ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেসরকারী পর্যায়েও পাওয়া যাবে করোনা ভ্যাকসিন

প্রকাশিত: ২৩:০৫, ১৪ জানুয়ারি ২০২১

বেসরকারী পর্যায়েও পাওয়া যাবে করোনা ভ্যাকসিন

রশিদ মামুন ॥ বেসরকারী পর্যায়েও পাওয়া যাবে করোনা ভ্যাকসিন। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল আগামী মাস থেকেই বাজারে ভ্যাকসিন বিক্রি করতে চায়। এজন্য ভ্যাকসিনের দামও নির্ধারণ করেছে কোম্পানিটি। অন্যদিকে মার্কিন কোম্পানি ফাইজার বাংলাদেশে ভ্যাকসিন বিক্রিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সরকার অনুমোদন দিলেই বেসরকারী পর্যায়ে ভ্যাকসিন পাঠাতে ফাইজার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ফাইজার তাদের পরিবেশক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভ্যাকসিন সরবরাহ সংক্রান্ত একটি গাইডলাইনও পাঠিয়েছে। এতে ভ্যাকসিন সংরক্ষণ থেকে শুরু করে প্রয়োগ পর্যন্ত সকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মার্কিন কোম্পানি ফাইজার এবং জার্মানির বায়োএনটেক যৌথভাবে ভ্যাকসিনটি আবিষ্কার করেছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কাছ থেকে প্রথম ছাড়পত্র পেয়েছে ফাইজারের ভ্যাকসিন। যদিও ভ্যাকসিনটির সংরক্ষণ ব্যবস্থায় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ একটি বড় বিষয়। ভ্যাকসিনটি সংরক্ষণ করতে হলে মাইনাস ৭০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে ফাইজারের পরিবেশক জনতা ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম বাচ্চু জনকণ্ঠকে বলেন, সরকার অনুমোদন দিলেই আমরা ভ্যাকসিন আনতে পারব। এ বিষয়ে ফাইজার একটি গাইড লাইন আমাদের আগেই দিয়েছে। এখন সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধিক জোট কোভ্যাক্স সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে জানতে চেয়েছে বাংলাদেশে ফাইজারের ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী কি না। আগামী ১৮ জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশকে জানাতে হবে ফাইজারের কাছ থেকে তারা ভ্যাকসিন নেবে কি না। বাংলাদেশের সম্মতি পেলে কোভ্যাক্স ফাইজারের কাছ থেকে ভ্যাকসিন এনে দেবে। প্রাথমিকভাবে চার লাখ মানুষের জন্য কোভ্যাক্স ফাইজারের ভ্যাকসিন এনে দেবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন ফাইজারের ভ্যাকসিন সংরক্ষণের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। তবে যেসব দেশে ভাইজার তাদের ভ্যাকসিন বিক্রি করছে তাদের জন্য নিজ উদ্যোগে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রও সরবরাহ করছে ফাইজার। দেশে বেসরকারী পর্যায়ে প্রথম ভ্যাকসিন বিক্রি করার উদ্যোগ নেয় বেক্সিমকো ফার্মা। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে তারা ভ্যাকসিন এনে দেশে বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় সরবরাহ করতে চায়। আগামী মাসেই বেক্সিমকো সেরামের কাছ থেকে ভ্যাকসিন এনে দেশে বিক্রি করতে চায়। রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বেক্সিকোর চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) রাব্বুর রেজা জানিয়েছেন তারা ভারতের কাছ থেকে ৩০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আনবেন। আগামী ফেব্রুয়ারি থেকেই এই ভ্যাকসিন বাজারে পাওয়া যাবে। এজন্য প্রতিডোজ ভ্যাকসিনের জন্য তাদের সেরাম ইনস্টিটিউটকে দিতে হবে আট ডলার করে। রাব্বুর রেজা ওই সাক্ষাতকারে বলেছেন দেশে প্রতি ডোজের জন্য দাম রাখা হবে ১৩ দশমিক ২৭ ডলার বা এক হাজার ১২৫ টাকা। শুরুতে দেশের বেসরকারী পর্যায়ে বিক্রির জন্য বেক্সিমকো সেরামের সঙ্গে ১০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিনের জন্য চুক্তি করেছে। এখন ২০ লাখ ডোজ বাড়তি ভ্যাকসিন আনার পরিকল্পনা করছে তারা। ফাইজারের চেয়ে অক্সফোর্ড এ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন বেসরকারী পর্যায়ে সরবরাহে কিছুটা এগিয়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন অক্সফোর্ড এ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হয়েছে ভারতে। এক নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের হাওয়াতে দেশে এর ট্রায়ালের দরকার হবে না। অন্যদিকে ফাইজারের ভ্যাকসিনটির কোন ট্রায়াল প্রতিবেশী দেশগুলোতে হয়নি। এখন পর্যন্ত যেসব দেশে ফাইজারের ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে তার সবই শীতপ্রধান দেশ। সঙ্গত কারণে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিষয়ে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও ফাইজারের ভ্যাকসিনটি বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদন পেয়েছে এর মধ্যেই। এর বাইরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের অনুমোদনের সঙ্গে তাদের রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুমোদন। সঙ্গত কারণে দেশে ভ্যাকসিনটির অনুমোদন পাওয়াটা কঠিন কোন বিষয় হবে না। ফাইজারের প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের দাম ২০ ডলার। দুই ডোজ ভ্যাকসিনের দাম পড়বে ৪০ ডলার। এর বাইরেও ভ্যাকসিনের পরিবহন এবং সংরক্ষণ খরচ যোগ হবে এর সঙ্গে। দেশের বাজারে ফাইজারের ভ্যাকসিন আনা হলে এই দাম কম পড়বে তা এখনও নির্ধারণ হয়নি। প্রসঙ্গত দেশে সরকারী পর্যায়েও আগামী মাস থেকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরুর সিদ্ধান্ত জানিয়েছে সরকার। আগামী ২৫ জানুয়ারির মধ্যে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে দেশে ভ্যাকসিন আসবে বলে জানানো হয়েছে।
×