনো। বহুকাল আগে পাঠানদের হাত ধরে ঘুড়ি এসেছিল ঢাকায়। পরে ঘুড়ি ওড়ায় মোগলরাও। সে সময় নানা কারণেই ঘুড়ি ওড়ানো হতো। এখন উৎসব হিসেবেই নেয়া হয়েছে এটিকে। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, আজ সকাল থেকেই বিভিন্ন বাড়ির ছাদে, খোলা মাঠে অবস্থান নিয়ে ঘুড়ি ওড়ানো শুরু হবে। বর্ণিল এ উৎসব চলবে বিকেল পর্যন্ত। রাতে থাকবে আতশবাজির আয়োজন। পিঠাপুলি সুস্বাদু খাবার সঙ্গীত নৃত্যায়োজন কিছুই বাদ থাকবে না। সাকরাইন উৎসব উদ্যাপনের সঙ্গে এবার যুক্ত হচ্ছে সিটি কর্পোরেশনও। ঢাকা দক্ষিণ সিটির পক্ষ থেকে ‘এসো ওড়াই ঘুড়ি, ঐতিহ্য লালন করি’ সেøাগানে বিশাল উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫ ওয়ার্ডে এ উৎসব আয়োজন করা হবে। দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়ে উৎসব চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। মেয়র ফজলে নূর তাপস জানিয়েছেন, কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে ১০ হাজার ঘুড়ি আগ্রহীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। পূর্ব নির্ধারিত মাঠ কিংবা বাড়ির ছাদে অবস্থান নিয়ে ঘুড়ি ওড়াতে পারবেন তারা।
×