ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শৈত্যপ্রবাহ শুরু, তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রীতে নামবে

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ১৪ জানুয়ারি ২০২১

শৈত্যপ্রবাহ শুরু, তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রীতে নামবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফের বাড়ছে শীত। শুরু হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় জেঁকে বসেছে শীত। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই অবস্থা আরও কয়েকদিন চলতে পারে। এই সময়ের মধ্যে তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে আসতে পারে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের উপর শৈত্যপ্রবাহ বিস্তার লাভ করতে পারে। বুধবার দেশের ছয়টি অঞ্চলের ওপর দিয়ে তৃতীয় দফায় শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়। এদিন দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। এবারের শীত মৌসুমে এই নিয়ে তৃতীয় দফায় শৈত্যপ্রবাহ চলছে। এর আগে শীতের শুরুতে গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে প্রথমবার শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়। ওই সময় দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে আসে ৬.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। দু’একদিন স্থায়ী হওয়ার পর শৈত্যপ্রবাহ কেটে যায়। এরপর ডিসেম্বরের ২৮ তারিখ থেকে আবারও শুরু হয় শৈত্যপ্রবাহ। কিন্তু সে দফায় খুব জোরালো ছিল না। মুষ্টিমেয় কিছু অঞ্চল দিয়ে দ্বিতীয় দফায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। আবহাওয়া অফিস জানায়, দ্বিতীয় দফায় শৈত্যপ্রবাহ শেষে দেশে পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাব বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে ভর পৌষে এসে সারাদেশ থেকে শীত উধাও হয়ে যায়। বাড়তে থাকে তাপমাত্রা। একই সঙ্গে বেড়ে যায় গরমের অনুভূতি। তারা জানায়, দেশের উপর টানা ১২ দিন ধরে পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাব ছিল বেশি। ফলে উত্তুরে হাওয়া দুর্বল হয়ে যায়। শীতে শুরু হয় বসন্তের আমেজ। সেই লঘুচাপের প্রভাব গত মঙ্গলবার থেকে কাটতে শুরু করে। বুধবার থেকে উত্তরের শীতল হাওয়া প্রভাব বিস্তার শুরু করে। ফলে রাজধানীসহ সারাদেশে শীতের দাপট শুরু হয়েছে। এই অবস্থা আরও কয়েকদিন চলবে। আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, আগামী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান অবস্থা চলবে। এরপর থেকে তাপমাত্রা আবার বাড়তে থাকবে। ২০ থেকে ২১ তারিখের মধ্যে আকাশে মেঘ বাড়তে পারে। তখন তা ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টির দেখাও মিলতে পারে। ফলে ২২ জানুয়ারি পর থেকে আবারও তাপমাত্রা কমবে। বলা যায় জানুয়ারির বাকি সময়টায় শীতের অনুভূতি থাকতে পারে। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার থেকে রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, সৈয়দপুর ও কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। এটা অব্যাহত থাকতে পারে। নতুন নতুন এলাকায় আরও বিস্তার লাভ করতে পারে। এদিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নওগাঁর বদলগাছীতে ৭.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রাও ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। এদিন ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ ২৫.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। দুই তাপমাত্রার গড় ব্যবধান কম হওয়ায় রাজধানীতে শীতের মাত্রা বেড়েছে অনেক। গত কয়েকদিনে ঢাকার তাপমাত্রা বেড়ে ১৮.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলেই তাকে শীত হিসেবে ধরা হয়। আবহাওয়া অফিসের হিসাব অনুযায়ী দেশের বড় এলাকাজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে ৮ থেকে ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে চলে এলে মৃদু; ৬ থেকে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে হলে মাঝারি এবং ৪ থেকে ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। এই দফায় তাপমাত্রা নেমে ৬ ডিগ্রীতে আসতে পারে বলে আভাস দেয়া হয়েছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি উত্তরাঞ্চলে দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। তার পরের তিনদিনে রাতের তাপমাত্রা আরও হ্রাস পেতে পারে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। নীলফামারী ॥ পৌষ সংক্রান্তির আগেই নীলফামারীসহ উত্তরাঞ্চলে শীতের দাপট বাড়তে শুরু করেছে। ক্রমশই নামছে তাপমাত্রা। ঘন কুয়াশার পাশাপাশি বইছে কনকনে উত্তুরে ঠাণ্ডা হাওয়াও। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রার কাঁটা প্রায় কাছাকাছি চলে আসায় কাঁপছে সর্ব উত্তরের জেলাগুলো। রাতভর বৃষ্টির মতো ঝরেছে কুয়াশা। হাড় কাঁপানো শীতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। এ ছাড়া ঘন কুয়াশার কারণে আলু ক্ষেতে ছত্রাক রোগ দেখা দিয়েছে। জানুয়ারির শুরুতেই অল্প অল্প করে তাপমাত্রা বাড়ছিল। পৌষ সংক্রান্তির আগেই মাঘ মাসের আগমনে নতুন করে দেশের উত্তরবঙ্গে শীতের হানা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে হিমালয়ের বরফ ছোঁয়া উত্তুরে হাওয়া প্রবেশ করায় তাপমাত্রা নামতে শুরু করেছে। অপরদিকে গত কয়েকদিনের ঘন কুয়াশার কারণে জেলার বিভিন্ন স্থানে আলুতে ছত্রাক রোগ দেখা দিয়েছে। এতে আলুচাষীরা চিন্তায় পড়েছেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে আলু ক্ষেতের নিবিড় পরিচর্যায় কাজ করছেন কৃষক। জেলার সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, আবাদের শুরুতে আলু নিয়ে ভালই ছিলাম কিন্তু হঠাৎ করে গত কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশার কারণে আলুতে রোগবালাই বেশি হচ্ছে। ফলে ওষুধ স্প্রে করতে হচ্ছে। কায়িক শ্রমিক সুরেন্দ্র নাথ রায় বলেন, সকালের কুয়াশা মাড়িয়ে আলু ক্ষেতে কাজ করে থাকি আমরা। আলুতে লাভ হওয়ায় এবারে কৃষকদের আলু আবাদে বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। নীলফামারী কৃষি বিভাগের সূত্রমতে, নীলফামারী জেলার ছয় উপজেলায় আগাম চাষসহ ২২ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আবাদ করা হয়েছে ২২ হাজার হেক্টর জমিতে। এতে ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সব থেকে বেশি আলু আবাদ হয়েছে জেলা সদর ও কিশোরীগঞ্জ উপজেলায়। জেলায় গ্র্যানুলা, সেভেন, সাগিতা, ক্যারেজ, সাইটা, লাল পাকড়ি, রোমানা, ডায়মন্ডসহ দেশী জাতের আলু আবাদ করেছেন কৃষকরা। বর্তমানে ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠাণ্ডার কারণে আলু ক্ষেত ছত্রাক রোগ থেকে রক্ষা করতে কৃষিবিভাগ ও মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। কুড়িগ্রাম ॥ ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠাণ্ডায় অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে জীবনযাত্রা। বুধবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এ অবস্থায় ঠাণ্ডা ও কুয়াশা উপেক্ষা করে কাজে বের হতে পারছেন না শ্রমজীবী মানুষেরা। সময়মতো কাজে বের হতে না পারায় বেকার বসে থাকছে হচ্ছে তাদের। গরম কাপড়ের অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ছিন্নমূল ও হতদরিদ্র মানুষ। ঠাণ্ডার কারণে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আরএমও ডাঃ পুলক জানান, শীতের কারণে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় ২৯ জন আর নিউমোনিয়ায় ৮ জনসহ মোট ২৫৩ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের অধিকাংশই শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। দিনের বেশিরভাগ সময় সূর্যের দেখা না মেলায় বিকেল হতেই বাড়ছে ঠাণ্ডার প্রকোপ। রাত-বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে শীতের তীব্রতাও। রাতজুড়ে বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকছে প্রকৃতি। ফলে ঘন কুয়াশায় দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন জেলার ৪শ’ থেকে ৫ শতাধিক চরাঞ্চলে বসবাসকারী হতদরিদ্র পরিবারগুলো। প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের না থাকায় অতি কষ্টে পরিবার পরিজন নিয়ে রাত কাটাচ্ছেন তারা। সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের চর সারডোবের বাসিন্দা মজলুম মিয়া জানান, কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আর কুয়াশার জন্য কাজে যেতে পারছি, না। গরম কাপড়ও নেই। ছেলে-মেয়ে নিয়ে খুবই কষ্টে আছি।
×