ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত বেশি দাম রাখলে বিকল্প বাজার থেকে ভ্যাকসিন আমদানি

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ১৪ জানুয়ারি ২০২১

ভারত বেশি দাম রাখলে বিকল্প বাজার থেকে ভ্যাকসিন আমদানি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারত বেশি দাম রাখলে বিকল্প বাজার থেকে করোনা ভ্যাকসিন আমদানি করা হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, দেশের ১৭ কোটি মানুষকে ধাপে ধাপে করোনার ভ্যাকসিন (টিকা) দেয়া হবে। এই টিকা আমদানি করা যত সহজ তার চেয়ে মানুষকে দেয়াটা অনেক জটিল কাজ। তিনটি মানদণ্ড পূরণ হওয়ায় আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের সিডিপি’র ত্রিবার্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ অর্জন করতে যাচ্ছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারে চালের পাশাপাশি এবার ৫০ হাজার মে.টন গম আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। বুধবার অনলাইনে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, করোনা ভ্যাকসিন দেশের সবাইকে ধাপে ধাপে দেয়া হবে। আশা করা হচ্ছে, এই ভ্যাকসিন ভারত সঠিক ও ন্যায্যদামে দেবে। সঠিক দামে ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে কিনা তা আন্তর্জাতিক বাজারে যাচাই-বাছাই করা হবে। ভারতের পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ করোনা ভ্যাকসিন তৈরি ও বিক্রি করবে। ভারত যদি ভ্যাকসিন তৈরি করে তাহলে তাদের উৎপাদন খরচ কম হবে। তবে তাদের যে খরচ হবে সেই দামে আমরা পাব, এটা প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না। ভারতের তুলনায় ৪৭ শতাংশ বেশি দামে ভ্যাকসিন কিনছে সরকার। এর ফলে বাজেটে কি প্রভাব পড়বে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, আমি এটা জানি না, দাম বেশি হয়েছে কিনা। তবে আমরা দেখব যে আন্তর্জাতিক বাজারে ভ্যাকসিনের দাম কত এবং আমরা কত দামে পাচ্ছি। কারণ ভ্যাকসিন একটি দেশ তৈরি করবে না, অনেক দেশ তৈরি করবে। এক দেশ থেকে যদি বেশি দাম বলে, তাহলে আমরা অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা অবশ্যই করব, সেই সুযোগ আমাদের আছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যাশা করেন, দেশের সকল মানুষ ভ্যাকসিন পাবেন। এজন্য ভ্যাকসিনটা গুরুত্বপূর্ণ। এলডিসি উত্তরণ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি, সিপিডির ত্রিবার্ষিক বৈঠকে এবার এলডিসি থেকে বেরিয়ে আসার চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়া যাবে। এই অর্জনে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। জাতিসংঘের সিডিপির তিনটি শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল অর্থনৈতিক মুক্তি। বর্তমান সরকার সেই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে। এলডিসি থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীলের মর্যাদা একটি বড় অর্জন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন এবং স্বাধীনতার ৫০ বছরে সুবর্ণজয়ন্তীর এই সময়ে এই অর্জন ঐতিহাসিক। অর্থমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার নির্দেশে এদেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট হয়েছে। এ কারণে এলডিসি উত্তরণের এই অর্জন জাতির পিতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি উৎসর্গ করা হবে। এই কাজটি করে আমরা দায়মুক্ত হব। ৫০ হাজার মে. টন গম আমদানিসহ পাঁচ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন ॥ খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারে এবার ধানের পর ৫০ হাজার মে. টন গম আমদানিসহ পাঁচ ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য ১টি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ৫টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ক্রয় কমিটির প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ১টি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ১টি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ১টি, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ১টি এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রস্তাবনা ছিল। কমিটি সব ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ৫টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ৬০৭ কোটি ৭৪ লাখ ৫ হাজার ৫৬৮ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ৫৯৪ কোটি ৭১ লাখ ৮৩৪ টাকা এবং বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ ১৩ কোটি ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৩৪ টাকা। সভা শেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবগুলোর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদফতর কর্তৃক আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করার একটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। প্রতি মেট্রিক টন গমের দাম পড়বে ৩২৬ দশমিক ৯২ ডলার। সে হিসেবে প্রতিকেজি গমের দাম পড়বে ২৭.৭২২ টাকা (প্রতি ডলার ৮৪.৮০ টাকা)। মোট ব্যয় হবে ১৩৮ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার ৮০০ টাকা। সিঙ্গাপুর ভিত্তিক মেসার্স এ্যাগ্রোকর্প ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড এই গম সরবরাহ করবে। এছাড়া প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ে ২০তলা বিশিষ্ট আরও একটি নতুন অফিস ভবন নির্মাণে ১৯৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকায় ঠিকাদার নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। অনুমোদিত প্রস্তাবনাগুলো বিস্তারিত তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. সালেহ বলেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন গণপূর্ত অধিদফতর কর্তৃক ‘বাংলাদেশ সচিবালয়ে ২০তলা বিশিষ্ট নতুন অফিস ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পের ডব্লিউ ড-২(এ) লটের পূর্ত কাজের ঠিকাদার নিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ১৯৩ কোটি ৭৩ লাখ ৮০ হাজার ৩৪ টাকা। প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে (১) দি সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড, (২) ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এবং (৩) বঙ্গ বিল্ডার্স লিমিটেড। বৈঠকে অনুমোদিত অন্যান্য প্রস্তাব হলো : জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আওতায় ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড থেকে জি টু জি ভিত্তিতে জানুয়ারি থেকে জুন ২০২১ সময়ের জন্য ৩০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল বা ২ লাখ ২৩ হাজার ৮০০ ব্যারেল জ্বালানি আমদানির একটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য ব্যয় হবে ১০৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা। বৈঠকে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীন পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বগুড়া কর্তৃক ‘পল্লী জনপদ নির্মাণ’ প্রকল্পের ৩টি সাইটের (রংপুর, বগুড়া এবং গোপালগঞ্জের) পূর্ত কাজের ভূতাপেক্ষ অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লি. গাজীপুর। এ জন্য ব্যয় হবে ১৫৪ কোটি ৬০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এছাড়া পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধীন ‘ন্যাশনাল হাউসহোল্ড ডাটাবেজ (এনএইচডি)’ প্রকল্পে (৩য় সংশোধিত) পরামর্শক সেবা ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ভেরিয়েশন মূল্য ছিল ১১২ কোটি ৪৪ লাখ ২৫ হাজার ৬২২ টাকা। ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১৩ কোটি ৩ লাখ ৪ হাজার ৭৩৪ টাকা যুক্ত করা হয়েছে। সর্বমোট ১২৫ কোটি ৪৭ লাখ ৩০ হাজার ৩৫৬ টাকার সংশোধিত ক্রয় মূল্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যৌথভাবে কাজটি পেয়েছে জিরন ইন্ডিয়া লিমিটেড, আইওই (বাংলাদেশ) লিমিটেড এবং জার্মানির টিওপি ইমেজ সিস্টেম। এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতায় গ্রিসের এথেন্সে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান সেন্টিনিয়াল স্কুল’ স্থাপনের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পে অর্থ ব্যয় পিপিএ ২০০৬ এর ৬৮(১) এবং পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২) হতে অব্যাহতি এবং গ্রিসের স্থানীয় আইন অনুসরণের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
×