ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে দুর্ঘটনা

খুলনায় মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ যান

প্রকাশিত: ২১:২২, ১৪ জানুয়ারি ২০২১

খুলনায় মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ যান

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনায় সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করে মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রেজিস্ট্রেশনহীন ট্রাক, ফিটনেসহীন বাস, থ্রি-হুইলার, ইঞ্জিচালিত ভ্যান, ইঞ্জিনরিক্সাসহ অবৈধ যানবাহন। গ্রামীণ জনপদ এমনকি শহরের অলিগলিতে চলছে ট্রলি নামের ভয়ঙ্কর যন্ত্রদানব। ‘যমদূতের’ মতো চলা নিয়ন্ত্রণহীন এসব যানবাহনের কারণে সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে। প্রতিনিয়ত প্রাণ ঝরলেও এসব যানবাহন চলাচল বন্ধ হচ্ছে না। দুর্ঘটনার পর কিছুদিন অভিযান চালানো হলেও তারপর এক সময় সে অভিযান স্তিমিত হয়ে পড়ে। সড়ক পরিবহন আইনানুযায়ী কোন মহাসড়কে রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস সনদ ব্যতীত বা জরাজীর্ণ, বিবর্ণ পরিবেশ দূষণকারী বাস-ট্রাক রং পরিবর্তন করে চালানো যাবে না। মহাসড়কে চলতে পারবে না তিন চাকার যানবাহন। কিন্তু খুলনা অঞ্চলের মহাসড়কে যমদূতের মতো চলছে ফিটনেসহীন অনেক বাস, ট্রাক। সড়ক ও মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ইজিবাইক, থ্রি-হুইলার সিএনজি, মাহেন্দ্র, অটোটেম্পো, লেগুনা ও ব্যাটারিচালিত রিক্সা। খুলনা মহানগরী এলাকায় ইজিবাইকের ছড়াছড়ি। খুলনা সিটি কর্পোরেশন ইঞ্জিনের রিক্সা নিষিদ্ধ করলেও বন্ধ হয়নি পথচারীদের জন্য আতংকিত হাল্কা এ যানবাহন। প্রতিদিন নগরীতে বহিরাগত ও শহরের মালিকদের ইজিবাইক চলাচল করছে প্রায় ৩৫ হাজার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রেজিস্ট্রেশন নিতে আবেদন করে ৮ হাজার ৪৪০ জন। এর মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার ইজিবাইককে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। আর পণ্যবাহী ইজিবাইকের লাাইসেন্সের জন্য প্রায় আড়াই হাজার ফরম বিতরণ করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন আইনানুযায়ী যে কোন মোটর যানের চালকের নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধিকাংশ চালকের লাইসেন্স নেই। তাছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিরাও ইঞ্জিনচালিত রিক্সা, ভ্যান ও ইজিবাইক চালিয়ে বেড়াচ্ছে। এছাড়া শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নসিমন, করিমন, গ্রামীণ জনপদ এমনকি শহরেও চলাচল করছে। শহরে বালি, মাটি ও ইটবাহী ট্রাক এবং ট্রলি দিনের বেলাতে চলছে। নসিমন, করিমন, ট্রলি প্রভৃতি তৈরির কারখানা শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় রয়েছে। এখন ইট তৈরির মৌসুম হওয়ায় গ্রামীণ জনপদে এর চলাচল ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় ইটভাঁটি থাকায় সড়ক ও গ্রামের রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই ভয়ঙ্কর যন্ত্রদানব। এদিকে রেজিস্ট্রেশন ছাড়া ইজিবাইক মহানগরীতে চলাচলে সিটি কর্পোরেশনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অবাধে শহরের বাইরে থেকে এসে নগরীতে চলাচল করছে অধিকাংশ বহিরাগত ইজিবাইক। সিটি কর্পোরেশন থেকে পাওয়া ইজিবাইকের স্টিকার অবিকল ‘নকল’ করে বানিয়ে অনেকে ইজিবাইকের সামনে লাগিয়ে নিচ্ছে। ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ করে নকল স্টিকার পাওয়া যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এই নকল স্টিকার লাগিয়ে ট্রাফিক পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এগুলো চলছে। তাছাড়া বহিরাগত ইজিবাইকের শহরে প্রবেশের ক্ষেত্রে এখন শিথিলতা দেখা দেয়ায় কেসিসি থেকে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত ইজিবাইকের চালক ও মালিকরা অসন্তুষ্ট। এছাড়া বিপুলসংখ্যক ইজিবাইকের কারণে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোড় ও এলাকায় দীর্ঘ জটলা ও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন অথরিটির (বিআরটিএ) সহকারী পরিচালক মোঃ আবুল বাসার বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রশাসন সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ ইউসুপ আলী বলেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেক উপজেলার ইউএনওদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শহরের বিষয়টি সিটি কর্পোরেশন দেখবে বলে তিনি জানান। জেলা ও নগর ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে মহাসড়কে সব ধরনের অবৈধ যানবাহন বন্ধে পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এছাড়াও জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে সবার সহযোগিতা চেয়ে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী হাতে নেয়ার কার্যক্রম, সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
×